আকাশ রহমান বদরগঞ্জ (রংপুর) প্রতিনিধিঃ রংপুরের বদরগঞ্জে শ্বশুরের সঙ্গে আপত্তিকর ভিডিও ফাঁস ও গৃহবধূকে হত্যার প্রতিবাদে গতকাল শুক্রবার বিকালে বদরগঞ্জ উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নের নাটারাম এলাকায় মিতুর পরিবারের লোকজন ও এলাকাবাসী মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করে। নিহত মিতু বানু বদরগঞ্জ উপজেলার নাটারাম গ্রামের মেনাজুল মিয়ার মেয়ে। গতকাল শুক্রবার
মিতুর মা-বাবা, এলাকাবাসী ও ছাত্র সমাজ মানববন্ধনে বলেন, কসাই রাজা ও ছেলে সহ হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত সকল অপরাধীকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে ফাঁসি কার্যকর করতে হবে।
বক্তারা আরো বলেন, রংপুর নগরীর বালা পাড়া এলাকায় গত মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সকালে শশুরের কু-প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় মিতু বানু নামে ওই গৃহবধূকে হত্যা করে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেয়া হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ওই দিন দুপুরে গৃহবধূর মরদেহ উদ্ধার করে রমেক হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।
আরো অভিযোগ উঠেছে, শ্বশুড়ের যৌন হয়রানির একটি ভিডিও ফাঁস হওয়াকে কেন্দ্র করে পুত্রবধূ মিতু বানুকে সিলিং ফ্যানে ঝুলে রেখে হত্যা করা হয়েছে। স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে পুলিশ রংপুর নগরীর বালাপাড়ায় সোহান মিয়ার বাড়ির নিজ ঘর থেকে তার স্ত্রী মিতু বেগমের মরদেহ উদ্ধার করে।
ঘটনার দিন পরিবারের সদস্যদের উদ্ধৃত করে পুলিশ আরও জানায়, পরিবারের সদস্যরা ডাকাডাকির পর সাড়া শব্দ না পেয়ে ঘরের দরজা ভেঙে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় মিতু বানুকে দেখা যায়। পরে ওড়না কেটে নামিয়ে হাসপাতালে নেয়ার চেষ্টা করে স্বজনরা। খবর পেয়ে মিতুর ভাইসহ পরিবারের লোকজন ছুটে আসলে মিতুর স্বামীর বাড়ির লোকজন তাদেরকে মারধর করে।
স্থানীয়রা জানান, মিতু বানুর স্বামী সাহানুর রহমান সোহান মাদকাসক্ত। তার শ্বশুড় রাজা মিয়া জোরপূর্বক পুত্রবধূর সাথে বিভিন্ন অনৈতিক কাজ করেন। যৌন হয়রানির এরকম একটি ভিডিও সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফাঁস হয়। সেখানে দেখা যায় মিতু বানু তার ঘরের ভিতরে শিশু সন্তানকে নিয়ে শুয়ে আছেন। হঠাৎ সাহানুরের বাবা রাজা মিয়া ওই ঘরে গিয়ে মিতুর শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেয়।
এদিকে এ ঘটনা জানাজানি হলে এলাকার পরিস্থিতি থমথমে হয়ে উঠে। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ মিতুর স্বামী সোহানুরকে আটক করে। কিন্তু স্থানীয়দের বাধার মুখে সোহানুরকে ছিনিয়ে নিয়ে যায় তার লোকজন।
নিহত গৃহবধূর মামা শফি আলম বলেন, তিন বছর আগে আমার ভাগ্নির সাথে সোহানুর রহমান সোহানের সাথে বিয়ে দেওয়ার জন্য আমার হাত পা ধরেছিল রাজা মিয়া। আমার ভাগ্নির ১০ মাসের একটি বাচ্চা আছে। শিশু বাচ্চা ঘরে থাকা অবস্থায় এরকম কাজ করে কেমন করে। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের বিচারের দাবি করছি।
রংপুর মেট্রোপলিটন কোতোয়ালি থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতাউর রহমান বলেন, নিহত মিতু বানুর মরদেহ উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হবে বলে জানান। ময়নাতদন্তের পরে জানা যাবে ঘটনাটি হত্যা না আত্মহত্যা।
তিনি আরও বলেন, যৌন হয়রানির একটি ভিডিও পাওয়া গেছে। ওই ভিডিওটিকে ক্লু হিসেবে ধরে তদন্ত চলছে। এ ঘটনায় নিহতের পরিবার থেকে মামলা দায়ের করা হয়েছে । আসামিদের গ্রেফতারের অভিযান অব্যাহত আছে।