পঞ্চগড়-১ ও পঞ্চগড়-২। এর মধ্যে তেঁতুলিয়া, আটোয়ারী ও পঞ্চগড় সদর উপজেলা এই তির উপজেলা নিয়ে পঞ্চগড়-১ আসন।
বোদা ও দেবীগঞ্জ দুই উপজেলা নিয়ে পঞ্চগড়-২ আসন। পঞ্চগড়ের দুইটি আসনেই এখন শুরু হয়েছে নির্বাচন মুখী রাজনীতি। সম্ভাব্য প্রার্থীরা খুব জোরেসোরে রাজনীতির মাঠ গোচ্ছাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। চলছে সভা,সমাবেশ,কর্মী বৈঠক,উঠান বৈঠক,গণসংযোগ,সামাজিক অনুষ্ঠান গুলোতে অংশ গ্রহন,ধর্মীয় সভা সমাবেশ উপস্থিত,অসুখ-বিসুখে মানুষের পাশে দাড়ানো,দাওয়াত খেলা-ধুলায় অংশ গ্রহন,বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিয়ে সাধারণ মানুষকে পাশে টানা সহ ভোটের কর্মী তৈরীতে মহা ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রার্থীরা।
এয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলাদেশ -১, পঞ্চগড়-১ (পঞ্চগড় সদর,আটোয়ারী ও তেঁতুলিয়া) আসনে দল গোছাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি,জাগপা,বাংলাদেশ জাসদ,জাতীয় পার্টি সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সম্ভাব্য এমপি প্রার্থীরা।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এসকল রাজনৈতিক দলের সম্ভাব্য এমপি প্রার্থীরা নেতা-কর্মীদের সাথে নিয়ে পাড়া-মহল্লাহ ওয়ার্ড থেকে ইউনিয়ন এবং উপজেলা পর্যায়ে কমিটি এবং গণসংযোগ অব্যাহত রেখেছেন।
তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের মাঝেও ফিরে এসেছে প্রাণচাঞ্চল্য।এর ফলে সংগঠন হচ্ছে মজবুত ও শক্তিশালী। সাংগঠনিক কার্যক্রম আরও গতিশীল করতে এবং সাধারণ মানুষকে দলে ভীড়াতে নানান উদ্যোগ নিতে দেখা গেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের।
পঞ্চগড়-১ আসনটি বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিতি ছিল। পঞ্চগড়-১ আসনে ১৯৯১ সালে বিএনপির তৎকালীন বর্ষীয়ান নেতা ও সাবেক স্পিকার প্রয়াত মির্জা গোলাম হাফিজ এবং ৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত আরেক বর্ষীয়ান নেতা ও সাবেক স্পিকার, সাবেক অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের মো.মজাহারুল হক প্রধান সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে বিএনপির হাতছাড়া হয় এই আসনটি। মাঝে ২০১৪ সালে জাসদের নাজমুল হক প্রধান সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেও পরবর্তী দুটি সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আর হাতছাড়া হয়নি এই আসনটি।
২০১৮ সালে আবারও আওয়ামী লীগের মো. মজাহারুল হক প্রধান এবং সর্বশেষ ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নাঈমুজ্জামান ভূঁইয়া মুক্তা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এই আসনে আগামী নির্বাচনে জয়ী হতে নারী ভোটারের পাশাপাশি তরুণদের ভোট বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে বলে ধারণা স্থানীয়দের।
এছাড়া নির্বাচনে অংশ গ্রহন না করলে আওয়ামী লীগের ভোটারদেরও একটা ভূমিকা থাকবে এই নির্বাচনে বলে অনেকের ধারনা।
জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর দেশের অন্য এলাকার মতো পঞ্চগড়ের আওয়ামী নেতাকর্মীরাও এলাকা ছাড়া।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পঞ্চগড়-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নূরুল ইসলাম সুজনসহ বেশ কিছু নেতাকর্মী একাধিক মামলায় জেলহাজতে। এর বাইরে প্রথম সারির নেতাসহ ছোটবড় নেতাদের এলাকায় দেখা যায় না। এছাড়া দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণার পর স্বাভাবিক কারণেই এলাকায় দলটির কোনো কার্যক্রম বা তৎপরতা নেই।
এই আসনে জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক কার্যক্রম উপজেলা পর্যায়ে থাকলেও মাঠ পর্যায়ে তেমন পরিলক্ষিত হয়না। তবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাকর্মীদের মাঠে বেশ সরব দেখা যায়। এছাড়া বাংলাদেশ জাসদ, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা), জাকের পার্টি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, গণঅধিকার পরিষদ, গণসংহতি আন্দোলনসহ বিভিন্ন দলের পক্ষ থেকেও নেতাকর্মীদের চাঙ্গা রাখতে নানান সাংগঠনিক কার্যক্রম ও কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে।
পঞ্চগড়-১ আসনে গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মোট ভোটার ছিল ৪ লাখ ৩৬ হাজার ৯২৬ জন ভোটার। এদের মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ১৯ হাজার ৩৩৯ ও নারী ভোটার ২ লাখ ১৭ হাজার ৫৮৬ এবং তৃতীয় লিঙ্গের (হিজড়া) ভোটার ছিলেন একজন।
তবে সবশেষ হালনাগাদ ভোটার তালিকায় মৃত ভোটারদের তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার পর বর্তমানে জেলার দুটি আসনে ভোটার বেড়েছে ২৯ হাজার ৬১৪ জন। এদের মধ্যে পঞ্চগড়-১ আসনে ভোটার বেড়েছে ১৬ হাজার ৩৪৭ জন। এদের মধ্যে তিন উপজেলা নিয়ে পঞ্চগড়-১ আসনে হিন্দু ভোটার রয়েছেন ৭৫ থেকে ৮০ হাজার এবং তরুণ ভোটার ৪০ থেকে ৪৫ হাজার। এই আসনে আগামী নির্বাচনে জয়ী হতে নারী ভোটারের পাশাপাশি তরুণদের ভোট বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে বলে ধারণা স্থানীয়দের।
এছাড়া নির্বাচনে না থাকলে আওয়ামী লীগের ভোটারদেরও একটা ভূমিকা থাকবে এই নির্বাচনে।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোনো জোট হবে কি না, জোট হলে কোন দলের সঙ্গে কোন দলের হবে, এ নিয়ে বিভিন্ন দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে চলছে নানান হিসাবনিকাশ।
এজন্য এখনই কোনো প্রার্থী নির্দিষ্ট করে কিছু বলতে রাজি নন। কারণ পঞ্চগড়-১ আসনে একাধিক দলের শক্তিশালী প্রার্থী রয়েছেন। এদের মধ্যে পঞ্চগড়-১ আসনে সাবেক অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকারের ছেলে ও কেন্দ্রীয় বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার মুহম্মদ নওশাদ জমির অন্যতম।
এছাড়া পঞ্চগড়-১ আসনে মাঠে রয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, জামায়াতে ইসলামীর জেলা আমির ইকবাল হোসাইন, বাংলাদেশ জাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান ও জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি জাগপার মুখপাত্র রাশেদ প্রধান। তারাও দলের কেন্দ্রীয় পর্যায়ের প্রথম সারির এবং দলের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে প্রভাবশালী নেতা। এখানে জোটভুক্ত নির্বাচন অথবা কোনোরকম জোট ছাড়া নির্বাচনের মধ্যে বদলে যেতে পারে প্রার্থিতারও হিসাবনিকাশ।
তবে আগামী সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বসে নেই নেতারাও।
বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ বিভিন্ন দলের সম্ভাব্য মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতারা রাজনীতির মাঠে সরব রয়েছেন। নির্বাচনী মাঠে সরব নেতারা অবাদ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবী জানিয়েছেন। বিভিন্ন সভা সমাবেশ ও উঠান বৈঠক ও গণসংযোগ করছেন। তবে এই আসনে জামায়াতে ইসলামী ছাড়া এখন পর্যন্ত কোনো দল বা ব্যক্তির পক্ষ থেকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থিতা ঘোষণা করা হয়নি।
দলের কেন্দ্রীয় কর্মসূচিসহ স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন সভা-সমাবেশ অংশ নিয়ে দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মনোবল ধরে রাখার চেষ্টা করছেন সবাই।
পঞ্চগড়-১ আসনে দলীয়ভাবে সক্রিয় নেতাদের মধ্যে কেন্দ্রীয় বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার মুহম্মদ নওশাদ জমির অন্যতম। তিনি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনের বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী বলে দলীয় একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে। এর আগেও এ আসনে তিনি বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেন।
গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী সরকারের পতনের পর থেকে ব্যারিস্টার নওশাদ জমির দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়েছেন। দল গোছাতে তিনিও নেতাকর্মীদের নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় সভা-সমাবেশ, উঠোন বৈঠক করছেন। তার বাবা সাবেক রাষ্ট্রপতি ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকারের ব্যক্তিগত ইমেজও তার পক্ষে ভোটার টানতে সহায়ক হতে পারে।
এদিকে সব ঠিক থাকলে জেলা বিএনপির প্রথম সারির একাধিক নেতা এবারও দলীয় মনোনয়ন চাবেন। তবে এদের কেউ এখনই নির্বাচন নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে বা দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে তাদের নাম এখনই প্রকাশ করতে চান না।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী পঞ্চগড় জেলা শাখাও দেশের অন্য এলাকার মতো পঞ্চগড়-১ আসনে তাদের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে। এই আসনে জামায়াতে ইসলামীর জেলা আমির ইকবাল হোসাইনকে জামায়াতের প্রার্থী হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয়।
জামায়াত প্রার্থী ইকবাল হোসাইন গণঅভ্যুত্থানের আগে থেকেই নানাভাবে দলীয় কার্যক্রম চালিয়ে আসছিলেন। দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে তৃণমূল পর্যায়ে দল গঠনে আরও সক্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি। জামায়াতের ইসলামীর আয়োজনে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে ওয়ার্ড পর্যায়ে তাফসিরুল কোরআন মাহফিলসহ দলীয় সভা-সমাবেশ করতে দেখা গেছে।
এছাড়া বিভিন্ন এলাকায় জামায়াতের উদ্যোগে বিভিন্ন অসহায় ব্যক্তি ও পরিবারে নানাভাবে সহায়তা করছেন।
এদিকে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী সরকার পতনের পর থেকেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম তার এলাকায় বেশ তৎপর হয়ে ওঠেন।
সারজিস আলমের বাড়ি পঞ্চগড়-১ আসনের আটোয়ারী উপজেলায়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীদের সমন্বয়ে গঠিত নতুন দল ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি’ এনসিপি রাজনীতির মাঠে আত্মপ্রকাশের পর তিনি উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হিসেবে দায়িত্ব পান। নতুন দায়িত্ব পাওয়ার পর তিনি শতাধিক গাড়িবহর নিয়ে নিজ এলাকায় ব্যাপক শোডাউন করেন। গাড়িবহরের শোডাউন রাজনীতির মাঠে বেশ আলোচিত-সমালোচিত ছিল।
এছাড়া সারজিস আলমের নামে এলাকায় ঈদসহ বিভিন্ন দিবস ও অনুষ্ঠানের শুভেচ্ছা জানিয়ে ব্যাপক পোস্টার ও ফেস্টুনও লাগানো হয়। মাঝে মধ্যেই তিনি এলাকায় জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের নেতাদের নিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি পালনসহ সভা-সমাবেশ করেছেন।
সর্বশেষ এনসিপির কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে জুলাই পদযাত্রা নিয়ে দলের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামসহ প্রথম সারির নেতাদের নিয়ে তিনি জেলা শহরের চৌরঙ্গী মোড়ে পথসভা করেন। তবে আগামী সংসদ নির্বাচনে প্রার্থিতা নিয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।
সম্প্রতি (৪ জুলাই) আটোয়ারী উপজেলায় দলীয় কার্যালয় উদ্বোধনের সময় পঞ্চগড়-১ আসনে এনসিপির প্রার্থিতা নিয়ে তিনি তার বক্তব্যে জানান, এখনো কিছু ঠিক করা হয়নি। এনসিপি থেকে এখানে কে প্রার্থী হবেন, তা এলাকার ভোটাররাই ঠিক করবেন। এলাকায় তার পদচারণা ও সাংগঠনিক কর্মসুচি পালনের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের মন জয় করতে শুরু করেছেন।
এ সংসদীয় আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নাজমুল হক প্রধানও একজন শক্তিশালী প্রার্থী। তিনি একবার (২০১৪ সালে) জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ায় এলাকায় তার উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভোটার রয়েছে। এ সুযোগ তিনি কাজে লাগাতে পারেন। বিভিন্ন এলাকায় বাংলাদেশ জাসদের পক্ষ থেকে ঈদের শুভেচ্ছাসহ দলের পোস্টার লাগানো হয়েছে। তিনিও জেলার বিভিন্ন এলাকায় সভা-সমাবেশ ও গণসংযোগ অব্যাহত রেখেছেন। তিনি স্থানীয় এবং কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পঞ্চগড়-১ আসনে জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি জাগপার মুখপাত্র রাশেদ প্রধানও একজন শক্তিশালী প্রার্থী। জাগপা প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত শফিউল আলম প্রধানের ছেলে হিসেবে তিনিও তার নির্বাচনী এলাকায় বেশ পরিচিত ও জনপ্রিয় মুখ। তিনিও দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে জেলার প্রত্যন্ত এলাকায় হাটবাজারে গণসংযোগ করছেন। তবে নিজের প্রার্থিতা নিয়ে দলীয় কার্যালয়ে এক সভায় তিনি বলেন, ‘এখনো ভোটের রাজনীতি শুরু হয়নি। আপাতত জোটের রাজনীতি চলছে। জোট নিয়ে কীভাবে কী হবে ঠিক করে কিছুই বলা যাবে না। তবে তিনি এলাকায় যে কোনো ভাবেই হোক সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবেন, এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
আগামী নির্বাচনে জাতীয় পার্টি অংশ নিলে জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক আবু সালেক অংশ নিতে পারেন। এছাড়া জাকের পার্টির আনিছুর রহমান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ, গণঅধিকার পরিষদের মাহাফুজার রহমান, গণসংহতি আন্দোলনের সাজেদার রহমান সাজুর পঞ্চগড়-১ আসনের সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানা গেছে। তারাও দলীয় বিভিন্ন কর্মসূচি পালনসহ এলাকায় সভা-সমাবেশ ও উঠোন বৈঠক অব্যাহত রেখেছেন।
পঞ্চগড়-২ (বোদা-দেবীগঞ্জ) আসনেও নির্বাচন মুখী রাজনীতি :--
এয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে পঞ্চগড়-২ বোদা-দেবীগঞ্জ) আসনে এখন নির্বাচন মুখী রাজনীতি পুরোদমে শুরু হয়েছে। বিএনপি,জামায়াত,এনসিপি,সিপিবি, বাংলাদেশ জাসদ, জাতীয় পার্টি সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলো ভোটের মাঠ গোছাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। এসকল রাজনৈতিক দল গ্রাম পর্যায় থেকে শুরু করে ওয়ার্ড ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ে সভা,মহাবেশ.কর্মী বৈঠক,গ্রামে গ্রামে উঠান বৈঠক অব্যাহত রেখেছেন। এলাকার মসজিদ গুলোতে গিয়ে মুসল্লিদের কাছে দোয়া চাচ্ছেন।
সনাতন সম্প্রাদের ধর্মীয় সভাগুলোতে অংশ গ্রহন ও মন্দির পরিচালনা কমিটি সাথে বৈঠক করছেন। দলীয় নেতা কর্মীদের সুসংগঠিত করার পাশাপাশি সাধারণ ভোটারদের পাশে টানতে ছুটে চলছেন অবিরাম। করছেন হাট বাজারগুলোতে গণসংযোগ। সুখ-দু:খে তাদের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়ে এলাকার উন্নয়নের কথা বলছেন তারা। এলাকার বিদমান সমস্যাগুলো চিহিৃত করে সমাধান ও উন্নয়নের কথা বলছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। অপর দিকে ভোটারাও এখন থেকেই প্রার্থী বাছাই করা শুরু করেছেন। বোদা ও দেবীগঞ্জ দুই উপজেলার হাট-বাজার,আড্ডাখানা,চা স্টোল.গ্রাম-গঞ্জ সহ সর্বত্রই এখন ভোটের আলোচনায় মুখোর।
এই আসনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির পল্লী উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক ও পঞ্চগড় জেলা বিএনপির সদস্য সচিব,২০১৮ সালের নির্বাচনে এই আসনের বিএনপির মনোনীত ধানের শীষের এমপি প্রার্থী আলহাজ্ব ফরহাদ হোসেন আজাদ এবারও এই আসন থেকে বিএনপির একক প্রার্থী বলে জানা গেছে। তিনি ছাত্রদলের রাজনীতি থেকে বিএনপির মুল দলের রাজনীতিতে এসেছেন। রাজনীতিতে সক্রিয় ভুমিকা পালন করায় এবং দলের দুঃসময়ে আন্দোলন সংগ্রামে অগ্রণী ভুমিকা পালন সহ দলকে সুসংগঠিত করায় তিনি বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটিতে জায়গা করে নিয়েছেন।
বোদা ও দেবীগঞ্জে তার বিশাল কর্মীবাহিনী রয়েছে। সাধারণ মানুষের সাথে তার অত্যন্ত সুসর্ম্পক তৈরী হয়েছে। তাছাড়া এই আসনে বিএনপি বেশী শক্তিশালী সংগঠন। তার নেতৃত্বে তৃর্ণমুলের বিএনপির নেতা-কর্মীরা বেশ উজ্জিবীত। তিনি প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত তার নির্বাচনী এলাকায় সভা,সমাবেশ,কর্মী বৈঠক,গ্রামে গ্রামে উঠান বৈঠক,সামাজিক-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহন এবং হাট বাজারে গণসংযোগ অব্যাহত রেখেছেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঘোষিত ৩১ দফার লিফলেটও ঘরে ঘরে পৌঁছে দিচ্ছেন। ছাত্রদলের রাজনীতি করার সুবাদে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাথেও তার সুসম্পক রয়েছে। স্থানিয় বিএনপির নেতারা বলছেন,গত কঠিন সময়ে বা দলের দু:সময়ে ফরহাদ হোসেন আজাদ আন্দোলন সংগ্রামে অগ্রণী ভুমিকা রেখে দলকে সুসংগঠিত করেছেন,তাই তিনি আসন্ন নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে এবং বিএনপি সরকার গঠন করলে ফরহাদ হোসেন আজাদ মন্ত্রীত্ব পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বোদা উপজেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যাপক আব্দুল মান্নান চিলাহাটি ওয়েব ডটকমকে বলেন-ফরহাদ হোসেন আজাদ এই আসনে বিএনপির একক প্রার্থী। উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লাহ আসাদ বলেন,এই আসনে ফরহাদ হোসেন আজাদের বিকল্প কোন প্রার্থী নেই। এই আসনে বিএনপি অত্যন্ত শক্তিশালী,সুষ্ঠু নির্বাচন হলে এই আসনে বিএনপির প্রার্থী বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয় অর্জন করবেন। বোদা পৌর বিএনপির সভাপতি আব্দুস সামাদ তারা চিলাহাটি ওয়েব ডটকমকে বলেন- ফরহাদ হোসেন আজাদ মাঠের রাজনীতি ধরে ছিলেন,দলকে সুসংগঠিত করেছেন,আন্দোলন সংগ্রামে তার ভুমিকা ছিল অগ্রণী। এখানে তার বিকল্প কোন প্রার্থী নেই। ভোটের রাজনীতিতে এই আসনে বিএনপি অত্যন্ত শক্তিশালী। এখানে দলের মধ্যে কোন গ্রুপিং নেই।
এয়োদশ সংসদ নির্বাচনে এই আসনে বিএনপির মনোনীত ধানের শীষের প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত হবে। এই আসনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর দলীয় প্রার্থী হিসেবে জামায়াতে ইসলামী বোদা উপজেলা শাখার কর্মপরিষদের সদস্য,বোদা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ্ব সফিউল্লাহ সুফির নাম ঘোষনা করেছেন। দলীয় মনোনয়ন পেয়ে তিনিও ভোটের মাঠ গোছাতে শুরু করেছেন।
বোদা ও দেবীগঞ্জ দুই উপজেলায় জামায়াতের উদ্যোগে ইতি মধ্যে কর্মী বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে। কর্মী বৈঠকের পাশাপাশি সফিউল্লাহ সুফি বিভিন্ন হাট-বাজারে গণসংযোগ করছেন। মসজিদে মসজিদে ঘুরে ভোটারদের দোয়া কামনা করছেন। সনাতন সম্প্রদায়ের ভোট পেতে তাদের অনুষ্ঠান গুলোতে অংশ গ্রহন করছেন। চেষ্টা করছেন তাদের সাথে সুসম্পক তৈরী করার। এই আসনে সনাতন সম্প্রদায়ের অনেক ভোট। এই আসনে নির্বাচনে বিজয়ের ক্ষেত্রে সনাতন সম্প্রদায়ের ভোট বেশ ভুমিকা রাখে। এই আসনে এখন পর্যন্ত এনসিপির মাঠ পর্যায়ে তেমন কোন সাংগঠিক কাঠামো নেই। সাংগঠনিক তৎপরতা তেমন লক্ষ করা যায়না।
সম্প্রতি এই সংগঠনের উপজেলা কমিটি ঘোষনা করে দলীয় কার্যালয় চালু করা হয়েছে। এনসিপির উত্তরাঞ্চলীয় মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম সম্প্রতি এই আসনে কয়েকটি পথসভা ও গণসংযোগ করেছেন।
সাংগঠনিক সফরে পঞ্চগড় আসলেই তিনি বোদা ও দেবীগঞ্জ দুই উপজেলায় দলের নেতাকর্মীদের সাথে বৈঠক করছেন। এন সি পি থেকে এই আসনে এখনো কোন প্রার্থীর নাম ঘোষনা করা হয়নি।
অধ্যাপক এমরান আল আমিন বাংলাদেশ জাসদ থেকে এই আসনে প্রার্থী হবেন বলে জানা গেছে। তিনি বাংলাদেশ জাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক পদে রয়েছেন। তিনিও ভোটের মাঠ গুছাচ্ছেন। বাংলাদেশ জাসদ সাংগঠনিকভাবে এই আসনে বেশি শক্তিশালী না হলেও এমরান আল আমিন এর ব্যক্তি পরিচয় এলাকায় রয়েছে।
বাংলাদেশর কমিউনিস্ট পার্টির পঞ্চগড় জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক কমরেড আশরাফুল আলম এবারেও এই আসন থেকে সিপিবির প্রার্থী হবেন বলে জানা গেছে। কমরেড মোহাম্মদ ফরহাদের বাড়ি এই এলাকায় হওয়ায় এক সময় বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির ঘাঁটি ছিল এই আসনটি। আগের মতো এখন সংগঠনটি শক্তিশালী নয়। তবে বাম ধারার কিছু ভোট রয়েছে এই আসনে। সংগঠনটি কেন্দ্রীয় কর্মসূচি পালনের পাশাপাশি ভোটের রাজনীতিও শুরু করেছেন। জোট না হলে জাগপাও এই আসনে প্রার্থী দিবেন বলে জানা গেছে।
জাগপার প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত সফিউল আলম প্রধানের মেয়ে ব্যারিষ্টার তাসমিয়া প্রধান বা তার ছেলে রাসেদ প্রধান দুজনের মধ্যে একজন এই আসনে প্রার্থী হতে পারেন। সম্প্রতি রাসেদ প্রধানকে পঞ্চগড় জেলার দুই আসনে গণসংযোগ করতে দেখা গেছে। কিছুদিন আগে পঞ্চগড়ে জামায়াতের আমীরের জনসভা মঞ্চে জাগপা নেতা ব্যারিষ্টার তাসমিয়া প্রধানকে বক্তব্য দিতে দেখা গেছে। লুৎফর রহমান রিপন জাতীয় পার্টি থেকে এই আসনে প্রার্থী হবেন বলে জানা গেছে। জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক কাঠামো এই আসনে আগের চেয়ে অনেক দুর্বল।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে, জাতীয় পার্টি ও এই আসনে সাংগঠনিক তৎপরতা শুরু করেছে। এল ডি পি থেকে মো রেজাউল ইসলাম বিপুল এই আসন থেকে প্রার্থী হবেন বলে জানা গেছে। এই দলটির এখানে তেমন সাংগঠনিক কার্যক্রম নেই । তবে মো রেজাউল ইসলাম বিপুল এলাকায় গণসংযোগ করছেন। নিজেকে প্রাপ্তি হিসেবে ঘোষণা করে বিভিন্ন এলাকায় ফেস্টুন, পোস্টার ও ব্যানার টাঙ্গিয়েছেন ।
সম্প্রতি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এই আসনে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছেন। দলের দেবীগঞ্জ উপজেলা শাখার সভাপতি মো,কামরুল হাসান প্রধান এই আসন থেকে প্রার্থী হবেন বলে জানা গেছে।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এই আসনে ভোটের রাজনীতি শুরু করেছেন। করছেন কর্মী বৈঠক ও গণসংযোগ। সরকারি ভাবে নিষিদ্ধ থাকায় এই আসনে আওয়ামী লীগের কোন কার্যক্রম নেই। রাজনীতির মাঠে আওয়ামী লীগের কোন নেতাকর্মী নেই। এই আসনে বিএনপি সাংগঠনিকভাবে বেশ শক্তিশালী। সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি ভোটের রাজনীতি শুরু করেছে বিএনপি।
জামায়াতে ইসলামী দলকে শক্তিশালী করতে মাঠ পর্যায়ে ব্যাপক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। জামায়াত ভোটের রাজনীতি শুরু করেছে । পঞ্চগড় -২ আসন থেকে ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক কমরেড মোহাম্মদ ফরহাদ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
১৯৮৮ সালে জাতীয় পার্টির প্রার্থী অ্যাডভোকেট কামিজ উদ্দিন প্রধান সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯১ সালে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির প্রার্থী প্রয়াত মো,মোজাহার হোসেন আওয়ামী লীগের সাথে জোট করে নৌকা প্রতীক নিয়ে এই আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হন। এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি বিএনপিতে যোগদান করেন। এরপর তিনি ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে বিএনপি থেকে প্রার্থী হয়ে পর পর দুইবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত পঞ্চগড় জেলা বিএনপির সভাপতি ছিলেন । ২০০৮,২০১৪,২০১৮ ও ২০২৪ সালে এই আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী, সাবেক রেলপথ মন্ত্রী ও পঞ্চগড় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম সুজন এমপি নির্বাচিত হন।
২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনে ফরহাদ হোসেন আজাদ এই আসন থেকে বিএনপি'র প্রার্থী হয়েছিলেন। এই আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ২৬ হাজার ৬৮৮ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ২ লাখ ১০ হাজার ৭২২ জন,পুরুষ ভোটার ২ লাখ ১৫ হাজার ৯৬৫ জন এবং হিজরা ভোটার ৩ জন। এর মধ্যে বোদা উপজেলায় মোট ভোটার ২ লাখ ৩ হাজার ৯২ জন। এই উপজেলায় পুরুষ ভোটার ১ লাখ ১ হাজার ৬১২ জন,মহিলা ভোটার ১ লাখ ১ হাজার ৪৭৯ জন,হিজরা ১ জন। দেবীগঞ্জ উপজেলায় মোট ভোটার ২ লাখ ২৩ হাজার ৫৯৬ জন। এই উপজেলায় পুরুষ ভোটার ১ লাখ ১৪ হাজার ৩৫৩ জন.নারী ভোটার ১ লাখ ৯ হাজার ২৪৩ জন এবং হিজরা ভোটার ২ জন।