জনবল সংকট, শূন্য পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ, দক্ষ জনবল তৈরি না হওয়া, রেলের জমি অবৈধ দখলে যাওয়া, কাজের ধারাবাহিকতা না রাখা, ভূমি আইনের নানা দুর্বলতাকে এর প্রধান কারণ বলে মনে করছেন শ্রমিক নেতারা।
স্বাধীনতার পর ব্রিটিশ আমলে স্থাপিত এ রেলপথটির কোনো উন্নয়ন হয়নি। বরং সংস্কারের অভাব ও জনবল সংকটে সৈয়দপুর-চিলাহাটির ৫৩ কিলোমিটার রেলপথের ৯টি স্টেশনের মধ্যে ৪টি স্টেশন বন্ধ হয়ে গেছে।
রেলওয়ে স্টেশনগুলো সংস্কারে প্রায় ৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলেও আংশিক সংস্কার কাজ হওয়ার পর তা বন্ধ রয়েছে।
এদিকে, চুরি হয়ে যাচ্ছে রেলপথের ফিসপ্লেট, ফিসবক্সসহ গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ। জড়াজীর্ণ রেলপথে ট্রেন চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের পার্বতীপুরের সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী ফজলুর রহমান জানান- জড়াজীর্ণ এ রেলপথে ৫ বছরে কমপক্ষে ৬০ বার ট্রেনের বগি লাইনচ্যুতির ঘটনা ঘটেছে।
দুর্ঘটনার কারণে কর্তৃপক্ষ চিলাহাটি থেকে দূরপাল্লার আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে।
যাত্রী সেবার মান বাড়াতে সৈয়দপুর-চিলাহাটি ৫৩ কিলোমিটার রেলপথটি সংস্কারে সরকার গত বছর ১৪৭ কোটি ৬৮ লাখ ৭৯ হাজার ২৫ টাকা বরাদ্দ দিলেও মাত্র ৬৫ কোটি ১৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা হাতে পায় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান।
গত ৬ মাস ধরে টাকার অভাবে রেলপথের সব ধরনের সংস্কার কাজ বন্ধ রয়েছে।
এ ছাড়াও সৈয়দপুর-চিলাহাটি সেকশনে ৯টি স্টেশনের আধুনিকায়ন, চিলাহাটি স্টেশনের পরিদর্শন ঘর ও ওয়াশপিট স্থাপনে পৃথক একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। এতে বরাদ্দ দেওয়া হয় প্রায় ৭ কোটি টাকা। ২০১১ সালের জুন মাসে সংস্কার কাজ শুরু হলেও এখন টাকার অভাবে কাজ বন্ধ রয়েছে।
ব্রিটিশ আমলে স্থাপিত সৈয়দপুর রেল কারখানায় রেলের কোচসহ নানা যন্ত্রাংশ তৈরি হয়ে থাকে।
রেলের পশ্চিমাঞ্চলে যাত্রী অনুপাতে ৩২৪টি ব্রডগেজ ও ৩২৩টি মিটারগেজ রেলের প্রয়োজন। নুন্যতম সচল রাখতে ২৮০টি ব্রডগেজ ও ১৬৯টি মিটারগেজ রেলের প্রয়োজন। সেখানে এখন চলছে মাত্র ১৬৪টি ব্রডগেজ ও ১১৬টি মিটারগেজ রেল।
এ কারখানায় ৩টি বিভাগে মোট ৩ হাজার ১৮৪ জন শ্রমিকের বিপরীতে কাজ করছেন মাত্র ১ হাজার ৪৬৫ জন শ্রমিক। ঘাটতি রয়েছে ৫৫ শতাংশ জনবলের।
এই অঞ্চলে রেলের প্রায় ২ হাজার একর জমির মধ্যে প্রায় ৩০ শতাংশ জমি গ্রাস করেছেন অবৈধ দখলদাররা।
সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার শ্রমিকলীগের সাধারণ সম্পাদক মোকছেদুল মোমিন জানান- প্রথমে রেলের জমি অবৈধ দখলমুক্ত করা প্রয়োজন। মালপত্র পরিবহনে ওয়াগনের ওপর নজরদারী বৃদ্ধি করা, রেলের কাঁচামাল কেনায় অন-লাইন টেন্ডার চালু করে মানসম্মত কাঁচামাল কেনার ব্যবস্থা করা ও রেলের প্রকৌশল বিভাগের কার্যক্রমের ওপর নজরদারী বাড়ানো হলে সব সেবার মান বাড়বে বলে মনে করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন- শতভাগ ওভারটাইম দিলে অতিরিক্ত কাজের ধারবাহিকতা বজায় থাকবে। কন্ট্রাক্ট বেসিসের রেলগাড়ি বাড়ানো ও বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের মাধ্যমে সিবিএ নির্বাচন হওয়া প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।