নজরুল ইসলাম, বোদা (পঞ্চগড়) প্রতিনিধি, চিলাহাটি ওয়েব : হাত দিয়েই তুলে ফেলা যাচ্ছে নির্মাণ কাজ চলা সড়কের কার্পেটিং। দিনে দুপুরে এত বড় অনিয়ম দেখে প্রতিবাদ শুরু করেন স্থানীয়রা। শুরুতে কয়েকজন যুবক প্রতিবাদ জানালে পুলিশের ভয়-ভীতি দেখান ঠিকাদারের লোকজন। পরে স্থানীয়রা জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। এক পর্যায়ে সড়কের কার্পেটিংয়ের কাজ বন্ধ করে দেন স্থানীয়রা। একটি পাঁকা সড়ক নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগকে ঘিরে উত্তপ্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।
এঘটনাটি শনিবার দুপুরে পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার ময়দানদীঘি ইউনিয়নের ধনিপাড়া এলাকায়।
জানা যায়, ২০২০-২১ অর্থবছরে বোদা উপজেলার ময়দানদিঘী ইউনিয়নের ধনিপাড়া এলাকার পঞ্চগড় ঢাকা মহাসড়ক থেকে দক্ষিণ গাইঘাটা প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত এক কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের কাজের ঠিকাদারী পায় এমআর ট্রেডার্সের নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। সড়কটির কাজের শুরু থেকেই অনিয়ম লক্ষ্য করেন স্থানীয়রা। এর আগে একাধিকবার প্রতিবাদ করলেও তোয়াক্কা করেননি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
শনিবার দুপুরে সড়কটির ধনীপাড়া এলাকায় কার্পেটিং এর কাজ শুরু করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। এ সময় স্থানীয় একজন যুবক সড়কের কাজের মান দেখতে যান। পরে তারা সড়কের কার্পেটিংয়ে হাত দিলে খুলে আসতে শুরু করে কার্পেটিং। এ সময় যুবকেরা প্রতিবাদ জানালে তাদের পুলিশে দেওয়ার ভয়ভীতি দেখান ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন। পরে স্থানীয়রা এগিয়ে এলে শুরু হয় বিশৃঙ্খলা একপর্যায়ে বিক্ষোভ করে সড়কের কাজ বন্ধ করে দেন তারা।
সড়কে কোন অনিয়ম হচ্ছে কিনা এমন প্রশ্নে বোদা উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয়ের কার্য সহকারী জাহিদুল ইসলাম গণমাধ্যম কর্মীদের বলেন, সড়ক নির্মাণে কোন অনিয়ম হচ্ছে না। নিয়ম মেনে সড়কের কাজ করা হচ্ছে। এ সময় স্থানীয়রা ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে মারধর করেন। পরে কোনোমতে পালিয়ে তিনি প্রাণ রক্ষা করেন।
স্থানীয় ইউসুফ আলী বলেন, আমি ভ্যান চালিয়ে যাচ্ছিলাম। দেখি আমার সামনেই নতুন কার্পেটিং উঠে যাচ্ছে। তখন পাশেই থাকা মিস্ত্রি বলেন হাতুড়ি দিয়ে সেটা ঠিক করতে হবে।
প্রতিবাদকারী যুবক মাসুদ রানা বলেন, কাজ চলছে কাদা ও ধুলো-ময়লার ওপরেই। প্রতিবাদ করলে তারা আমাকে হুমকি দেয়, ভিডিও করে রাখে। তখন আমরা স্থানীয়রা এক হয়ে কাজ বন্ধ করে দেই।
নির্মাণকাজে নিয়োজিত মিস্ত্রি আবুল কালাম বলেন, বৃষ্টির কারণে কিছু বালু জমে ছিলো। ময়লা না সরিয়েই কার্পেটিং করায় এমন হয়েছে। এটা অনিয়মই।
ময়দানদিঘী ইউনিয়নের তিন নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য বেলাল হোসেন বলেন, এই রাস্তার কাজ বহুদিন ধরে চলছে। পাশের রাস্তাটি আগেই শেষ হয়েছে, অথচ এই রাস্তাটি বারবার বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এবারও অভিযোগ পেয়ে গিয়ে দেখি কাজের মান খুবই খারাপ। আমি নিজে উপস্থিত থেকে কাজ বন্ধ করে দিই।
মারধরের শিকার বোদা উপজেলার প্রকৌশলীর কার্যালয়ের কার্য-সহকারী জাহিদুল ইসলাম বলেন, আমি কাজ তদারকি করতে গিয়েছিলাম। সাংবাদিকদের বলেছিলাম কাজে কোনো অনিয়ম নেই। তখনই কয়েকজন উত্তেজিত হয়ে আমাকে মারধর করে। আমি পালিয়ে বেঁচেছি।
তিনি আরও বলেন, ১০ দিন আগে প্রাইম কোট দেওয়া হয়েছিল। বৃষ্টিতে কিছু বালু জমেছিল, পরিষ্কার না করেই কার্পেটিং শুরু হয় যা ঠিক হয়নি।
এবিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এমআর ট্রেডার্সের প্রতিনিধি মিজানুর ইসলাম বলেন, এটি ২০২০-২১ অর্থবছরের কাজ। আমি সাব-ঠিকাদার হিসেবে যুক্ত। বিস্তারিত মনে নেই, দেখে বলতে হবে। এরপরই ফোন কেটে দেন তিনি।
পঞ্চগড় এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মাহমুদ জামান বলেন, রাস্তার কাজে অনিয়মের অভিযোগ পেয়েছি। স্থানীয়রা কাজ বন্ধ করেছে বলেও শুনেছি। তবে কোনো কর্মকর্তা গণপিটুনির শিকার হয়েছেন এমন তথ্য আমাদের জানা নেই। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।