ইব্রাহীম মিঞা বিরামপুর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি :মহান বিজয় দিবস মানেই লাল-সবুজের উচ্ছ্বাস, স্মৃতির মিছিল আর শ্রদ্ধার ফুল। তবে দিনাজপুরের বিরামপুরে এবারের বিজয় দিবসে সবার দৃষ্টি কেড়েছে দুই কিশোর—মোঃ ইমরুল কায়েস মুগ্ধ ও মোঃ সাইদুল মুরসালিন স্বাধীন। তাদের কাঁদামাখা শরীর, ক্লান্ত পা আর দৃঢ় প্রত্যয় যেন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে নতুন করে মনে করিয়ে দিয়েছে।
মুগ্ধ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মোঃ ইমরুল কায়েস মুগ্ধ এবং শান্তিনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মোঃ সাইদুল মুরসালিন স্বাধীন—ভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের হলেও তারা একই এলাকার সন্তান। মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে “যেমন খুশি তেমন সাজো” প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে তারা পাঁচ বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে এক ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্ত নেয়।
শীতের সকালে কুয়াশা ভেদ করে তারা একটি প্যাডেলচালিত পুরাতন ভ্যানে চেপে রওনা দেয়। ভ্যানে কেউ শুয়ে, কেউ দাঁড়িয়ে, কেউ সামনে হ্যান্ডেল ধরে—আর পেছনে একজন ঠেলে হেঁটে হেঁটে। প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার কাঁদা-ভেজা পথ পাড়ি দিয়ে সকাল ৯টার দিকে তারা পৌঁছে যায় বিরামপুর উপজেলা পরিষদ চত্বরে। পুরো শরীর জুড়ে কাঁদামাটি, পোশাকে যুদ্ধের ছাপ—দেখে অনেকেই থমকে দাঁড়ান।
তাদের এমন সাজের কারণ জানতে চাইলে কিশোর মুগ্ধ ও স্বাধীন জানায়,
“আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের কথা মনে করে এমন সেজেছি। যুদ্ধের সময় তারা অনেক কষ্ট সহ্য করেছেন, কাঁদা-মাটি মাড়িয়ে লড়াই করেছেন। আমরা যেন তাদের ত্যাগ ভুলে না যাই—এই বার্তাই দিতে চেয়েছি।”
এই কথার মধ্যেই লুকিয়ে ছিল স্বাধীনতার প্রতি গভীর ভালোবাসা আর ইতিহাস জানার আগ্রহ। বয়সে কিশোর হলেও তাদের ভাবনায় ছিল একাত্তরের সাহসী যোদ্ধাদের প্রতি অগাধ শ্রদ্ধা।
তাদের ব্যতিক্রমী উপস্থাপনা ও কষ্টসাধ্য অংশগ্রহণে মুগ্ধ হন আয়োজক ও উপস্থিত অতিথিরা। প্রতিযোগিতা শেষে পুরস্কার হিসেবে মুগ্ধ ও স্বাধীনসহ তাদের দলকে প্রদান করা হয় সিরামিকের মগ। তবে পুরস্কারের চেয়েও বড় অর্জন ছিল সবার হৃদয়ে জায়গা করে নেওয়া।
এদিন বিরামপুর উপজেলা পরিষদ চত্বরে উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয় মহান বিজয় দিবস। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাহমিনা সুলতানা নীলা, সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাজিয়া নওরীন, বিরামপুর থানার অফিসার ইনচার্জ সাইফুল ইসলাম সরকারসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাগণ। জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, রোভার স্কাউট দল ও নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ এতে অংশ নেন।
বাংলাদেশ পুলিশ বিরামপুর থানার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসের সূচনা হয়। পরে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ, এক মিনিট নীরবতা পালন ও দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। জাতীয় সংগীতের সঙ্গে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে আনন্দঘন পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়। কুচকাওয়াজ, পুরস্কার বিতরণ, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা ও আলোচনা সভার মধ্য দিয়ে দিনব্যাপী কর্মসূচি শেষ হয়।
