Showing posts with label ফিচার. Show all posts
Showing posts with label ফিচার. Show all posts

বিরামপুরে বাংলার ঐতিহ্য বাঁশের তৈরি শিল্প হারিয়ে যাচ্ছে

চিলাহাটি ওয়েব ডটকম : Sunday, September 17, 2023 | 9/17/2023 12:00:00 PM

ইব্রাহীম মিঞা, বিরামপুর(দিনাজপুর)প্রতিনিধিঃ দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলায় মাহালি পরিবারের করুন অবস্থা, এর একমাত্র কারণ বাঁশের তৈরি শিল্পের প্রতি বর্তমানে মানুষের অনিহা। সরকারী পৃষ্ঠপোষকতার অভাব, বাঁশ চাষে বিমূখতা ও প্লাসটিকের দৌরত্ব এবং পরিকল্পিত উদ্যোগ না থাকায় দিন দিন বিলুপ্ত হতে চলেছে দিনাজপুর জেলার বিরামপুরে বাঁশের তৈরী শিল্প।
একসময়ে বাঁশ শিল্প বাঙ্গালি সংস্কৃতির একটি অংশ হিসেবে বিবেচিত হতো। সেই সময়ে বাঁশ দিয়ে ঘরের নিত্যদিনের কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন জিনিসপত্র তৈরি করা হতো। তখন এসব জিনিসপত্রের কদরও ছিল ভালো। 
সরেজমিনে বিরামপুরের হাটে গিয়ে বাঁশের তৈরী পণ্য বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানাযায়, বর্তমান পণ্যের সাথে পাল্লা দিয়ে টিকে থাকতে না পেরে মুখ থুবড়ে পড়েছে এক কালের ঐতিহ্যবাহী গ্রাম বাংলার এই শিল্প। অপরদিকে উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় অভাব-অনটনের মধ্যে দিনযাপন করছেন বাঁশের তৈরী শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট পরিবার গুলো। পরিবার নিয়ে বেঁচে থাকতে তারা এ পেশাকে ছেড়ে অন্য পেশায় যেতে বাধ্য হচ্ছেন।
ঐতিহ্যবাহী শিল্পকর্মটি দেশ থেকে বিলুপ্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। একসময় সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিভিন্ন গ্রামে বাঁশ দিয়ে চাটাই, কুলা, ডালা, ডুলি, টুকরি, ওড়া, চালুনি, মাছ রাখার খালই, মাছ ধরার চাই, দারকি, বানা, ঝুড়ি, ফুলের টব ও হাঁস-মুরগি-কবুতরের খাঁচা, বসার মোড়াসহ বিভিন্ন জিনিস তৈরি করা হতো। পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও এ কাজে সামিল হতো। এসব তৈরী পন্য হাটবাজার এমনকি বাড়ি বাড়ি ফেরি করে বিক্রি হতো। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে এ শিল্পের মূল উপকরণ বাঁশের সল্পতা, মূল্য বৃদ্ধিতে বাঁশের কারিগররা তাদের পেশা ধরে রাখতে হিমশিম খাচ্ছে। ফলে বেকার হয়ে পড়েছে গ্রামীণ কারিগররা।
বিরামপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম গুলোতে বড় বড় বাঁশ বাগান দেখা গেলেও এখন আর তেমন চোখে পড়ে না।
বিরামপুর সরকারি কলেজের পাশে মাহালি পাড়ার দিলীপ মাহালি জানান, বাঁশের তৈরির জিনিসপত্র এখন আর আগের মতো ব্যবহার হয় না। প্লাস্টিক পণ্যের উপর ঝুঁকছে মানুষ। ফলে এ শিল্প হারিয়ে যেতে বসেছে। বাঁশ শিল্পের সুদিন ফিরিয়ে আনতে সরকারি উদ্যোগ চোখে পড়ছে না।একসময় প্রতিটি বাড়িতেই বাঁশের তৈরি জিনিসপত্রের ব্যবহার ছিল। চাহিদাও ছিল ব্যাপক। রমরমা ব্যবসা ছিল সেই সময়। বর্তমানে আধুনিকতার ছোঁয়ায় প্লাস্টিক পণ্যের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে মুখ থুবড়ে পড়ছে বাংলার ঐতিহ্যবাহী এ শিল্প। ফলে এ শিল্প হারিয়ে যেতে বসেছে।
বাঁশের পন্য ক্রয় করতে আসা মহিউদ্দিন জানান, বাঁশ শিল্পের সুদিন ফিরিয়ে আনতে সরকারি উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। বরংচ পরিবেশ দুষনকারী প্লাস্টিক পন্যেকে উৎসাহিত করা হচ্ছে প্লাস্টিকের পন্য অধিক হারে ব্যবহারের ফলে নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ।পরিবেশ বান্ধব বাঁশ শিল্পে সরকারী উদ্যোগ ও পৃষ্ট পোষকতা না থাকায় একদিকে যেমন কর্মসংস্থান সংকুচিত হচ্ছে অন্য দিকে প্লাস্টিকের অবাধ ব্যহারে পরিবেশ মারাত্বক ভাবে দুষন হচ্ছে । এই পেশার সাথে জরিত দিলীপ মাহালি জানান শত প্রতিকূলতার মাঝেও পুরোনো পেশা ধরে রাখতে হয়েছে।

বেবি তরমুজ চাষে সাফল্য

চিলাহাটি ওয়েব ডটকম : Wednesday, June 14, 2023 | 6/14/2023 03:05:00 PM

আপেল বসুনীয়া, চিলাহাটি ওয়েব : বড় আকৃতির ফল তরমুজ। তরমুজের ওজনের বেশির ভাগই পানি। পানির পরিমাণ বেশি হয়ায় তরমুজ পানি শূন্যতা দূর করে। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম। নিয়মিত তরমুজ খেলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ে, চুলও সুন্দর হয়। প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘এ’ পাওয়া যায়। এ জন্যেই বাংলাদেশের কৃষক ও ভোক্তাদের মধ্যে ফলটির উৎপাদন বৃদ্ধি ও ক্রেতার সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে।
প্রচলিত অনেক প্রজাতির তরমুজের মধ্যে বারোমাসি ‘বেবি তরমুজ’ অন্যতম। মাচা পদ্ধতিতে ‘বেবি তরমুজ’ চাষ করে সাফল্য অর্জন করেছেন দেবীগঞ্জ উপজেলার টেপ্রিগঞ্জ ইউনিয়নের রামগঞ্জ বিলাসীর রাবেয়া বেগম ও তার স্বামী আব্দুস সাত্তার।
পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের অর্থায়ন এবং সেলফ-হেল্‌প এন্ড রিহেবিলিটেশন প্রোগ্রাম (শার্প) এর সার্বিক সহযোগিতায় ১৫ শতাংশ জমিতে মাচা পদ্ধতিতে বেবি তরমুজ চাষ শুরু করেন রাবেয়া।
খরচ হয়েছে ১৪ থেকে ১৭ হাজার টাকা। এ পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে প্রায় ৬০০ টির মতো যার বাজার মূল্য ৩০ হাজার টাকা। প্রাকৃতিক পরিবেশ ও প্রতিকূলতায়
এ জাতের তরমুজের কোনো ক্ষতির সম্ভাবনা না থাকায় সাফল্যের মুখ দেখেছেন তিনি।

পেকিন হাঁস পালন করে দারিদ্র্যতাকে জয় করেছে চিলাহাটির মেরিনা

চিলাহাটি ওয়েব ডটকম : Tuesday, May 30, 2023 | 5/30/2023 06:05:00 PM

আপেল বসুনীয়া, চিলাহাটি ওয়েব : একদিকে স্বামীর সংসারের ঘানি অন্য দিকে নিজের স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দিনরাত কঠোর পরিশ্রম করে সাফল্যের মুখ দেখতে শুরু করেছেন প্রত্যন্ত অঞ্চলের এক নারী উদ্যোক্তা (গৃহিনী) মেরিনা।
স্বামী-সংসারের উপর নির্ভরশীল না হয়ে নিজ পায়ে দাঁড়ানোর লক্ষ্যে হাঁস পালন শুরু করে আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠেছেন তিনি। তার এই প্রচেষ্টা দেখে বাড়তি আয়ের আশায় এলাকার অনেকেই আগ্রহী হচ্ছেন হাঁস পালনে।
বিদেশী জাতের পেকিন হাঁস পালনের খামার করে দারিদ্র্যতাকে জয় করেছেন নীলফামারী জেলার চিলাহাটির ছয় ফুটিয়া গ্রামের মেরিনা বেগম। মেরিনা দম্পতির অনেক আগে থেকেই একজন বড় খামারি হবেন এই স্বপ্ন। এই স্বপ্ন পূরণ করতে বাজার থেকে বেলজিয়াম নামে সাদা রংয়ের কয়েকটি হাঁস কিনে নিয়ে আসে। এ হাস দেখতে অনেক সুন্দর, দ্রুত বর্ধনশীল হওয়ায় ও বাজারে অনেক চাহিদা ও দাম থাকায় হাঁস পালনের স্বপ্ন আরও বেড়ে যায়। তিনি শার্পের ঋণি সদস্য। তিনি জানতে পারেন চিলাহাটি শাখায় সমন্বিত কৃষি ইউনিট এর প্রাণিসম্পদ খাতের আওতায় বিভিন্ন প্রদর্শনী বাস্তবায়ন হচ্ছে। তার স্বপ্নের কথা জানালে পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) এর অর্থায়নে ও কারিগরি সহযোগিতায় ১০০ টি পেকিন হাঁস এর বাচ্চা নিয়ে খামার শুরু করেন। তিনি শার্পের চিলাহাটি শাখা হতে হাঁস পালন বিষয়ক প্রশিক্ষণ নেন।
 পেকিন হাঁস ব্রয়লার টাইপ, দ্রুত বর্ধনশীল হওয়ায় ৬০-৭০ দিনে প্রায় ২-২.৫ কেজি ওজন আসে, যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ৫০-৫৫ হাজার টাকা। খাবার, ঔষধ ও বাচ্চার খরচ বাদে ২৫-৩০ হাজার টাকা লাভ হবে।
স্থানীয় একজন স্কুল শিক্ষক চিলাহাটি ওয়েবকে বলেন- পেকিন জাতের হাঁস দেখতে যেমন সুন্দর, তেমন অল্প সময়ে ওজন আসে, বড় হয়, অন্য হাঁসের তুলনায় বেশি লাভবান হওয়া সম্ভব। আমিও ৫০০ পেকিন জাতের হাঁস পালন করতে চাই।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা: মো: মোজাম্মেল হক চিলাহাটি ওয়েবকে বলেন- শার্পের সমন্বিত কৃষি ইউনিট প্রাণিসম্পদ খাতের মাধ্যমে পেকিন জাতের হাঁস সম্প্রসারণ হচ্ছে। পানিতে না ছেড়েও এ হাঁস পালন করা যায়। এ হাঁস দ্রুত বর্ধনশীল হওয়ায় বেশি আয় করা যায়।
মেরিনা দম্পতির স্বপ্ন, তারা ১০০০ পেকিন জাতের হাঁস এর খামার করবেন। বাচ্চার সরবরাহ বৃদ্ধির জন্য হ্যাচারী গড়ে তুলবেন।

ঐতিহাসিক ১৭ এপ্রিল ও দিনাজপুরের ঘটনাবলী

চিলাহাটি ওয়েব ডটকম : Tuesday, April 18, 2023 | 4/18/2023 05:17:00 PM

বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে ১৭ এপ্রিল এক অবিশ্বরণীয় দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে তৎকালীন কুষ্টিয়া জেলার মেহেরপুর মহকুমার বৈদ্যনাথ তলার আমবাগানে স্বাধীন বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামানুুসারে বৈদ্যনাথ তলার নাম করা হয় মুজিবনগর। আর সরকারের নাম করা হয় মুজিবনগর সরকার। পাকিস্তানিদের হামলা এবং বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তারের পর তাজউদ্দীন আহমদসহ অন্যান্য আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা প্রতিবেশী দেশ ভারতে চলে যান।
সেখানে তারা ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল স্বাধীন সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার গঠন করে। এদিনই রাত ১০টায় প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ ভাষণ প্রদান করেন। পরদিন ১১ এপ্রিল উক্ত ভাষণ আকাশবাণী কলকাতা বেতার, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র, বিবিসি ও ভয়েস অফ আমেরিকায় প্রচার করা হয়। উক্ত সরকারের শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন টাঙ্গাইলের আব্দুল মান্নান এবং স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন দিনাজপুরের অধ্যাপক ইউসুফ আলী এমএনএ।
১৭ এপ্রিল বাংলাদেশ সরকারের শপথগ্রহণকারী মন্ত্রিপরিষদে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাষ্ট্রপতি, সৈয়দ নজরুল ইসলাম উপ-রাষ্ট্রপতি, তাজউদ্দীন আহমদ প্রধানমন্ত্রী, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী, খন্দকার মোস্তাক আহমদ, এএইচএম কামরুজ্জামান, কর্নেল এমএজি ওসমানী প্রধান সেনাপতি।
এ সরকারের নেতৃত্বেই মহান মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয়। তৎকালীন সময়ে আমাদের দেশে অনেক স্থানে বিহারি রিফুজিরা ছিলো সংখ্যাগরিষ্ঠ। ওইসব স্থানে বাঙালিদের ওপর অত্যাচার নির্যাতন শুরু করে ১৯৭১ সালের প্রথম দিক থেকেই। এক্ষেত্রে পাকিস্থানি সেনা বাহিনী সর্বপ্রকার সাহায্য-সহযোগিতা করে। দিন বাড়ার সাথে সাথে বিহারিদের নির্মমতা বাড়তে থাকে। এসময় আমাদের দিনাজপুরেও বিহারীদের অত্যাচার নির্যাতন ভয়াবহ আকার ধারণ করে। আমাদের উত্তর বাংলার সৈয়দপুর ও পার্বতীপুরে প্রচুর বিহারী রিফুজি ছিলো।
দিনাজপুর শহরেও বিহারীদের সংখ্যা অনেক ছিলো। সেই সাথে বাংলার কিছু বেঈমান তাদের সাথে যোগ দেয় বাঙালিদের ওপর আক্রমণে। যার জন্য প্রথম দিকে বিহারীরা একতরফাভাবে হত্যা, মারপিট ও লুটতরাজ করতে থাকে। তাদের এই অপকর্মের কারণে আমরা বাঙালিরাও সংগঠিত হয়ে প্রতিরোধ গড়ি। এই প্রতিরোধ কর্মে তৎকালীন ইপিআর বাহিনীতে কর্মরত বাঙালি সন্তানরা আমাদের সাথে যোগাযোগ করে এবং সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়। এক পর্যায়ে আমাদের দিনাজপুরের সংগ্রামী জনতা এবং ইপিআর বাহিনী সংগঠিত হয়ে পাকিস্থানীদের প্রতিরোধ করে।
বিহারীসহ পাকিস্থানি ইপিআর ও পুলিশ বাহিনীকে দিনাজপুর থেকে বিতাড়িত করে। ফলে দিনাজপুর শহর পরিচালিত হয় আমাদের সর্বদলীয় সংগ্রাম কমিটির নেতৃত্বে। ৩১ মার্চ দিনাজপুর শহরে একটি সর্বদলীয় মিটিং হয়। মিটিংয়ের সিদ্ধান্ত মোতাবেক অধ্যাপক ইউসুফ আলী এমএনএ, গোলাম রহমান, এ এম আই জেড ইউসুফ, গুরুদাস তালুকদার প্রমুখ নেতৃবৃন্দের নামে একটি প্রচারপত্র প্রকাশিত হয় ১ এপ্রিল।
উক্ত প্রচারপত্রে বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত প্রচারিত হয়। তাতে স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার গঠনের দাবি করা হয় এবং সর্বস্তরের মানুষের কাছে মুক্তিযুদ্ধে যোগদানের জন্য আবেদন করা হয়। প্রচার পত্রটি আমরা সর্ব সাধারণের কাছে বিতরণ করি। এই প্রচার পত্রটি কলকাতায় কালন্তর পত্রিকায় ছাপানো হয়। এতে আমাদের দিনাজপুরবাসীর সংগ্রামী কার্যক্রম বিশ্ববাসীর নজরে আসে।
পাকিস্থাানিদের বিতাড়িত করে দিনাজপুর শহর আমাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসি। প্রসাশনিক কাজকর্ম সহ সবই পরিচালনা করতাম সংগ্রাম পরিষদের নেতা কর্মীরা। এরপর কয়েকদিনের জন্য কাঞ্চন ঘাট থেকে ২ মাইল পশ্চিমে ভবানিপুরে আফতাবউদ্দীন সরকারের বাড়িতে জেলা প্রশাসনের সদর দপ্তর স্থানান্তর করা হয়। জেলা প্রশাসন কর্মকর্তারা সরকারের কর্মকান্ড পরিচালনা ও নির্দেশনামা জারি করতে থাকে।
এদিকে পাঁক হানাদার বাহিনী এপ্রিল মাসের শুরুতে ত্রিমুখী আক্রমণ চালায়। এই আক্রমণে আমাদের ইপিআর বাহিনী এবং বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈনিকরা টিকতে পারেননি। এক পর্যায়ে রণভঙ্গ দিয়ে সরে যায়। এ সময় আমরাও বাধ্য হয়ে শহর থেকে সরে পড়ি এবং আমাদের অনেকেই মারাত্মকভাবে মনোবল হারিয়ে ফেলে। এদিকে পাক সেনারা সৈয়দপুর, দিনাজপুর ও পার্বতীপুরে শক্তিশালী ঘাটি করে বসে এবং বাঙালিদের ওপর ভয়াবহ অত্যাচার নির্যাতন শুরু করে। তারা হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাত চালায়।
সৈয়দপুরে প্রকৌশলী ফজলুর রহমানকে স্ত্রী ও তিন পুত্রসহ একই পরিবারের ৫ জনকে নির্মমভাবে হত্যা করে। ফজলুর রহমানের স্ত্রী হোসনে আকতারকে বেয়নেট চার্জ করে পাকিস্থানি নরপশুরা মাটিতে জীবন্ত পুতে ফেলে। ঘাতকরা চিরিরবন্দরে মাহতাব বেগকে হত্যা করে তার দেহ থেকে মাথা ছিন্ন করে সেই মাথা নিয়ে উল্লাস করে।
দিনাজপুর শহরেও প্রখ্যাত সঙ্গীত শিল্পী সতীস চন্দ্র সরকারকে প্রথমে দুই চোখ উপড়ে ফেলে। তারপর নির্যাতন করে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করে। হত্যা করে ব্যাংক কর্মকর্তা সজিরুদ্দীন, অধ্যাপক ওয়াহিদুর রহমান, প্রকৌশলী ওবায়দুল হক,ডা. এম এ জব্বার, ইসমাঈল হোসেন পল্টু, অধ্যাপক সুমঙ্গল কুন্ডু, হাবিবুর রহমান এডভোকেট, ছাত্র নেতা আসাদুল হক, শাহনেওয়াজ, অধ্যাপক সোলায়মান, আব্দুস সালাম, জহুরুদ্দীন মোক্তার, মো. আমীর আলী সহ অসংখ্য মানুষকে। এই কাজে তাদের সহযোগিতা করে বাঙালি জামাত মুসলিম লীগের নেতা কর্মীরা।
এতে আমাদের নেতা কর্মীদের মধ্য কিছুটা ভীতি ও হতাশা সৃষ্টি হয়। অনেকেই মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ে। তবে অধিকাংশ নেতা কর্মী আপোষহীন মনোভাব নিয়ে স্বাধীনতা যুদ্ধের জন্য জনমত গঠনের চেষ্টা চালিয়ে যায়। কিন্তু এই সময়ে এমন কিছু সংবাদ বিভিন্নভাবে পাই যা মনকে উৎসাহিত করে, অনুপ্রাণিত করে। যার ফলে আরো সাহসী হই। এই সময়ে এপ্রিল মাসের ১১ তারিখে একটি সংবাদ পাই যে, স্বাধীনতার জন্য একটি সরকার গঠিত হয়েছে।
আরো সংবাদ পাই, উক্ত সরকারের রাষ্ট্রপতি করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে এবং উপ-রাষ্ট্রপতি করা হয়েছে সৈয়দ নজারুল ইসলামকে এবং প্রধানমন্ত্রী করা হয়েছে তাজউদ্দীন আহমদকে। এসব সংবাদ আমাদের মনে সাহস এবং শক্তি যোগাতে থাকে। আমরা পুরোদমে মুক্তিযুদ্ধের জন্য সংগঠিত এবং প্রস্তুুত নিতে থাকি। এসময়ে এপ্রিল মাসের ১৭ তারিখে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে জানতে পারি আমাদের সরকারের শপথ গ্রহণের কথা।
শপথের সংবাদ পাওয়ার পর আমাদের মধ্যে আনন্দের ঢেউ জাগে। এতে আত্মবিশ্বাসী হই যে আমাদের বিজয় অনিবার্য। আমরা আরো সংবাদ পাই, উক্ত অনুষ্ঠানে স্বাধীনতা ঘোষণা পাঠ করেন দিনাজপুরের নেতা অধ্যাপক ইউসুফ আলী এমএনএ।
সরকার গঠনের সংবাদ এবং পাকিস্থানীদের অত্যাচার নির্যাতনে ক্ষোভে প্রতিশোধ স্পৃহায় মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য সহকর্মী ও বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে মাতৃভূমি ত্যাগ করে প্রতিবেশী দেশ ভারতে যাই। সেখানে গিয়ে সাত নম্বর সেক্টরে প্রশিক্ষণ নিয়ে স্বদেশে ফিরে আসি এবং পাক হানাদারদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধে লিপ্ত হই। বেশ কয়েকটি যুদ্ধে পাকিস্থানীদের বিরুদ্ধে সফলতা অর্জন করি। যুদ্ধের ময়দানে ৩১ শে জুলাই দিনাজপুর জেলার ফুলবাড়ি উপজেলার ভেড়াম নামক গ্রামে এক ভয়াবহ যুদ্ধে আমি মারাত্মকভাবে আহত হই এবং আমার সহযোদ্ধা বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাফফার শহীদ হন। 
পাকিস্থানীদের বিরুদ্ধে ৯ মাসের সশস্ত্র যুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর আমরা বিজয় অর্জন করি। মুজিবনগর সরকারের শপথ অনুষ্ঠানের ৫২ বছর পূর্তিতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মহান আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে বিজয় অর্জন করতে হবে।
এ জন্য বঙ্গবন্ধুর আদশের সৈনিকদের জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার বিনীতভাবে অনুরোধ জানাই।      জয় বাংলা,     জয় বঙ্গবন্ধু।
 
লেখক :-
অধ্যাপক ডা. এম আমজাদ হোসেন
 
স্বাধীনতা পদক প্রাপ্ত-২০২১ (সমাজসেবা জনসেবায়)
  
চিফ কনসালটেন্ট ও বিভাগীয় প্রধান,
অর্থোপেডিক, ট্রমা এবং রিপ্লেসমেন্ট সার্জারি বিভাগ
ল্যাব এইড স্পেশালাইজড হাসপাতাল।
 

হারিয়ে যাচ্ছে ক্যানসার-ডায়াবেটিস প্রতিরোধী তুঁতফল

চিলাহাটি ওয়েব ডটকম : Tuesday, April 11, 2023 | 4/11/2023 03:40:00 PM


আপেল বসুনীয়া,চিলাহাটি ওয়েব : বাংলাদেশ থেকে বিলুপ্ত প্রায় গাছগুলোর মধ্যে তুঁতগাছ অন্যতম। এ গাছের ফলের সঙ্গে অনেকের শৈশব স্মৃতি বিজড়িত থাকে। লাল কালো বর্ণের হালকা টক মিষ্টি এ তুঁতফল। 
উপকারী হলেও বর্তমানে এ ফলকে সংগ্রহ কিংবা সংরক্ষণের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়না। আগে গ্রামের রাস্তার দুইপাশে তুঁতফলের গাছ লাগানো হতো। রাস্তা সম্প্রসারণ কিংবা বিভিন্ন কারণে নির্বিচারে কাটা হয়েছে এসব গাছ। পরবর্তীতে আর লাগানো হয়নি উপকারী এ ফলের গাছটি। যার ফলে ক্রমশই কমে যাচ্ছে তুঁতগাছের সংখ্যা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ তুঁতফল নানা পুষ্টিগুণে ভরপুর। ডায়াবেটিস বা ক্যান্সারের মতো রোগ প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে এ তুঁতফল। বিভিন্ন শহর কিংবা গ্রাম কোথাও আর আগের মতো তুঁতগাছের দেখা মেলে না। তবে দিনাজপুর অঞ্চলে বাংলাদেশ রেশম উন্নয়ন বোর্ডের রেশম বীজাগারের অধীনে জেলা শহরের মাহুতপাড়া এলাকায় একটি বিশাল তুঁত বাগান রয়েছে।
রেশম বীজাগার সূত্রে জানা, এ বাগানে প্রায় ১১৮ একর জমিতে তুঁতগাছ ও চারা উৎপাদন করা হয়, যা রেশম গুটি উৎপাদনকারী পোকার খাদ্য সরবরাহের জন্য লাগানো হয়েছে।
রেশম পোকা এই গাছের পাতা খেয়ে গুটি উৎপাদন করে থাকে। তবে তুঁতফল সংগ্রহ কিংবা সংরক্ষণ নিয়ে রেশম বীজাগারের কোনো উদ্যোগ নেই। তুঁত বাগানে ফল খাওয়ার সময় কথা হয় দিনাজপুর উলিপুর এলাকার সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে।
তিনি জানান, তুঁত ফলের মৌসুমে একবার হলেও ফল খেতে আসি। ছোট বেলায় তো রাস্তার পাশে থাকা তুঁতগাছ থেকে অনেক তুঁতফল খেতে পারতাম। কিন্তু এখন তো আর আমাদের ওদিকে তেমন তুঁতগাছ নাই। এ ফল খাওয়ার সময় শৈশবের স্মৃতি মনে পড়ে। তাই এখানে ফল খেতে আসি। শুনেছি এ ফল খাওয়ার উপকারও আছে। মানুষের পাশাপাশি পশুপাখিরাও এ ফল খেয়ে থাকে।
সাধারণত অক্টোবর থেকে নভেম্বর মাসে এই গাছের চারা রোপণ উপযোগী। ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ মাসে এই গাছে ফল ধরে। যা পরবর্তীতে এক মাসের মধ্যে পাকতে শুরু করে। তুঁতফল প্রথম অবস্থায় সবুজ, পরে হালকা গোলাপি, লাল এবং সম্পূর্ণ পাকলে কালচে লাল রঙ ধারণ করে।
তুঁতফল বা মালবেরি ফলের আদিবাস চীনে। তবে ভারত, বাংলাদেশসহ এশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপ ও আমেরিকার বিভিন্ন স্থানে তুঁতফলের চাষ হয়ে থাকে। যা দিয়ে বিভিন্ন প্রকার জুস ও জেলি তৈরি করা হয়।
১৯৮০ সালের পরে কোনো ধরনের বেসরকারি সংস্থাকে নিবন্ধন পেতে হলে সর্বপ্রথম শর্ত ছিল তুঁতগাছ রোপণ করতে হবে।
মূলত, রেশমকে প্রাধান্য দিতেই তৎকালীন সরকারের এই পদক্ষেপ ছিল। এই নিয়মটি ছিল বিংশ শতাব্দী পর্যন্ত। কিন্তু এখন আর এই শর্ত নেই। তাই গ্রামের রাস্তাঘাটে এ গাছ আর তেমন একটা চোখে পড়ে না। ফলে দেশ থেকে প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে এই ফলের গাছ।

বিউটির ক্ষীর দেশ ছাড়িয়ে যায় বিদেশে

চিলাহাটি ওয়েব ডটকম : Tuesday, January 10, 2023 | 1/10/2023 01:43:00 PM


চিলাহাটি ওয়েব ডেস্ক : ২০০৬ সালে অষ্টম শ্রেণিতে থাকতেই বিয়ে হয় বিউটির। কম বয়সে বিয়ে হওয়ার পরও হাল ছাড়েননি তিনি। সিদ্ধান্ত নেন, ব্যবসা করবেন। প্রথমেই নেমে পড়েন স্বামীর ক্ষীরের ব্যবসায় সহযোগিতা করতে। পরে প্রতিবেশী নারীদের নিয়ে গড়ে তোলেন একটি সমিতি। ঋণ নিয়ে ক্ষীর বানিয়ে তিনি আজ সফল। মাসে আয় করছেন ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা। ২০১২ সালে পল্লী উন্নয়ন বোর্ড (বিআরডিবি) থেকে ১৫ হাজার টাকা ঋণ নেন বিউটি। তারপর পরিধি বাড়ান ক্ষীর ব্যবসার। শুরুতেই ক্ষীর বানিয়ে দেখেন লাভের মুখ। একসময় ভালো আয় হতে থাকে। এতে ফেরে সংসারের সচ্ছলতা। ক্ষীরের ব্যবসা করে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি বিউটি কুড়িয়েছেন সুনাম ও পুরস্কার। উপজেলার সেরা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা হিসেবে পেয়েছেন জাতীয় পল্লী উন্নয়ন পদক। পেয়েছেন মহিলা অধিদপ্তর থেকে জয়িতা পুরস্কার। সরেজমিনে বিউটির বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, লাকড়ির চুলায় বড় একটি কড়াইয়ে দুধ গরম করছিলেন বিউটি ও কয়েকজন নারী শ্রমিক। তৈরি করা ক্ষীর বাজারজাতের জন্য মাটির সানকিতে রাখছেন। আবার পাঠিয়ে দিচ্ছেন স্থানীয় বাজারে তাদের ‘আনন্দ দধি-ক্ষীর হাউস’ দোকানে। প্রবাসেও যায় তার বানানো ক্ষীর। দূরদূরান্তের মানুষ তার ক্ষীর কিনে নিয়ে পাঠিয়ে দেন প্রবাসে থাকা স্বজনদের কাছে। তিনি জানান, তার পৈত্রিক বাড়ি চাঁদপুর জেলা শহরের পুরাণবাজার এলাকায়। ছোটবেলা থেকে অসচ্ছল পরিবারে বেড়ে ওঠেন। ভাই-বোনের মধ্যে সবার ছোট ছিলেন তিনি। তার শৈশব কেটেছে অভাবে। ইচ্ছে ছিল পড়ালেখা করে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার। কিন্তু আর্থিক সমস্যায় অষ্টম শ্রেণির পর আর পড়তে পারেননি। কিন্তু বিয়ের পর তিনি নিজেকে শেষ হতে দেননি। সব সময় তার মনে উদ্যোক্তা হওয়ার বাসনা ছিল। উদ্যোক্তা বিউটি বলেন, কয়েক দফা ঋণ নিয়ে ক্ষীরের ব্যবসার পরিধি বাড়ান। এখন প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪০ কেজি ক্ষীর বানিয়ে বিক্রি করেন। মাসে গড় বিক্রি তিন লক্ষাধিক টাকা। লাভ থাকে ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা। প্রতি কেজি ক্ষীর বানাতে ৩৫০ টাকা খরচ হয়। বিক্রি করেন ৪০০ টাকায়। ক্ষীরের ব্যবসা করে সাত শতক জমি কিনেছেন। সেখানে বাড়ি করবেন। সন্তানকে বানাবেন উচ্চশিক্ষিত। তার বানানো ক্ষীর যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যে, এ বিষয়ে বিউটি বলেন, প্রবাসে থাকা মানুষ বাড়িতে এলে আমাদের কাছে আসেন ক্ষীর কিনতে। তারা নিজেরা কিনে খান। আবার আত্মীয়স্বজনের জন্য নিয়ে যান। ছুটি শেষে প্রবাসে ফেরার সময় এসে বেশি করে কিনে নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে নিয়ে যান। কারণ, প্রবাস থাকা আত্মীয়রা তাদের কাছে অর্ডার পাঠান। স্বামী উৎপল কুমার ঘোষ জানান, প্রথমে আমি একা ক্ষীরের ব্যবসা শুরু করি। পরে আমার স্ত্রীর সহযোগিতায় আমরা ব্যবসা বড় করেছি। গুণমান ঠিক রেখে ক্ষীরের ব্যবসা করে আজ সাফল্য অর্জন করতে পেরেছি আমরা। চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলার ঐতিহ্যবাহী দুগ্ধজাত মিষ্টান্ন ক্ষীরের ইতিহাস শত বছরের। এখানকার ক্ষীর গুণেমানে সেরা এবং এর সুনাম ও ঐতিহ্য দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও আছে। মতলবের ক্ষীর চাঁদপুর, কুমিল্লা, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় পৌঁছে যাচ্ছে। সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকেও প্রবাসীরাও লোক মারফত ক্ষীরের ফরমাশ (অর্ডার) পাঠান এ উপজেলায়। জানা গেছে, ইংরেজ শাসনামল থেকে শুরু করে এখনো এই ক্ষীরের চাহিদা এতটুকুও কমেনি। আগের তুলনায় এখন চাহিদা অনেক বেশি। উপজেলা প্রশাসন সম্পাদিত ‘মতলবের ইতিবৃত্ত’ বইয়ে এই ক্ষীরের উল্লেখ আছে। ২০১৩ সালে প্রকাশিত ওই বইয়ের ৪৪ নম্বর পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে, ‘মতলবের ক্ষীর খুবই প্রসিদ্ধ। সারা দেশে ক্ষীরের ব্যাপক চাহিদা ও কদরের কারণে এইখান অনেক হিন্দু পরিবার ক্ষীর তৈরি কাজে ব্যস্ত রয়েছে। বিউটির বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলে মতলব বাজরের রাস্তার পাশে নির্মল ঘোষের দেখা মেলে তার ছোট্ট পান-সিগারেটের দোকানে। সেখান কথা হয় তার সঙ্গে। এ ব্যবসার পাশাপাশি নির্মল দোকানে বিক্রি করেন ক্ষীরসহ অন্যান্য মিষ্টান্নসামগ্রী।পরে তার ছেলে মোহন ঘোষ এই প্রতিবেদককে নিয়ে যান দাসপাড়া তাদের বাড়িতে। তাদের পরিবারে এক সদস্য একদিন ক্ষীরের দোকানে গিয়ে ২০০ টাকা দিয়ে ক্ষীর কিনতে চান। কিন্তু দোকানদার ২০০ টাকায় ক্ষীর বিক্রি করেননি। পরে ওই ক্ষোভ থেকে তারা নিজেরাই বাড়িতে শুরু করেন ক্ষীরের ব্যবসা। মোহন ঘোষ বলেন, আমাদের পূর্বপুরুষরা ক্ষীরের ব্যবসা করত। এখন আমার বাবা এই ব্যবসা ধরে রেখেছেন। আমি ও আমার মা-দাদি ক্ষীর তৈরিতে বাবাকে সাহায্য করি। আমরা নিজেরাই বাজারজাত করি। আবার রাস্তার পাশে ফুতপাতে বসে ক্ষীর বিক্রি করি। আমাদের দৈনিক ২০ থেকে ৩০ কেজি ক্ষীর বিক্রি হয়। তিনি আরও বলেন, নতুন ক্রেতা যখন আসে, তারা চান না আমাদের কাছ থেকে ক্ষীর কিনতে। আমি বলি, ভাই, রাস্তার ক্ষীরও ভালো হয়। একটু বিশ্বাস রাখুন। আমরা মাটির চুলায় ক্ষীর তৈরি করি। আমরা খুচরা বাজার থেকে দুধ কিনে থাকি তা বানাই। আয় সম্পর্কে ঘোষ বাবু বলেন, মাসে আমাদের ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা আয় হয়। তবে বিশেষ দিন উপলক্ষে ৫০ থেকে ৬০ হাজার আয় হয়। এখন প্রবাসীরাও আমাদের কাছ থেকে ক্ষীর কিনে নেন। ক্ষীর ফ্রিজে বেশি দিন থাকলে স্বাদ নষ্ট হয়ে যায় বলেও সতর্ক করে দেন ঘোষ। স্থানীয়রা জানান, বিক্রেতারা প্রতিদিন সকালে গৃহস্থের কাছ থেকে খাঁটি দুধ সংগ্রহ করেন। অতঃপর সংগৃহীত দুধ বড় পাত্রে ঢেলে চুলায় একটানা দুই ঘণ্টা জ¦াল দেন এবং পাশাপশি তিনটি কাঠি দিয়ে পাত্রের তলদেশে বিচক্ষণতার সঙ্গে নাড়তে থাকেন, যেন পাতিলের তলায় পোড়া না লেগে যায়। অতঃপর দুধের রং পরিবর্তন হয়ে ক্ষীরে পরিণত হয়ে এলে তা মাটির ছোট ছোট পাত্রে আধা কেজি ও এক কেজি পরিমাপ করে আলাদাভাবে রাখেন। বিক্রির উপযুক্ত করার জন্য পাত্রের ক্ষীর কিছুক্ষণ ফ্যানের বাতাসে ঠান্ডা করে নেন। এ এলাকায় দেখে হয় চট্টগ্রাম থেকে আসা ক্ষীর ক্রেতা সোলাইমানের সঙ্গে। তিনি জানান, মতলবের ক্ষীরের অনেক সুনাম শুনি। এটি খুবই সুস্বাদু। ভালো মানের। আমার বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়স্বজনের জন্য নিচ্ছি। আমাদের আত্মীয় স্বজনের বিদেশে পাঠাই। স্থানীয় এক ক্রেতা বলেন, আমি এই ক্ষীর আগেও খেয়েছি। পরিবারের জন্য নিয়েছি। আমার অনেক বন্ধুবান্ধব বিদেশে থাকে। তাদের জন্য অনেক ক্ষীর পাঠিয়েছি। আমার জানামতে এখানকার ক্ষীর প্রধানমন্ত্রীও খেয়েছেন। মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীরা তো সব সময় নিয়ে খান। বোঝা গেল শুধু বিউটি বা নির্মল ও মোহন ঘোষরাই নন, ঘোষপাড়া এলাকার সুনীল ঘোষ, মিলন ঘোষ, গান্ধী ঘোষ, অনিক কুমার ঘোষ, উৎপল ঘোষ, নিবাস চন্দ্র ঘোষ, উত্তম ঘোষ এবং দাসপাড়ার মাখনলাল ঘোষ, নির্মল ঘোষসহ কয়েকটি পরিবার ক্ষীরের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।

ডোমারে পরচুলা তৈরী করে স্বাবলম্বী হাজারো নারী

চিলাহাটি ওয়েব ডটকম : Thursday, January 5, 2023 | 1/05/2023 12:25:00 PM

আপেল বসুনীয়া, চিলাহাটি ওয়েব : আগে ক্ষেত খামারে শ্রমিকের কাজ করতাম। পরচুলা তৈরীর কাজের কথা শুনে সেখানে প্রশিক্ষণ নিয়ে পরচুলা তৈরীর কাজ করি। রোদ বৃষ্টিতে ভিজে মাঠে শ্রমিকের কাজ করতে খুবই কষ্ট হয়। এখন ঘরে বসে কাজ করছি। তিনি আরো বলেন, নতুন শিখেছি তাই মজুরি কম পাচ্ছি। কিন্তু তাতেও ভালো কারন মাঠে কাজ করতে অনেক সমস্যা হয়। তাছাড়া মাঠে প্রতিদিন কাজ পাওয়া যেতোনা। বেশির ভাগ দিন বসে থাকতে হয়। এখন প্রতিদিন কাজ করতে পারছি। এতে তিনি অনেকটাই স্বাচ্ছন্দবোধ করছেন। কথাগুলো চিলাহাটি ওয়েব ডটকমকে বলেন পরচুলা তৈরী করতে আসা বামুনিয়া ইউনিয়নের বারবিশা বামুনিয়া গ্রামের মানু রায়ের স্ত্রী শারতী রানী(২৫)। তার মতো অনেকে এসেছেন পরচুলা তৈরীর কাজে। পরচুলা তৈরী করে নীলফামারীর ডোমারে স্বাবলম্বী হয়েছেন হাজারো বেকার নারী।
নীলফামারী জেলায় পরচুলা তৈরীর কাজে সম্পৃক্ত রয়েছেন লক্ষাধিক নারী। বামুনিয়া ইউনিয়নের সাগর মেম্বারের মোড়ে গ্রামের ওই নারীদের পরচুলা তৈরীতে সহায়তা করছেন সুবর্ণ ট্রেডার্স প্রসেসিং নামের একটি প্রতিষ্ঠান। শুধু এই একটি প্রতিষ্ঠান থেকে জেলার ডোমার,ডিমলা, জলঢাকা ও নীলফামারী সদর উপজেলায় ১৪টি ইউনিটে কাজ করছেন ৪হাজার মহিলা। পরচুলা তৈরী করে বেকার নারীর কর্মসংস্থান হয়েছে এসব নারীর। নারীদের তৈরী করা এসব পরচুলা রপ্তানি করা হচ্ছে চীনসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে।
শারতী রানীর মতো পরচুলা তৈরী করতে আসা অপর নারী শৈবা রানী, লক্ষীরানী, পবিত্রা রানী জানায়, আগে বাড়িতে বসে ঘর সংসারের কাজ করতাম এখন পরচুলা তৈরী করে বাড়তি আয় করছি। এতে সংসারের কিছুটা হলেও সহায়তা হচ্ছে। বামুনিয়া ইউনিয়নের সাবেক মেম্বার সাগর চন্দ্র রায় চিলাহাটি ওয়েব ডটকমকে বলেন, আমার একটি গোডাউন ঘরে ১০০জন মহিলাকে নিয়ে একটি ইউনিটে পরচুলা তৈরীর কাজ চলছে। এলাকার অসহায় মহিলারা সেখানে কাজ করে স্বাবলম্বী হচ্ছে। এতেকরে কিছুটা হলেও এলাকাবাসীর আর্থসামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে।
সুবর্ণ ট্রেডার্স হেয়ার প্রসেসিং পরচুলা তৈরীর ওই ইউনিট পরিচালনাকারী মিলন চন্দ্র রায় জানান, ৪টি উপজেলায় ১৪টি ইউনিটের মাধ্যমে কাজ করছেন ৪হাজার মহিলা। আমি নীলফামারী উত্তরা ইপিজেডে এভার গ্রীন কোম্পানিতে কাজ করতাম। ২০২১ সালে চীনা কোম্পানির সাথে আলোচনা করে পরচুলা তৈরীর কাজ শুরু করি। এসব ইউনিটে কয়েক ধরনের ক্যাপ তৈরী করা হয়।
এসব ক্যাপ তৈরীতে একজন নারী প্রকারভেদে ৩০০থেকে ১২০০টাকা মজুরি পেয়ে থাকে। তিনি আরো জানান অনেক নারী এখান থেকে চুল এবং অন্যান্য সরঞ্জাম নিয়ে নিজ বাড়িতে বসেসাংসারিক কাজের ফাঁকে পরচুলা তৈরী করে অর্থ উপার্জন করছে।

হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী ঢেঁকি

চিলাহাটি ওয়েব ডটকম : Thursday, December 22, 2022 | 12/22/2022 04:33:00 PM

আপেল বসুনীয়া,চিলাহাটি ওয়েব : “ও বউ ধান বানে রে ঢেঁকিতে পা দিয়া, ঢেঁকি নাচে বউ নাচে হেলিয়া দুলিয়া , ও বউ ধান বানে রে” গ্রামীণ এই ঐতিহ্যবাহী লোকজ গানটি আর তেমন শোনা যায় না। চোখে পড়ে না আর ঢেঁকিতে পাড় দিতে দিতে গ্রামিণ বউদের এই গান গাওয়ার দৃশ্য। কালের পরিবর্তনে গ্রাম- বাংলা থেকে এই ঐতিহ্যবাহী ঢেঁকি আজ বিলুপ্তির পথে।
আধুনিকতার ছোঁয়ায় দিন দিন ঢেঁকির কদর গ্রাম-বাংলার কৃষকদের বাড়ি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। হাতে গোনা কিছু কৃষকদের বাড়িতে ঐতিহ্যবাহী ঢেঁকি এখনও চোখে পড়ে। কিন্তু তাও জরাজির্ণ হয়ে আছে। চলছে না এর কোন কার্যক্রম। ঢেঁকিতে চাল ছাটার গুনাবলীর মধ্যে অনেক গুন আছে। ঢেঁকিতে ছাটা চাল পুষ্টিতে ভরা থাকে। চালের উপর যে লাল আবরণ থাকে তা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারি। ঢেঁকিতে পাড় দিলে এক ধরণের কায়িক পরিশ্রম হয় যা স্বাস্থের্য জন্য ব্যয়ামের একটি অংশ এবং উপকারি। 
বর্তমান সময়ে মানুষ ধান, চালের আঁটা ও চিড়া ভাঙানোর জন্য বৈদ্যুতিক মিল হওয়ায় কৃষকরা সহজেই ধান, আঁটা ও চিড়া কম সময়ে ও কম খরচে ভাঙাতে পারছেন। তাই এখন আর বাড়িতে ঐতিহ্যবাহী ঢেঁকি রাখছেন না কৃষকরা। তারা বৈদ্যুতিক মিলের উপড় নির্ভর হয়ে পড়ছে। ঢেঁকিতে বানা ধানের চাউলের ভাত, খিচুড়ী , খিড় ও চিড়া স্বাদ ও ভিটামিনে ভরপুর।
আগের দিনে কৃষকদের বাড়ির বউদের অনেক কষ্ট করে ধান ঢেঁকিতে পাড় দিয়ে ভাঙানোর পর চাল ও চিড়া তৈরী হত। ধান ভাঙানোর বৈদ্যুতিক মিল হওয়াই কৃষকদের বাড়ির বউদের আর কষ্ট করে ঢেঁকিতে পাড় দিয়ে ধান ভেঙে চাল, আঁটা ও চিড়া তৈরী করা লাগছে না। এই ঢেঁকি নিয়ে অনেক কবি, সাহিত্যিকরা যুগে যুগে অনেক কবিতাও লিখেছেন। তাই ঢেঁকির গুণ সম্পর্কে প্রবাদ বাক্য রচনা করেছেন গুণিজনেরা যে, ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান বানে। বর্তমানে গ্রামের দু’একটি কৃষকদের বাড়িতে হারিয়ে যাওয়া এই ঐতিহ্যবাহী ঢেঁকি দেখা যায়। কিছু দিন পরে গ্রামের কৃষকদের বাড়িতে ঐতিহ্যবাহী ঢেঁকি আর দেখা যাবে না। কালের আবর্তে হারিয়ে যাবে গ্রাম- বাংলার শত বছরের এই ঐতিহ্যবাহী ঢেঁকি। এমন এক সময় আসবে যখন আগামী প্রজন্মের কাছে এই ঢেঁকি শুধুই কাল্পনিক জগতের এক কল্পকাহিনীর গল্প মনে হবে।
নীলফামারী জেলার চিলাহাটির খগোবালা এই ঢেঁকি সম্পর্কে চিলাহাটি ওয়েব ডটকম কে বলেন, তিনি এখনও এই ঐতিহ্যবাহী ঢেঁকি ধরে রেখেছেন। তিনি প্রায় ১২ বছর যাবৎ এই ঢেঁকিতে ধান, আঁটা ও চিড়া ভেঙে আসছেন। এলাকার বিভিন্ন লোকেরা আঁটা ভেঙে নেওয়ার জন্য তার কাছে আসে। এর বিনিময়ে তিনি প্রতি কেজি চালের আঁটার জন্য ৭-৮ টাকা করে নেন। এতে তার মাসে ভালো টাকা আয় হয় এবং নিজেদেরও প্রয়োজন পূরণ হয়।
ঢেঁকির গুন সম্পর্কে তিনি বলেন, ঢেঁকিতে পাড় দিলে শরীরের ব্যায়াম হয়, ঢেঁকিতে ছাঁটা চাল প্রচুর ভিটামিন সমৃদ্ধ। তবে বৈদ্যুতিক মিল হওয়াতে লোকেরা আর আগের মত তার কাছে আসে না।হাতের কাছে বিভিন্ন যন্ত্র ও প্রযুক্তির ব্যবহার সহজলভ্য হওয়ায় ঢেঁকির মতো ঐতিহ্যবাহী অনেক কিছুই এখন হারিয়ে যাচ্ছে। এক সময় হয়তো প্রাচীন এই যন্ত্রগুলির দেখা মিলবে কেবল যাদুঘরে।

হারিয়ে যাচ্ছে লাঙল দিয়ে জমি চাষ

চিলাহাটি ওয়েব ডটকম : Monday, December 19, 2022 | 12/19/2022 01:12:00 PM

আপেল বসুনীয়া,চিলাহাটি ওয়েব : চাষের ঐতিহ্যবাহী একটি চিরায়ত পদ্ধতি ছিলো গরু-মহিষ, জোয়াল ও লাঙল দিয়ে জমি চাষ। এটি ছিলো অনেক উপকারী এক পদ্ধতি। কারণ লাঙলের ফলা জমির অনেক গভীর অংশ পর্যন্ত আলগা করতো। গরুর পায়ের কারণে জমিতে কাদা হতো অনেক এবং গরুর গোবর জমিতে পড়ে জমির উর্বরতা শক্তি অনেক বৃদ্ধি করতো।
কিন্তু কালের বিবর্তনে আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার এই ঐতিহ্যটি।  দেশের উত্তর জনপদের খাদ্য ভা-ার হিসেবে খ্যাত নীলফামারীর চিলাহাটিতে লাঙল দিয়ে জমি চাষ এখন আর চোখে পড়ে না। আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির ছোঁয়াই হারিয়ে গেছে এই চিরচেনা দৃশ্যটি। একসময় দেখা যেত সেই কাক ডাকা ভোরে কৃষকরা গরু ও কাঁধে লাঙল-জোয়াল নিয়ে বেরিয়ে পড়তো মাঠের জমিতে হালচাষ করার জন্য। বর্তমানে আধুনিকতার স্পর্শে ও বিজ্ঞানের নতুন নতুন আবিষ্কারের ফলে কৃষকদের জীবনে এসেছে নানা পরিবর্তন।  আর সেই পরিবর্তনের ছোঁয়াও লেগেছে কৃষিতে। তাই সকালে কাঁধে লাঙল-জোয়াল নিয়ে মাঠে যেতে আর দেখা যায় না কৃষকদের।
কৃষি প্রধান বাংলাদেশের হাজার বছরের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে গরু, লাঙল ও জোয়াল। আধুনিকতার ছোঁয়ায় হালচাষের পরিবর্তে এখন ট্রাক্টর অথবা পাওয়ার টিলার দিয়ে অল্প সময়ে জমি চাষ করা হয়।  এক সময় দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে কৃষক গরু, মহিষ পালন করত হালচাষ করার জন্য। হালের গরু দিয়ে দরিদ্র মানুষ জমি চাষ করে ফিরে পেত তাদের পরিবারের সচ্ছলতা। কিন্তু বর্তমানে অল্প সময়ের মধ্যেই পাওয়ার টিলারসহ আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে চালাচ্ছে জমি চাষাবাদ। তাই কৃষকরা এখন পেশা বদলি করে অন্য পেশায় ঝুঁকছেন। 

হারিয়ে যাচ্ছে গরিবের এসি মাটির ঘর

চিলাহাটি ওয়েব ডটকম : Friday, December 16, 2022 | 12/16/2022 07:56:00 PM

আপেল বসুনীয়া, চিলাহাটি ওয়েব : বেশিদিনের কথা নয়, প্রতিটি গ্রামে নজরে পড়ত মাটির ঘর। যাকে গ্রামের মানুষ বলে গরিবের এসি ঘর। ঝড়-বৃষ্টি থেকে বাঁচার পাশাপাশি অত্যন্ত ঠাণ্ডায় বসবাস-উপযোগী এ মাটির ঘর আর নজরে পড়ে না। গ্রামে আর্থ-সামাজিক পরিবর্তন এসেছে। বিভিন্ন এনজিও’র ঋণ ও কায়িক পরিশ্রমে গরিব পরিবারগুলো এখন তৈরি করছে ছোট্ট আকারে দালান। তার ওপর তুলছেন টিনের চালা।
নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর উপজেলার কামারপুকুর, বোতলাগাড়ী, খাতামধুপুর, কাশিরাম বেলপুকুরে বাঙ্গালীপুর ইউনিয়নের প্রায় প্রতিটি গ্রামে এ মাটির ঘর চোখে পড়ত। যেখানে লালমাটি বা চিপটে মাটি সহজলভ্য, সেখানে এ ধরনের ঘর বেশি তৈরি করা হতো। এ মাটির ঘরকে স্থানীয়ভাবে কোঠার ঘর বলে থাকেন অনেকেই। ঘরের গাঁথুনি দেয়ার সময় কারিগররা মাটিকে ভালোভাবে গুঁড়ো করে তাতে ছোট ছোট করে পাটের আঁশ বা খড় কেটে দেয়া হতো। এতে মাটি দীর্ঘস্থায়ী আঁকড়ে ধরে থাকত। কারিগররা একটি ঘরের চারদিকে এক স্তরে ২ ফুট বাইট মাটি দিয়ে একদিন বা দু’দিন রোদে শুকিয়ে আবার গাঁথুনি শুরু করতেন। এভাবে একটি ঘর তৈরি করতে প্রায় এক মাস সময় লাগত।
এ ঘর তৈরি করার উপযোগী সময় হচ্ছে শীতকাল বা শুষ্ক মৌসুম। এমন মাটির ঘর তৈরি করে ছাদ হিসেবে বাঁশ ও তার উপরে অন্তত এক ফুট মাটির প্রলেপ দেয়া হতো। এসব কারণে এমন ঘর সবসময় ঠাণ্ডা থাকে। এমনকি আগুন লাগলেও ঘরের ভেতরের কোনো আসবাবপত্র পুড়ে যায় না। ঘরের ভেতরে ও বাইরে আকর্ষণীয় করার জন্য গ্রামীণ আল্পনায় গৃহবধূরা কাদা-পানি দিয়ে প্রলেপ দিতেন। আবার মাটির ঘরে সিমেন্টের প্রলেপ দিয়ে আরও মজবুত করে তাতে রং বা চুন লাগিয়ে দেয়া হতো। দূর থেকে দেখে মনে হতো এটি একটি পাকা বাড়ি।
পরিতাপের বিষয়, কালের আবর্তনে এমন মাটির ঘর আর কেউ নতুন করে তুলছেন না। হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামীণ এ ঐতিহ্যবাহী মাটির ঘর। বর্তমানে আয়ের উত্স বৃদ্ধি পাওয়ায় এ অঞ্চলে ইট, বালু সহজলভ্য হওয়ায় এবং আর্থ-সামাজিক অবস্থার পরিবর্তন হওয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে মাটির ঘর।

বিলুপ্তির পথে চিলাহাটির বাঁশ-বেত শিল্প

চিলাহাটি ওয়েব ডটকম : Tuesday, December 13, 2022 | 12/13/2022 01:34:00 AM


আপেল বসুনীয়া,চিলাহাটি ওয়েব : প্রয়োজনীয় রক্ষণাবেক্ষণ, পরিচর্যা, রোপণ ও সঠিক পরিকল্পনার অভাবে নীলফামারী জেলার চিলাহাটির বাঁশ ও বেত ঝাড় উজাড় হয়ে যাচ্ছে। ফলে এলাকা থেকে বাঁশ-বেতনির্ভর শিল্প হারিয়ে যেতে বসেছে।
একসময় গ্রামের হাটবাজারগুলোতে নানান ধরনের বাঁশের তৈরি শিল্প বিক্রি হতো। যেমন কুলা, ডালা, টুপরি, কুড়ি চালুন, তালাই টেমাই, জোলঙ্গাসহ মাছ ধরার বিভিন্ন সামগ্রী, মই, খেলনা ও বিভিন্ন শৌখিন দ্রব্যসামগ্রী।
এছাড়া এলাকায় কাঁচা ঘর তৈরিতে বাঁশের খুঁটি, বেড়া, ঘরের দরজা ইত্যাদি উপকরণ দরকার হয়। আর বেত দিয়ে তৈরি হয় ঢাকি, কাটা, দাঁড়িপাল্লা, ছোট ছেলেমেয়েদের বিভিন্ন খেলনাসামগ্রী। আধুনিকের ছোঁয়ায় এ শিল্প এখন বিলুপ্তর পথে। গ্রামের হাটবাজারগুলোতে বাঁশের তৈরি শিল্প আগের মতো চোখে আর পড়ে না। এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত থাকা পরিবারগুলো এখন মানবেতর জীবনযাপন করছে।
চিলাহাটি বাজারে বাঁশের তৈরি শিল্প বিক্রি কালে কেতকীবাড়ী ইউনিয়নের বোতলগঞ্জ গ্রামের শ্যামল হাজেরা চিলাহাটি ওয়েব ডটকমকে বলেন, বাপ-দাদার আমলের এই পেশাকে বুকে আঁকড়ে ধরে রেখেছি। দেড় শতক খাস জমির ওপর বসতবাড়ি তৈরি করে পরিবারের আটজন সদস্য রাত-দিন খেটে যা তৈরি করি হাটবাজারে সে তুলনায় বিক্রি নেই। সরকারি ভাবে কোনো সাহায্যে সহযোগিতাও পাচ্ছি না।
তিনি আরও বলেন, অনেক দুঃখ কষ্টে দিন কাটছে আমাদের। অভাবের তাড়নায় গোত্রের অনেকেই অন্য পেশায় চলে গেছে। উপযুক্ত কাজ এবং অভিজ্ঞতার অভাবে আমরা অন্য পেশায় যেতে পারিনি।
ওই গোত্রের হরেন হাজেরা চিলাহাটি ওয়েব ডটকমকে বলেন, পেশা ছেড়ে দিয়ে এখন অটোভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছি। আমাদের গোত্রের ২/৩টি পরিবার ছাড়া সবাই পেশা পরিবর্তন করেছে। এক সময় বিস্তীর্ণ পল্লীতে বাঁশ ও বেত ঝাড় থাকায় বাঁশের তৈরি শিল্পের প্রচুর ব্যবহার ছিল।
এই বাঁশ-বেতের ওপর নির্ভর করে প্রত্যন্ত গ্রামগঞ্জে বাঁশের তৈরি শিল্পরও প্রচুর চাহিদা ছিল। কিন্তু আগের মতো বাঁশ ঝাড় বেত ঝাড় এখন আর চোখে পড়ে না। এর দুষ্প্রাপ্যতার কারণে একদিকে যেমন গ্রামীণ অর্থনীতির চালিকা শক্তি কুটির শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তেমনি নিঃস্ব হচ্ছে সংশ্লিষ্ট পেশাজীবী পরিবারগুলো।

হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামীণ নারীদের হাড়ি-পাতিলে ধান সিদ্ধ

চিলাহাটি ওয়েব ডটকম : Saturday, December 10, 2022 | 12/10/2022 04:50:00 PM

আপেল বসুনীয়া,চিলাহাটি ওয়েব : প্রযুক্তির ছোঁয়ায় বদলে যাচ্ছে মানুষের জীবন যাত্রা। এতে কালের বিবর্তনে গ্রামীণ নারীদের হাড়ি-পাতিলে ধান সিদ্ধ প্রথা হারিয়ে যাচ্ছে। আবহমান বাংলার চিরায়িত ঐতিহ্য হাড়ি-পাতিলের ধানসিদ্ধ, শুকানো দৃশ্য আর চোখে পড়ে না।
গেল কয়েক বছর আগে নীলফামারীর ছয়টি উপজেলার গ্রামাঞ্চলে প্রায় প্রতিটি বাড়িতে দেখা যেত ধানসিদ্ধ করা পাতিল। যা ছিল মহিলাদের কাছে প্রয়োজনীয় একটি গৃহস্থালি উপকরণ। সিদ্ধ করার আগে মাটির বড় হাড়ি, হাউদা বা চারিতে সকালে ধান ভিজিয়ে রাখতো। ধান সিদ্ধ করার জন্য বানানো হতো মাটির চৌকা, তিন কোন বিশিষ্ট ইটের টিয়া। এর ওপরে বসানো হতো ২০ থেকে ৪০কেজি পরিমাপের পিতল কিংবা সিলভারের পাতিল। চুলায় আগুন জ্বালানো হত তুষ দিয়ে। যখনই চুলার মধ্যে ছিটিয়ে দেয়া হয় তুষ তখনই দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠতো আগুন। সে আগুনে রাঙা হয়ে ওঠতো গাঁয়ের কিষাণ বধূর মুখ।
শীত আর কুয়াশা যতই তীব্র হোক, গভীর কিংবা শেষ রাতে শুরু হত ধান সিদ্ধ করার পালা। যা চলত প্রায় দুপুর পর্যন্ত। পরে সিদ্ধ করা ধান মেলে দেয়া হত রোদে। খানিক পরপর ঝাড়ু-বারুন দিয়ে বাইন্না (নেড়ে) দেয়া হত। ২/১দিনেই শুকানো ধানে হত চাল। যা কৃষকের সারা বছরের খোরাকি (খাবার)। ধান ভিজানো, সিদ্ধ এবং শুকানোর এ প্রক্রিয়া গ্রামীণ জীবনের এক অনবদ্য চিত্রকল্প বহন করত। বর্তমানে আধুনিকতার ছোঁয়ায় বিজ্ঞান আর তথ্য প্রযুক্তি যন্ত্রপাতি কলকারখানার কারণে গ্রামের কৃষাণ-কৃষাণী বধুরা আর পাতিলে ধানসিদ্ধ করে না। এতে চিরায়ত গ্রাম- বাংলার অনবদ্য দৃশ্য হারিয়ে যাচ্ছে। 
সরেজমিনে জেলার চিলাহাটির চান্দখানার বেশ কিছু এলাকায় ধান সিদ্ধ-শুকানোর এমন চিত্র দেখা মেলে। এসময় ধানসিদ্ধ কাজে নিয়োজিত গৃহবধূ মোসলেমা বেগম,ধৌলি চিলাহাটি ওয়েব ডটকমকে জানান, আগে প্রতিটি গৃহস্থের বাড়ীতে ফসল কাটার মৌসুমে ধান কাটা থেকে শুরু করে সিদ্ধ-শুকানো ও নবান্নের উৎসব চলতো। ধান সিদ্ধ-শুকানোর কাজ মহিলারাই করত বেশি। পাশাপাশি বারানি পরিবারের মহিলারা ধান সিদ্ধ ও শুকিয়ে ঢেঁকিতে ছেঁটে চাল বাজারে বিক্রি করতো। এটি ছিল যুগের পর যুগ গ্রাম-বাংলার চিরায়ত ধারা। এ ধারা আজ হারিয়ে যেতে বসেছে।
বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক চিলাহাটি ওয়েব ডটকমকে বলেন- ধান সিদ্ধ, শুকানো, ভাঙ্গানোর ঝামেলা এড়াতে সবাই বাজারে অটো রাইস মিলের চালের দিকে ঝুঁকছেন। অটো রাইস মিলের ধবধবে পালিশ করা চালের পুষ্টিগুণ কম। সিদ্ধ করা ধানের(পালিশহীন) ঢেঁকি ছাটা চাল সু-স্বাদু ও পুষ্টিগুণ বেশি। চাল যত চকচকে হয়, সেটার গুণ তত কম হয়। আর এ চালের ডায়াবেটিস বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ।
যেহেতু বাঙালির প্রধান খাদ্য ভাত। এক্ষেত্রে ঢেঁকিছাঁটা চাল ঝুঁকিমুক্ত এবং স্বাস্থ্যসম্মত। একসময় গ্রামাঞ্চলের মানুষ এ চাল খেতেন। এমনকি শহরের বাসিন্দারাও। সেই অভ্যাসটি হারিয়ে গেছে বললেই চলে। এখন ধান সিদ্ধ-শুকানো ও ভাঙ্গানোর যান্ত্রিক পদ্ধতি আসায় প্রাচীন আমলের সেই ধারা আর তেমন চোখে পড়েনা।

বিলাসবহুল ও গতিবেগের ট্রেনে বদলে গেছে চিত্র

চিলাহাটি ওয়েব ডটকম : Wednesday, December 7, 2022 | 12/07/2022 03:48:00 PM

আপেল বসুনীয়া,চিলাহাটি ওয়েব : উন্নয়নের ছোঁয়ায় বদলে গেছে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে। লাল সবুজ কোচের বিলাসবহুল ট্রেন, নতুন গন্তব্য, নতুন স্টেশন- সব মিলে রেলের সেবার মান এক লাফে বেড়ে গেছে কয়েক গুণ।
উত্তরাঞ্চলের মানুষের জন্য রেল এখন বড় আশীর্বাদ। তাদের ভাষায়, বিএনপি সরকারের আমলে রেলের কোনো অগ্রগতি তো হয়ইনি, বরং দিন দিন ট্রেন, স্টেশন সব বন্ধ হয়ে যাচ্ছিলো। অবহেলা অবজ্ঞায় ব্রিটিশ আমলের রেল ঝিমিয়ে পড়তে পড়তে একেবারে নিঃশেষ হতে চলেছিল। সেই রেল যেনো হঠাৎ করেই প্রাণ ফিরে পেয়েছে। মাটির নীচে তলিয়ে যাওয়া রেললাইনগুলো আবার জেগেছে কংক্রিটের স্লিপারে। যার উপর দিয়ে এখন ট্রেন চলছে একশ’ কিলোমিটার গতিবেগে। দ্রুতগামী সেই ট্রেন দেখার জন্য এখন নতুন করে মানুষ ভিড় করে রেললাইনের পাশে। উত্তরের মানুষ এখন অনায়াসে নীলসাগর, একতা, দ্রুতযান, লালমণি, রংপুর এক্সপ্রেসে রাজধানীতে যাতায়াত করতে পারে। রেল যোগাযোগ একেবারে সহজ হয়েছে উত্তরে চিলাহাটি থেকে দক্ষিণে খুলনা পর্যন্ত। ভারত থেকে যাত্রী ও মালবাহী ট্রেন আসছে চিলাহাটি দিয়ে।
পশ্চিমাঞ্চলের রেলের উন্নয়ন প্রসঙ্গে রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, শুধু উত্তরাঞ্চল নয়, সারা বাংলাদেশের মানুষ যাতে রেলের সেবা পায় সে লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। দেশব্যাপী রেলের যে আমূল পরিবর্তন হচ্ছে, ভবিষ্যতে আরও হবে-এ সবই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদান। ২০১২ সালে পৃথকভাবে রেলপথ মন্ত্রণালয় গঠিত হওয়ার পর বর্তমান সরকার রেলকে গণমুখী করার উদ্যোগ নেয়। মাটির নিচে তলিয়ে যাওয়া রেললাইন আবার মাথা তুলে দাঁড়িয়ে যায় কংক্রিটের স্লিপারের উপরে।
৫০ বছরের পুরনো লোকোমোটিভকে (ইঞ্জিন) ‘ঘানি’ টানা থেকে রেহাই দিতে কোরিয়া ও ভারত থেকে আনা হয় নতুন লোকোমোটিভ। ভারত ও ইন্দোনেশিয়া থেকে আনা হয় বিলাসবহুল কোচ। অচল রেললাইন আধুনিকায়ন করা হয়। সেই রেল লাইন দিয়ে এখন একশ’ কিলোমিটার বেগে ছুটে চলে ট্রেন। কয়েক বছর আগেও উত্তরাঞ্চলের চিলাহাটির মানুষের যোগাযোগের প্রধান বাহন ছিল বাস। ট্রেন ছিল কর্মজীবী কিছু গরীব মানুষের বাহন। সমাজের উচ্চবিত্ত তো দূরে থাক মধ্যবিত্তরাও যে ট্রেনে ভ্রমণ করবেন সে পরিবেশ ছিল না।
চিলাহাটির কুলি সর্দার তপু বলেন- ভ্রমণ করার মতো ট্রেন এই অঞ্চলে বহুদিন ধরেই ছিল না। লোকাল ট্রেন সকালে একটা বিকালে একটা চলতো। সেগুলোতে পরিবেশ বলে কিছু ছিল না। আবার ট্রেনের সময়েরও কোনো আগা-মাথা ছিল না। পঞ্চগড় থেকে প্রতিদিন ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যাচ্ছে লালসবুজের দ্রুতযান, একতা, পঞ্চগড় এক্সপ্রেস। চিলাহাটি থেকে যাচ্ছে নীলসাগর।
বর্তমান সরকার আমলে রেলওয়ের উন্নয়ন হচ্ছে, নতুন নতুন ট্রেন চালু হয়েছে, বন্ধ হয়ে যাওয়া স্টেশন চালু হয়েছে, রেললাইন সংস্কারসহ সিগনালিং ব্যবস্থাও আধুনিকায়ন করা হয়েছে। বর্তমানে চিলাহাটি স্টেশনে নতুন ভবন নির্মাণ ও রেল লাইন সংস্কার করায় বর্তমানে এ স্টেশন এক অনন্য রূপ পেয়েছে। স্টেশনের একেকটি ভবন একেক রঙে রাঙানো হয়েছে। পুরো প্লাটফর্ম এখন চকচকে ও পরিষ্কার।
স্থানীয় বাসিন্দা সাদাত হোসেন সাদা বলেন- আগে চিলাহাটি স্টেশনের পাশ দিয়ে যারা নাক চেপে ধরে হাঁটতেন, এখন তারাই কেউ কেউ বিকেলে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এখানে ঘুরতে আসেন। সন্ধ্যা হলেই জ্বলে ওঠে শতাধিক বৈদ্যুতিক বাল্ব। যেগুলোর আলোতে আলোকিত হয়ে ওঠে দেশের সর্বউত্তরের এই স্টেশনটি।
চিলাহাটি স্টেশন মাস্টার নাজনীন পারভীন জানান- যাত্রী সেবার মান বাড়ানোর জন্য চিলাহাটি-সৈয়দপুর ৫৩ কিলোমিটার রেললাইন সংস্কারের কাজ শেষে চিলাহাটি নতুন রূপ পেয়েছে। এক সময়ের ডেড স্টেশন চিলাহাটি স্টেশনে নতুন করে করা হয়েছে যাত্রীদের ওয়েটিং রুম, স্টেশন ভবন, ইলেক্ট্রিক সাব স্টেশন, রানিং রুম (ট্রেনের স্টাফদের থাকার ঘর), নিরাপত্তা ব্যারাক, টিএক্সআর অফিস, ইঞ্জিন সেড, পানির ট্যাঙ্কি ও পানি সরবরাহ, ওয়াশ পাইপ লাইন ও কানেকটিং লাইন। তৈরী হয়েছে আবাসিক কোয়ার্টার ও অত্যাধুনিক সিগনালিং ব্যবস্থা। চিলাহাটি থেকে হলদিবাড়ি পর্যন্ত রেললাইন স্থাপনের কাজ শেষ, চলছে যাত্রীবাহী মিতালি এক্সপ্রেস ও মালগাড়ী।

নতুন ধানে নবান্ন

চিলাহাটি ওয়েব ডটকম : Saturday, December 3, 2022 | 12/03/2022 02:15:00 PM

আপেল বসুনীয়া,চিলাহাটি ওয়েব : মাঠ ভরা ধানে সোনালি ছোঁয়া লাগলেই গ্রাম-বাংলায় বোঝা যায় নবান্ন আসছে। কথায় আছে বাঙালিদের বারো মাসে তের পার্বণ। বাংলাদেশের মানুষ উৎসবে আনন্দে মেতে থাকতে পছন্দ করে। বাংলাদেশে প্রচলিত উৎসবের মধ্যে নবান্ন উৎসব অন্যতম। নবান্ন মানে নব বা নতুন অন্ন। আমাদের দেশে নতুন ফসল ঘরে তোলা উপলক্ষে কৃষকরা এই উৎসব পালন করে থাকে। সাধারণত অগ্রহায়ণ মাসে যখন আমন ধান কাটা হয় তখন নবান্ন উৎসব পালন করা হয়। এই নতুন ধানের চাল দিয়ে রান্না উপলক্ষে নবান্ন উৎসব হয়ে থাকে।
নবান্ন হচ্ছে ঋতুকেন্দ্রিক একটি উৎসব। হেমন্তে নতুন ফসল ঘরে তোলার সময় এই উৎসব পালন করা হয়। এই উৎসব পালিত হয় অগ্রহায়ণ মাসে। অগ্র অর্থ ‘প্রথম’। আর ‘হায়ণ’ অর্থ ‘মাস’। এ থেকে সহজেই ধারণা করা হয়, এক সময় অগ্রহায়ণ মাসই ছিল বাংলা বছরের প্রথম মাস। সমাজ ও সভ্যতার ঊষালগ্ন থেকেই মানুষের খাদ্য সংগ্রহ ও খাদ্য উৎপাদনের সাফল্যকে কেন্দ্র করে উদ্ভব ঘটেছে নানা উৎসব ও অনুষ্ঠানের।
সমাজ ও সভ্যতার ক্রমবিকাশের ধারাবাহিকতায় মানব সভ্যতার যখন খাদ্য আহরণ যুগ থেকে কৃষি অর্থনীতির যুগে উত্তরণ ঘটে তখন ফসল উৎপাদনের পেছনে কোন না কোন অদৃশ্য দৈব শক্তির অস্তিত্ব কল্পনা করে মানুষের মনে জন্ম নিয়েছে নানা বিশ্বাস ও সংস্কার। বীজ বোনা থেকে শুরু করে ফসল উৎপাদনের বিভিন্ন পর্যায়ে এ ধরনের দৈবশক্তির সাহায্য প্রার্থনা করে নানা আচার-অনুষ্ঠান, পূজা-অর্চনা যুক্ত হয়েছে এসব উৎসবে।
নবান্ন উৎসব উপলক্ষে নতুন চালের তৈরি পায়েশ-পোলাও, পিঠা-পুলিসহ রকমারি খাদ্য-সামগ্রী পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজন সবাইকে নিমন্ত্রণ করে খাওয়ানো হয়। পাশাপাশি পালন করা হয় সামাজিকভাবে প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী নানা আচার-অনুষ্ঠান। ধর্মীয় রীতি-নীতি অনুযায়ী এসব আচার- আনুষ্ঠানিকতায় বৈচিত্র রয়েছে। মুসলিম কৃষক সমাজে নতুন ফসল ঘরে ওঠার জন্য মহান সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের উদ্দেশ্য বাড়ি বাড়ি কোরানখানি, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল, মসজিদ ও দরগায় শিরনির আযোজন করা হয়।
সনাতন তথা হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস অনুযায়ী অন্ন লক্ষ্মীতুল্য। তাই তারা এ দেবীর উদ্দেশ্য পূজা-অর্চনার আয়োজন করে। এছাড়া, নবান্ন অনুষ্ঠানে নতুন অন্ন পিতৃপুরুষ, দেবতা, কাঁক ইত্যাদি প্রাণীকে উৎসর্গ করে এবং আত্মীয়জনকে পরিবেশন করার পর গৃহকর্তা ও পরিবারবর্গ নতুন গুড়সহ নতুন অন্ন গ্রহণ করেন। নতুন চালের তৈরি খাদ্যসামগ্রী কাঁককে নিবেদন করা নবান্নের অঙ্গ একটি বিশেষ লৌকিক প্রথা। লোকবিশ্বাস অনুযায়ী, কাঁকের মাধ্যমে ওই খাদ্য মৃতের আত্মার কাছে পৌঁছে যায়। এই নৈবেদ্যকে বলে ‘কাঁকবলী’। একটি কলার ডোগায় নতুন চাল, কলা, নারকেল নাড়ু কাককে খাওয়াতে হয়।
প্রচলিত বিশ্বাস হচ্ছে কাকের মাধ্যমে ওই খাদ্য মৃতের আত্মার কাছে পৌঁছে যায়। কাকবলির আগে আরো তিনটি আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা হত- লক্ষ্মীপূজা, পিতৃশ্রাদ্ধ, বীরবাশ। বরিশাল অঞ্চলে প্রচলিত আছে বীরবাশ প্রথা। বাড়ির উঠানের মাঝখানে একটি গর্ত করা হয়। তার চারপাশে পিটুলী দিয়ে আলপনা আঁকা হয়। গর্তে জ্যান্ত কই মাছ ও কিছু দুধ দিয়ে একটি বাঁশ পোতা হয়। সেই বাঁশের প্রতি কঞ্চিতে ধানের ছড়া বাধতে হয়। এটাকে বীরবাশ বলে।
নবান্ন উৎসব উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন স্থানে মাসব্যাপী উৎসব হতো আগেকার দিনে। এ উৎসবের সাথে জড়িয়ে আছে বাঙালিদের বহুদিনের প্রথা ও বিশ্বাস ।

চিলাহাটিতে হারিয়ে যাচ্ছে স্বর্ণলতা

চিলাহাটি ওয়েব ডটকম : Thursday, December 1, 2022 | 12/01/2022 02:27:00 PM

আপেল বসুনীয়া,চিলাহাটি ওয়েব : বাংলাদেশের প্রতিটি ঋতুই ভিন্ন রূপবৈচিত্র্য নিয়ে হাজির হয় প্রকৃতিতে। বাংলাদেশের প্রকৃতিতে সৌন্দর্য বাড়িয়ে তোলে যে কয়েকটি লতা, তাদের অন্যতম হচ্ছে স্বর্ণলতা বা আলোকলতা।
শ্যামলিমাময় বাংলার পথে প্রান্তরে আপন রূপের মহিমা ছড়ায় দৃষ্টিনন্দন লতানো এই গাছ। দেশের সব জায়গায় দেখা যায় স্বর্ণলতা। গ্রামে বসবাসকারী বা গ্রামে যাওয়া আসা করেন এমনসব মানুষ এই লতাটিকে চেনেন।
পরজীবী এই উদ্ভিদ বেশিরভাগ দেখা যায় বড়ই গাছের কাণ্ডে। এর সবুজাভ সোনালি উজ্জ্বল রঙ বহুদূর থেকে নজর কেড়ে নেয় দর্শকের। এই লতিকার বেড়ে ওঠা ভরা মৌসুম মূলত পৌষ থেকে চৈত্র মাস। তবে এই সময়ের আগে-পরেও এই তৃণলতা জন্মে। ভরা মৌসুমের বাইরেও বেঁচে থাকে স্বর্ণলতা।
পৌষের শিশিরভেজা মৃদু বাতাসে নীলফামারী জেলার চিলাহাটির বিভিন্ন এলাকায় হলুদ রঙের গালিচায় মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে আলোকলতা। দূর থেকে দেখলে মনে হয় ঝুরি ঝুরি হলদে সুতা ঝুলে আছে। এর ওপর রোদ পড়লে চকচক করে।
শীতের পাতাঝরা প্রকৃতিতে মোহনীয় সৌন্দর্য ছড়ায় আলোকলতা। তবে গ্রামে এখন খুব কমই দেখা যায় এ আলোকলতা। জীবন্ত গাছে জন্ম নিয়ে পরগাছকে অবলম্বন করে টিকে থাকে।
আলোকলতা একটি পরজীবী উদ্ভিদ। গাছেই এর জন্ম, গাছেই বেড়ে ওঠা, বংশবিস্তার। কোনো পাতা নেই, লতাই এর দেহ-কাণ্ড-মূল সব। সোনালি রঙের চিকন লতার মতো বলে এরূপ নামকরণ।

শিশির বিন্দুতে ঢেকে গেছে চিলাহাটির প্রকৃতি

চিলাহাটি ওয়েব ডটকম : Tuesday, November 22, 2022 | 11/22/2022 02:43:00 PM

আপেল বসুনীয়া,চিলাহাটি ওয়েব : গভীর রাত থেকে সকাল ৭ পর্যন্ত হালকা কুয়াশা ও শিশির বিন্দু ঢেকে ফেলছে চিলাহাটির প্রকৃতিকে। ঋতু চক্রের পথ পরিক্রমায় এখনো শেষ হয়নি শরত বন্ধনা। এর মধ্যে শীতের আমেজকে অনেকে প্রকৃতির বৈরী খেয়াল বলে মনে করছেন।
গরমের পাশাপাশি আকাশে ভাসছে সাদা মেঘের ভেলা। মাঠে চোখ মেললেই দেখা যায় ঘাস ও ধানের কচি ডগায় জমছে শিশির বিন্দু। সেই সঙ্গে অনুভূত হচ্ছে হিম হাওয়া। যেন হেমন্ত তার প্রকৃতির সবটুকু উজাড় করে বিলিয়ে দিচ্ছে।
বাংলা বর্ষ পঞ্জিকা মতে এখন শরত ঋতুর শেষ পর্যায়ে। কার্তিক কড়া নাড়ছে দোরগোড়ায়। কার্তিকে শুরু হবে হেমন্তের পথ চলা। শেষ হবে অগ্রহায়ণে। হেমন্তের পরে শীত ঋতু আসার নিয়ম প্রকৃতিতে। কিন্তু এবার হেমন্তেই শীতের আগমন ঘটবে বলে অনেকে মনে করছেন। ক্লান্ত দুপুরে সোনাঝড়া রোদের পাশাপাশি সকাল সন্ধ্যায় ঘাসের ডগায় জমা শিশির বিন্দু, হিম বাতাস ও কুয়াশার উপস্থিতি এই বার্তাই দিচ্ছে কার্তিকের হাত ধরে চলে এলো নবান্নের ঋতু হেমন্ত।
এলাকাবাসীরা জানান, সকাল বেলায় মাঝে মধ্যে পুরো এলাকা কুয়াশায় ছেয়ে যাচ্ছে। ঘাস ও গাছের পাতায় জমে থাকছে শিশির বিন্দু। মাঠের পর মাঠ সবুজ খেত ফোঁটা ফোঁটা শিশির বিন্দুতে ঢেকে থাকে। আবার বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে সূর্যের তাপ। বিকেল হলে কমতে থাকে তাপমাত্রা।
এবার একটু আগাম শীতের পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে বলে জানান চিলাহাটি বাজারের বাসিন্দা মোহাব্বাত হোসেন বাবু । তিনি বলেন, শরতে সাধারণত শীত ও শিশির বিন্দু পড়তে কম দেখা যায়। প্রকৃতিতে সাধারণত এটা হবার কথা নয়। কেতকীবাড়ী ইউনিনের আবুল কালাম নামে এক কৃষক বলেন, এ সময় শিশির বিন্দু ফসলের জন্য কিছুটা উপকার বয়ে আনবে।
ভোর বেলা শিশির ভেজা পথে হাঁটতে খুব ভালো লাগছে। কয়েক দিনের বৃষ্টির পরে দিনে প্রচন্ড গরম আবার ভোররাতে শীত। শরতকালে এমনটা হওয়ার কথা না থাকলেও এমনটাই হচ্ছে। এদিকে গভীর রাত থেকে সকাল ৬-৭টা পর্যন্ত অনেক স্থানে শিশির পড়তে দেখা গেছে।

হারিয়ে যাচ্ছে হলদে পাখি ‘বউ কথা কও’

চিলাহাটি ওয়েব ডটকম : Thursday, November 17, 2022 | 11/17/2022 03:19:00 PM

আপেল বসুনীয়া,চিলাহাটি ওয়েব : ‘বউ কথা কও, বউ কথা কও, কও কথা অভিমানী। সেধে সেধে, কেঁদে কেঁদে যাবে কত যামিনী।’ বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের বউ কথা কও কবিতার গ্রামবাংলার সেই অতিচেনা প্রিয় হলদে পাখিটি হারিয়ে যেতে বসেছে। শৈশবে গ্রামের আনাচে-কানাচে চিরচেনা এই পাখির ডাক শুনে মুখ ভেংচিয়ে খেপায়নি, এমন কে আছে। আর এখন গ্রামের গাছের ডালে ডালে তন্ন তন্ন করে খুঁজেও হলদে রঙের সুকণ্ঠী পাখিটার দেখা মেলা কঠিন।
সুরেলা কণ্ঠের পাখিটি নিজের গুণেই মানুষের নজর কাড়তো। সব ঋতুতে গ্রামবাংলার প্রাকৃতিক পরিবেশ মাতিয়ে রাখতো এই পাখিটি। বাড়ির আঙ্গিনার পেয়ারা গাছে বসে ডাকতো, আর শিশুরা মুখ ভাঙ্গিয়ে খেপাতো। কিন্তু এখন পরিবেশের ভারসাম্যহীনতার কারণে গ্রামবাংলার প্রাকৃতিক বৃক্ষ নিধন আর জমিতে কীটনাশক ব্যবহারের ফলে হলদে পাখিটি বিলুপ্ত হতে বসেছে।
হলদে পাখিটি আকৃতিতে অনেকটা শালিক পাখির মতো। দৈর্ঘ্য ২৪ সেন্টিমিটার। পাখিটির বৈজ্ঞানিক নাম ওরিওলিদি এবং ইংরেজি নাম অরিওল। গায়ের পালক উজ্জ্বল হলুদ। লেজ ও পাখার অগ্রভাগের পালক কালো। গলা ও মাথার রং চিকচিকে কালো হলেও ঠোঁট ও চোখ লাল টকটকে। আর পা দুটো হালকা কালো।
এরা সাধারণত ঝোঁপ- ঝাড়ে, শুকনো ডালপালা, খড়কুটো বা আগাছা দিয়ে গাছের ডালে বাসা বানায়। বসন্ত ও গ্রীষ্মের মাঝামাঝি এদের প্রজনন মৌসুম। সাদা রঙের বাদামি ফোঁটাযুক্ত ৩/৪টি ডিম পাড়ে। পুরুষ ও মেয়ে পাখি দুজন মিলে ডিমে তা দিয়ে ১৫ থেকে ১৭ দিনে বাচ্চা ফোটায়। লম্বা ঠোঁটওয়ালা হলদে পাখিটি পোকা-মাকড় ও ফল সবই খায়।
বাংলাদেশ, ভারত, মিয়ানমার, ইন্দোনেশিয়া তথা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে পাওয়া যায়। পাখি ও পরিবেশ নিয়ে কাজ করা সেতুবন্ধনের সভাপতি আলমগীর হোসেন বলেন, কৃষক বন্ধু পাখিটি বিলুপ্তির শেষ ধাপে রয়েছে। ফসলের ক্ষতিকারক পোকা- মাকড়ই এদের প্রধান খাদ্য। সে কারণে এ পাখিটি বিলুপ্ত হওয়ায় কৃষকের ক্ষতি হয়েছে। গ্রামবাংলায় আর সচরাচর চোখে পড়ে না এই পাখিটি।