নজরুল ইসলাম, বোদা (পঞ্চগড়) প্রতিনিধি, চিলাহাটি ওয়েব : পঞ্চগড় শহরের রেজিস্ট্রি অফিস সংলগ্ন জনবহুল ও ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় বেঙ্গল এলপিজি এনার্জি ফিলিং স্টেশনের প্রাথমিক অনুমোদন বাতিলের দাবিতে শহীদ মিনারের সামনে পঞ্চগড় -ঢাকা মহাসড়কের পাশে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বাপা পঞ্চগড় জেলা আঞ্চলিক শাখার উদ্যোগে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।
শনিবার ঘন্টাব্যাপী মানববন্ধনে বাপার পঞ্চগড় জেলা আঞ্চলিক শাখার সভাপতি অ্যাডভোকেট একেএম আনোয়ারুল ইসলাম খায়ের, সড়ক সভাপতি কাজী মোকছেদ, সাধারণ সম্পাদক আজহারুল ইসলাম জুয়েল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, পরিবেশ কর্মী নাট্যকার সাংবাদিক সরকার হায়দার, প্রবীণ গণমাধ্যমকর্মী ও বেলার নেটওয়ার্ক মেম্বার শহীদুল ইসলাম শহীদ, প্রকৌশলী মানিক খান, শেখ সাজ্জাদ হোসেনসহ ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা বক্তব্য দেন ।
বক্তারা জনবহুল ও ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় বেঙ্গল এলপিজি ফিলিং স্টেশন স্থাপনের প্রাথমিক অনুমোদন বাতিলের দাবি জানিয়ে বলেন, রংপুর শহরের সিও বাজার এলাকায় এলপিজি ফিলিং স্টেশনের স্টোরেজ ট্যাংক বিস্ফোরণে একজন নিহত হওয়ায় এবং বিস্ফোরণের আশেপাশের এক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ঘরবাড়ির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি, যানবাহনের ক্ষয়ক্ষতি এবং ময়মনসিংহ শহরে এলপিজি ফিলিং স্টেশনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে পরে জনগণ। পঞ্চগড় শহরের সুশীল সমাজ, সচেতন নাগরিক সমাজ এবং পুরাতন পঞ্চগড় রেজিষ্ট্রি অফিস সংলগ্ন এলাকার মানুষ বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কে "পঞ্চগড় শহরের জেলা রেজিস্ট্রি অফিসের সম্মুখে নির্মাণাধীন বেঙ্গল এলপিজি" এর নির্মাণ কাজ বন্ধকরণসহ উক্ত স্থানে এলপিজি ফিলিং স্টেশন নির্মাণের অনুমোদন বাতিলের দাবী উপস্থাপনের জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অবহিত করে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) পঞ্চগড় বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে অনুসন্ধানে জানতে পারেন যে, প্রতিষ্ঠানটিকে বাংলাদেশ বিস্ফোরক অধিদপ্তর, ঢাকা কর্তৃক তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (অটোগ্যাস) রিফুয়েলিং ও রুপান্তর ওয়ার্কসনপ স্থাপন পরিচালনায় এবং রক্ষণাবেক্ষণ নীতিমালা/২০১৬ এর বিধান লঙ্ঘন করে নকশা অনুমোদন দিয়াছেন। কারণ তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) বিধিমালা/২০০৪ অনুযায়ী জনবসতিপূর্ণ এলাকা, বানিজ্যিক এলাকা এবং সরকারি অফিস সংলগ্ন স্থানে এলপিজি ফিলিং স্টেশন স্থাপনের স্থাপনযোগ্য নহে। প্রস্তাবিত এলপিজি স্টেশনের তিনদিকে সংলগ্ন বসতবাড়ি রয়েছে । সম্মুখে ৭৫ গজের মধ্যে পঞ্চগড় জেলা রেজিস্ট্রি অফিস এবং যাতে বিগত কয়েক শতকের মুল্যবান দলিল পত্রের মুল বালাম বহির রেকর্ড রুম রয়েছে।
স্থাপনযোগ্য এলপিজি ফিলিং স্টেশনের ৭ মিটার এলাকায় কোন বসতবাড়ি থাকিলে সেখানে এলপিজি বিধিমালা/২০০৪ এর বিধান অনুযায়ী নকশা অনুমোদনযোগ্য নহে। দৃশ্যমান একটি জনবসতিপুর্ণ এলাকায় বেঙ্গল এলপিজির নির্মাণ কাজ চলমান থাকায় এবং রংপুরের দূর্ঘটনার কারণে এলাকাবাসী আতঙ্কিত । দূর্ঘটনা এড়ানো সাবধানতা অবলম্বনে কমানো যেতে পারে কিন্তু বন্ধ করা যায় না। যখন কোন দূর্ঘটনা ঘটে তারপর আমরা কারণ অনুসন্ধান করি।
অনুমোদন দাতাদের দায়ী করি, বিচার দাবি করি, কিন্তু দূর্ঘটনার আগে সামাজিক সংগঠনের দাবির প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হয় না। এলপিজি ফিলিং স্টেশন নির্মাণের অনুমোদন দেওয়ার আগে পৌরসভা, জেলা প্রশাসন, ফায়ার সার্ভিস, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র প্রয়োজন। পঞ্চগড় জেলা রেজিস্ট্রি অফিস সংলগ্ন বেঙ্গল এলপিজির নকশা অনুমোদনের পূর্বে কিভাবে উপরোক্ত প্রতিষ্ঠানসমুহ ঘনবসতি শহরের ব্যস্ততম এলাকায় এই সকল ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে । তার প্রশ্ন উঠা স্বাভাবিক। ইতোমধ্যে এই সকল ছাড়পত্র দেওয়া হয়ে থাকলে সাধারণ মানুষের জানমালের নিরাপত্তার স্বার্থে তা অবিলম্বে বাতিল করা উচিত। এখানে উল্লেখ্য যে, নির্মাণাধীন বেঙ্গল এলপিজির বিরুদ্ধে এলাকার লোকজন আপত্তি করলে প্রভাবশালী মহলের হুমকির মুখে পরতে হয়। ফলে এলাকাবাসী ভয়ে মুখ খুলে না। এ অবস্থায় শহরের জেলা রেজিস্ট্রি অফিস সম্মুখে নির্মাণাধীন বেঙ্গল এলপিজির নকশা অনুমোদন বাতিলের দাবি জানানো হয়।
বেঙ্গল এলপিজি ফিলিং স্টেশনের মালিক আবরার মতিন আলিফ বলেন, বেঙ্গল এলপিজি ফিলিং স্টেশনটি আইনকানুন নিয়ম নীতিমালা মেনে স্থাপন করা হচ্ছে।
পঞ্চগড় জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ইউসুফ আলী বলেন, জেলা প্রশাসক প্রাথমিক অনুমোদন দেওয়ায় পরিবেশ অধিদপ্তর প্রাথমিক অনুমোদন দেয়।