Home » » যে মসজিদ থেকে শোনা যেতো জিনের জিকির

যে মসজিদ থেকে শোনা যেতো জিনের জিকির

চিলাহাটি ওয়েব ডটকম : Wednesday, October 25, 2023 | 10/25/2023 06:30:00 PM

চিলাহাটি ওয়েব, রকমারি ডেস্ক : প্রায় দুই শতাব্দী আগের কথা। তখন লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর উপজেলা ছিল জনশূন্য বিশাল চরাঞ্চল। দু'চোখ জুড়ে অবারিত মেঘনা আর ডাকাতিয়া। একসময় এখানে আগমন ঘটে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মহান কিছু ধর্মযাজকের। সেই সময় রায়পুরের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম নেন মাওলানা আবদুল্লাহ।
ইংরেজি ১৮২৮ সালের কথা। ধার্মিক পরিবারে জন্ম নেওয়া আব্দুল্লাহ নিজ এলাকায় প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে উচ্চতর শিক্ষা লাভের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমান ভারতে। সেখানে দারুল উলুম দেওবন্দ মাদ্রাসায় ভর্তি হন।
দেওবন্দে দীর্ঘ ১৭ বছর অভিজ্ঞ ও প্রসিদ্ধ আলেমদের সান্নিধ্যে থেকে লাভ করেন দ্বীনি শিক্ষা। এরপর বাংলাদেশে ফেরার পথে কিছু সময় দিল্লিতে অবস্থান করেন। ওই সময় দিল্লির শাহী জামে মসজিদের নির্মাণশৈলী তাকে মুগ্ধ করে। বাংলাদেশে ফিরে ওই রকম একটি মসজিদ নির্মাণের স্বপ্ন দেখতে থাকেন। আর তা বাস্তবায়নের প্রবল ইচ্ছাশক্তি থেকেই নিজ এলাকায় মসজিদ নির্মাণ শুরু করেন তিনি। পরে শাহী জামে মসজিদের আদলে ১১০ ফুট লম্বা ও ৭০ ফুট প্রস্থের তিন গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করেন তিনি।
এলাকাবাসীর মতে এর নির্মাণকাল ১৮৮৮ সাল। আর মসজিদটির অন্যতম আকর্ষণ হচ্ছে এর ২০ ফুট নিচে থাকা ৩ কামরার একটি গোপন ইবাদতখানা। এখানেই নাকি ধ্যানে মগ্ন থাকতেন মাওলানা আবদুল্লাহ। ১৩ ধাপ সিঁড়ি ডিঙ্গিয়ে প্রবেশ করতে হয় এ মসজিদে। মসজিদের সামনের জরাজীর্ণ মিনারটি ২৫ ফুট উঁচু।
জনশ্রুতি আছে, মাওলানা আবদুল্লাহর কিছু শিষ্য জিন ছিল। রাতের আঁধারে মসজিদের নির্মাণকাজ ওরাই সম্পন্ন করেছে। সেই থেকেই মসজিদটি জিনের মসজিদ নামে পরিচিত। এলাকাবাসী এখনও বলেন, মসজিদের পাশের পুকুরগুলোতে জিনেরা গোসল করতো। তারা এই মসজিদে নিয়মিত নামাজ আদায়সহ জিকিরও করতো।
এমনকি গভীর রাতে জিকিরের আওয়াজ অনেক দূর থেকেও শোনা যেতো। লক্ষ্মীপুরের ঐতিহাসিক এই জিনের মসজিদটি এলাকায় ‘মৌলভী আবদুল্লাহ সাহেবের মসজিদ’ নামেও পরিচিতি রয়েছে। তবে মসজিদের সামনে সিঁড়ির কাছে লাগানো শিলালিপি থেকে জানা যায়, মসজিদটির আদি নাম ‘মসজিদ-ই-জামে আবদুল্লাহ’।
মসজিদটি লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর পৌর শহর থেকে ৮/৯ শ’ গজ পূর্বে পীর ফয়েজ উল্লাহ সড়কের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত। নান্দনিক রূপ ও অবকাঠামোর দিক থেকে এটি জেলার অন্যতম একটি পর্যটন আকর্ষণও। তবে এখন আর জিনের দেখা পায় না কেউ। কিংবা গভীর রাতে শোনা যায় না জিকিরের আওয়াজও।