Type Here to Get Search Results !

ভাড়াটিয়া শিক্ষিকা দিয়ে সরকারি বিদ্যালয় পরিচালনা

ইব্রাহীম মিঞা, বিরামপুর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি‌ :দিনাজপুর জেলার বিরামপুর উপজেলার বিনাইল ইউনিয়নের গঙ্গাদাসপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ ভেঙে পড়েছে চরম অনিয়ম-অব্যবস্থাপনায়। সরকারি নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকরা দায়িত্ব এড়িয়ে বছরের পর বছর বিদ্যালয় পরিচালিত হচ্ছে ভাড়াটিয়া শিক্ষিকার মাধ্যমে। অথচ শিক্ষকরা সরকারের বেতন-ভাতা ভোগ করছেন নিয়মিত। বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) বিদ্যালয় চলাকালীন সময়ে দেখা যায় প্রধান শিক্ষক ও ৩ জন সহকারী শিক্ষক কেউই বিদ্যালয়ে উপস্থিত নন। ক্লাস নিচ্ছেন একজন ভাড়াটিয়া নারী শিক্ষিকা, যিনি প্রতি মাসে তিন হাজার টাকার বিনিময়ে পাঠদান করেন। শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “দুই দিন ধরে পতাকা ওঠানো হয়নি, তবুও আমাদের ক্লাস চলছে।” জাতীয় পতাকা উত্তোলন না করেই পাঠদান করার অভিযোগ শিক্ষার্থীদের ছোট্ট মুখে উঠে আসা সত্যিই বেদনাদায়ক। পরে একজন সহকারী শিক্ষক বিদ্যালয়ে এসে পতাকা না তোলার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে জানান, দড়ি ছিঁড়ে যাওয়ায় পতাকা ওঠানো যায়নি। তবে এলাকাবাসীর অভিযোগ, এটি কেবল অজুহাত। পতাকার দড়ি ছিঁড়ে যাওয়া মানেই জাতীয় পতাকা অবজ্ঞা করার বৈধতা নয়। স্থানীয়দের অভিযোগে উঠে এসেছে কয়েকজন শিক্ষকের নামও মোঃ মশিউর রহমান (সহকারী শিক্ষক): তাঁর স্ত্রী ঢাকায় চাকরি করার কারণে তিনিও পরিবার পরিজন নিয়ে ঢাকায় অবস্থান করছেন। বিদ্যালয়ে ছুটির আবেদন রেখে ঢাকায় থাকেন। কর্তৃপক্ষ বা স্থানীয়রা খোঁজ নিলে ছুটির আবেদন দেখানো হয়, আবার অনেক সময় হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেও অনুপস্থিত থাকেন।আর মাঝেমধ্যে নামমাত্র বিদ্যালয়ে যাওয়া আসা করেন। মোঃ আল ইমরান (সহকারী শিক্ষক): যোগদানের পর থেকেই বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত। অসুস্থতার দোহাই দিয়ে চিকিৎসার নামে মাসের পর মাস অনুপস্থিত।এলাকাবাসীর দাবি, তিনি ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন। একই ব্যক্তি কীভাবে সরকারি চাকরির পাশাপাশি বেসরকারি চাকরি করছেন তা নিয়ে এলাকায় তীব্র ক্ষোভ। মোঃ সাহাবুল ইসলাম (সহকারী শিক্ষক) নিয়োগ হয়েছে গঙ্গাদাসপুর বিদ্যালয়ে, কিন্তু তিনি থাকেন পাশ্ববর্তী উপজেলা ফুলবাড়ীতে। সেখানে নিজের কোচিং সেন্টার গড়ে তুলেছেন এবং সেই ব্যবসায়েই বেশি মনোযোগী। ফলে বিদ্যালয়ে উপস্থিতি অনিয়মিত। প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক অদক্ষতা ও কর্মে উদাসীনতার অভিযোগ রয়েছে । সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার ও উপজেলা শিক্ষা অফিসার একাধিকবার তাঁকে কৈফিয়ত তলব করেছেন এবং সতর্কবার্তাও দিয়েছেন। তবুও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জানান, প্রধান শিক্ষক মাসিক মিটিংয়ে ছিলেন, একজন সহকারী শিক্ষক চিকিৎসার জন্য ছুটিতে। তবে বাকি দু’জনের বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নাজিমুদ্দিন বলেন, আমি গত সপ্তাহে ও আগের মাসে স্কুলটি পরিদর্শন করেছি। শিক্ষার মান আসলেই লাজুক অবস্থায় আছে। প্রধান শিক্ষককে কঠোর হতে হবে, নইলে এ অবস্থা থেকে উত্তরণ সম্ভব নয়। তাঁর অভিযোগ, আমরা যখন অনিয়মের বিরুদ্ধে পরিদর্শন করি তখন শিক্ষকরা উল্টো আমাদের ‘শিক্ষক হয়রানির ট্যাগ’ দেন। এজন্য সঠিক ব্যবস্থা নিতে বাধা সৃষ্টি হয়। স্থানীয়রা বলেন, সরকার কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণ করেছে। অথচ শিক্ষকদের অবহেলা আর অনুপস্থিতির কারণে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। ভাড়াটিয়া শিক্ষিকার হাতে বছরের পর বছর বিদ্যালয় চালানো হচ্ছে এটি জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য কলঙ্কজনক। এবিষয়ে বিদ্যালয়টির শিক্ষার মান ফিরিয়ে আনতে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেন এলাকাবাসী।
বিভাগ

Top Post Ad

Hollywood Movies