Type Here to Get Search Results !

সীমানা বেড়ায় ফুটবল লাগায় দুই শিক্ষার্থীকে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখেন স্কুল শিক্ষকের স্ত্রী

নজরুল ইসলাম, বোদা (পঞ্চগড়) প্রতিনিধি, চিলাহাটি ওয়েব : পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলায় দুপুরের বিরতিতে ফুটবল খেলার সময় বাড়ির সীমানার টিনের বেড়ায় বল লাগায় দুই শিক্ষার্থীকে গরু বাঁধার দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখার অভিযোগ উঠেছে এক স্কুল শিক্ষকের স্ত্রীর বিরুদ্ধে। ওই দুই শিক্ষার্থীর হাত ও পায়ে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়েছে। এতে নেটিজেনদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। গেল সোমবার এমন অমানবিক ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার বলরামপুর ইউনিয়নের লক্ষীদ্বার এলাকায়। ওই দুই শিক্ষার্থীর নাম চয়নচন্দ্র রায় ও মাসুম বিল্লাহ। তাদের বাড়ি ইউনিয়নের লক্ষীদ্বার এলাকায়।
চয়ন জ্যোতিষ চন্দ্র বর্মণের ছেলে ও মাসুম আনারুল ইসলামের ছেলে। জানা যায়, গত সোমবার দুপুরের বিরতিতে লক্ষীদ্বার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী চয়ন চন্দ্র রায়, বাক ও শ্রবন প্রতিবন্ধী মাসুম বিল্লাহ সহ শিক্ষার্থীরা ফুটবল খেলছিল। এক পর্যায়ে তাদের ফুটবলটি কালমেঘ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ও লক্ষীদ্বার এলাকার বাসিন্দা কালিদাস চন্দ্র রায়ের বাড়ির সীমানার টিনের বেড়ায় লাগে। পরে তার স্ত্রী ঘর থেকে বের হয়ে শিক্ষার্থী মাসুম ও চয়নকে বাড়ির ভিতরে ধরে নিয়ে যান। এর পর গরু বাধাঁর একটি দড়ি ( রশি) দিয়ে তাদের হাত-পা বেঁধে পেয়ারা গাছের সাথে বেঁধে রাখেন। পরে তাদেরকে ছাড়ানোর জন্য অন্য শিক্ষার্থীরা এগিয়ে গেলেও তাদেরকে বাড়ি থেকে বের করে দেন স্কুল শিক্ষকের স্ত্রী।
বিষয়টি লক্ষীদ্বার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দুই সহকারী শিক্ষক মৌসুমী বর্মন ও জয়শ্রী রাণী তাদের ছাড়াতে গেলেও অভিভাবক না আসলে ছেড়ে দেওয়া হবেনা বলে জানানো হয়৷ শিক্ষার্থী চয়ন ও মাসুমের মা-বাবা আসলে তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হয়। পরে বিষয়টি আটোয়ারী থানা পুলিশ ও প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তাদের জানানো হলে তারা ছুটে আসেন। বিষয়টি সমাধানের জন্য বলরামপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন ও ইউপি সদস্য সহ স্থানীয়রা সালিশ বৈঠকে বসলে ওই শিক্ষকের স্ত্রী জনসম্মুখে নিজের ভূল স্বীকার করে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। এতেও স্থানীয়রা না মানলে ওই স্কুল শিক্ষক ও তার স্ত্রীকে লক্ষীদ্বার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি কক্ষে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়। পরে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলে থানা পুলিশ ও প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তারা চলে যান।
একপর্যায়ে বিক্ষুব্ধ জনতা স্কুল শিক্ষক কালিদাস চন্দ্র রায়ের বাড়ির সীমানার টিনের বেড়াটি ভাঙচুর করেন। পরে এনিয়ে ইউপির সদস্য খাইরুল ইসলাম ও স্থানীয়দের মধ্যে ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে। পরে অমীমাংসিত থেকে যায় বিষয়টি। ভুক্তভোগী তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী চয়ন চন্দ্র রায় জানায়, দুপুরের বিরতিতে সময় আমরা সবাই ফুটবল খেলছিলাম। খেলার সময় ফুটবলটা ওদের বাড়ির সীমানার টিনের বেড়ায় লাগে। আমি আর মাসুম ওই বেড়ার কাছে ছিলাম। তখন স্কুল শিক্ষকের স্ত্রী বাড়ি থেকে বের হয়ে এসে আমাকে আর মাসুমকে বাড়ির ভিতরে নিয়ে যায়। তারপর আমাদের হাত-পা গরু বাধাঁর দড়ি দিয়ে পেয়ারা গাছের কাছে বেঁধে রাখে। স্কুলের ম্যাডাম আনতে আসলেও আমাদেরকে ছেড়ে দেয়নি। পরে আমার মা-বাবা এসে আমাদেরকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে।
লক্ষীদ্বার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক পুরঞ্জয় চন্দ্র বর্মণ বলেন, দুপুরের বিরতির সময় আমি বিদ্যালয়ের বিদ্যুৎ বিল দিতে বোদা উপজেলা শহরে যাই। তখন বিদ্যালয়ের এক সহকারী শিক্ষক আমাকে ফোন করে বলেন যে ওই দুই শিক্ষার্থীকে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। বিদ্যুৎ বিল দিয়ে এসে দেখি শিক্ষার্থীদের অভিভাবকেরা তাদেরকে ছাড়িয়ে নিয়েছে। তবে তাদের দুইজনকে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখার অভিযোগটি সত্য। বিষয়টি নিয়ে থানা পুলিশ, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তা, ইউপি চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য সহ স্থানীয়রা মিলে বসা হয়েছিল সমাধানের জন্য।
এ সময় অভিযুক্ত নারী ক্ষমাও প্রার্থনা করেন। তবে পরে একটি উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। আমাদের বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীন না থাকায় শিক্ষার্থীরা খেলাধুলা করলে বল বাইরে যায়। অনেক সময় বিদ্যালয়ের মাঠ দিয়ে গাড়ি যাতায়াত করে। এতে আমাদের খুবই সমস্যা হয়।
বলরামপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য খায়রুল ইসলাম বলেন, ওইদিন যা ঘটেছে তা খুবই দুঃখজনক এবং অমানবিক। আমরা বিষয়টি সমাধান বসলে ওই মহিলা জনসম্মুখে তাদের কাছে মাফ চায়৷ কিন্তু আরেক পক্ষ তার বিচারের দাবিতে উত্তেজিত হয়ে পড়েন। তারপর বিষয়টি ঘোলাটে হয়ে পরলে অমীমাংসিত অবস্থায় শেষ হয়৷ আমাকেও অপমানিত করা হয়েছে। শুনেছি ভুক্তভোগী মাসুম বিল্লাহর পরিবারের পক্ষ থেকে এ ঘটনায় নাকি একটা মামলা হওয়ার কথা। তবে অভিযুক্ত ওই নারীর সাথে কথা বলা সম্ভব না হলেও তার স্বামী কালমেঘ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক কালিদাস চন্দ্র রায় বলেন, ওইদিন আমার স্ত্রী অনেক অসুস্থ ছিল। শরীরে প্রচুর জ্বর থাকায় বিছানা শুয়ে ছিল। বাচ্চারা বাইরে খুব চিল্লাহাল্লা করছিল। তাঁরা আমাদের ঘরের উপরে আম গাছে ঢিল নিক্ষেপ করছিল। আর সেই ঢিল গুলো আমাদের ঘরের টিনের উপরে পড়ছিল।
বাড়ির সীমানার বেড়াতে বারবার ফুটবলটি লাগছিল। তাদেরকে জানালা দিয়ে কয়েকবার নিষেধ করে বলেছিল যে পূর্ব দিকে গিয়ে খেলতে৷ কিন্তু তাঁরা আরো বেশি দুষ্টামি করছিল। তাই তাদেরকে বাড়িতে নিয়ে এসে ভয় দেখানোর জন্যই ফাজলামো করে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখে৷ সে একটু ভুল করেছিল এজন্য সে ক্ষমাও চেয়েছে। কিন্তু উত্তেজিত জনতা আমাদের বাড়ির সীমানার বেড়া ভাঙচুর করেছে।
আটোয়ারী উপজেলা প্রাথমিক সহকারী শিক্ষা অফিসার আব্দুল মানিক চৌধুরী বলেন, আমরা খবর পেয়ে সাথে সাথে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হই। দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখার সত্যতা আমরা পেয়েছি। ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্য সহ স্থানীয়দের মাধ্যমে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করা হয়। ওই মহিলা জনসম্মুখে সবার কাছে ক্ষমাও চেয়েছিলেন। পরে একটি পক্ষ সেই বিচারকে অস্বীকার করে উত্তেজনা সৃষ্টি করে। পরে অবস্থা বেগতিক দেখে আমরা চলে আসি। তবে এঘটনায় স্কুলের কোনো গাফিলতি ছিল কিনা সেই বিষয়ে তদন্ত করে দেখা হবে বলে তিনি নিশ্চিত করেছেন।
আটোয়ারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম সরকার বলেন, আমরা ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। তবে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যরা বিষয়টি নিজেদের মধ্যে সমাধান করবেন জানালে আমরা সেখান থেকে চলে আসি। তবে ঘটনা পর থেকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির স্বাভাবিক রয়েছে।
আটোয়ারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফুজ্জামান বলেন, আমি ইউপি চেয়ারম্যান, প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে বিষয়টি জেনেছি। পরে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায় এবং স্থানীয় চেয়ারম্যানের সহযোগিতায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এখনো কোন পক্ষ লিখিতি কোন অভিযোগ দেয়নি।
বিভাগ

Top Post Ad

Hollywood Movies