আকাশ রহমান, বদরগঞ্জ (রংপুর) প্রতিনিধি : রংপুরের বদরগঞ্জে ঘন কুয়াশা ও তীব্র শীতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। টানা কয়েকদিন ধরে সূর্যের দেখা না পাওয়ায় শীতের প্রকোপ ক্রমশই বাড়ছে। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত ঘন কুয়াশায় ঢেকে থাকছে লোকান্তর প্রকৃতি। একারনে দিনের বেলাতেও যানবাহনগুলোকে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে দেখা যাচ্ছে। তীব্র ঠান্ডা আর হিমেল বাতাসে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন খেটে খাওয়া সাধারন মানুষ।
গতকাল রবিবার সকালে বদরগঞ্জ উপজেলা
আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। আবহাওয়ার এই পরিস্থিতিতে দিনমজুর, কৃষক, শ্রমিক, রিকশা ও ভ্যানচালকদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা থমকে দাঁড়িয়েছে। ভোরে কাজে বের হতে না পারায় তাদের আয় বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক পরিবারের কর্মক্ষম ব্যক্তি কাজকর্ম করতে না পারায় পরিবার পরিজন নিয়ে খেয়ে না খেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে।
ঘন কুয়াশা ও ঠান্ডার কারণে সড়কপথে চলাচলও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে নদী এলাকায় কুয়াশার ঘনত্ব বেশি থাকায় মাছ ধরার জেলেদের কাজের বিঘ্ন ঘটছে। এতে নৌকার মাঝিরা কয়েক দিন ধরে কাজ বন্ধ রাখতে বাধ্য হচ্ছেন। একই সঙ্গে কৃষি কাজেও স্থবিরতা নেমে এসেছে।
উপজেলার লোহানীপাড়া ইউনিয়নের কচুয়া মনিরের পাড়া গ্রামের খেটে খাওয়া দিনমজুর তারাজুল ইসলাম, সাদ্দাম হোসেন সহ আরো অনেকেবলেন, সকালে কাজে বের হলে হাত-পা অবস হয়ে আসে। তাই নিয়মিত মজুরের কাজ করতে না পেরে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছি।
পৌর শহরের ১৩ নম্বর রেলবস্তি এলাকার বাসিন্দা আছপিয়ারা বেগম বলেন, তীব্র ঠান্ডায় গবাদিপশু নিয়েও আমরা দুশ্চিন্তায় আছি। ঠান্ডা থেকে বাঁচাতে ছাগলের গায়ে গরম কাপড় দিতে হচ্ছে। অনেক এলাকায় মানুষ খড়কুটো ও কাঠ জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে।
রিক্সাচালক আশরাফুল আলম বলেন ,আমার পরিবারে পাঁচজন সদস্য রয়েছে। অনেক ঠান্ডা নিয়ে সকাল বেলা কষ্ট করে রিকশা নিয়ে বের হই। কিন্তু কুয়াশা আর ঠান্ডার কারনে ঠিকমত ভাড়া হয়না।
স্থানীয়দের অভিযোগ, শীতের তীব্রতা বাড়লেও এখন পর্যন্ত উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়নি। সরকারি ও বেসরকারি সহায়তা না পেয়ে ছিন্নমূল মানুষ শীতের ভোগান্তিতে পড়েছেন।
বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মিজান আলী বলেন, অনেক এলাকায় তীব্র শীতে ছিন্নমূল মানুষরা অনেক কষ্টে আছেন। সরকারি বরাদ্দ কম্বল ইউনিয়ন পরিষদের সচিব নামে আসে।প্যানেল চেয়ারম্যানদের নামে আসে না।তাই এবিষয়ে সচিব ভাল বলতে পারবেন। বদরগঞ্জ উপজেলার মধুপুর ইউনিয়নের সাত নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য নুরুজ্জামান মিয়া বলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলাম বদরগঞ্জ উপজেলা শাখার পক্ষ থেকে আমি নিজ উদ্যোগে শতাধিক কম্বল বিতরণের প্রস্তুতি নিয়েছি।
বদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: আশিকুল আরেফিন জানান, ঠান্ডা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শিশু ও বয়স্কদের মধ্যে নিউমোনিয়া, সর্দি-কাশি ও শ্বাসকষ্টের ঝুঁকি বেড়েছে। শীতজনিত রোগ প্রতিরোধে গরম কাপড় ব্যবহার ও প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বনের ওপর গুরুত্ব দেন তিনি।
