আজম রেহমান, ঠাকুরগাঁও : ঠাকুরগাঁও ৫০ বিজিবি তার অধিনস্থ ১৫ টি ব্যাটালিয়নের সীমান্ত এলাকায় অভিযান চালিয়ে চলতি বছরের ১০ মাসে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র, জাল রুপি, মাদকসহ ৬৭ কোটি টাকার মালামাল এবং ৫ শতাধিক চোরাচালানীকে আটক করেছে। রংপুর উত্তর পশ্চিম রিজিয়নের অধীনে থাকা ৪টি সেক্টর ও ১৫টি ব্যাটালিয়নের সীমান্ত এলাকায় চোরাচালান ও মাদকবিরোধী অভিযানে ৫০-ঠাকুরগাঁও ব্যাটালিয়ন এর ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত এসব অভিযানে ৭টি আগ্নেয়াস্ত্র, ভারতীয় জাল রুপি, ৫৫৬ জন আসামিসহ ৬৭ কোটি টাকার বেশি মূল্যের মালামাল আটক করা হয়। বুধবার বিকেলে ঠাকুরগাঁও ব্যাটালিয়ন ৫০-বিজিবির পক্ষ থেকে তাদের হলরুমে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়।
ক্যাম্প অধিনায়ক কর্নেল মো. তানজীর আহম্মদ বিজিবির পক্ষে জানান, গত ১০ মাসে ফেন্সিডিল, মদ ও সিরাপ ৯১ হাজার ৩৪১টি বোতল, ট্যাপেন্টাডল ট্যাবলেট- ও মেটাডক্সিন ট্যাবলেট ১৭ লাখ ১১ হাজার ৯৬৪টি এবং গাজা-হেরোইন ও কোকেন ১৪ হাজার ১৯১ কেজি, ইয়াবা ২৬ হাজার ১১৫ পিচসহ বিভিন্ন নেশা জাতীয় ইঞ্জেকশন ৮৭ হাজার ১০৭টি জব্দ করা হয়।
৭টি আগ্নেয়াস্ত্রসহ ৩৩ হাজার ১০৬টি গোলাবারুদ, ককটেল ও পেট্রোল বোমা ১৩৯টি, গবাদিপশু ২৩৯৬টি, ৬৮০ গ্রাম স্বর্ণ, ১ ভরি রুপা, ভারতীয় শাড়ি, শার্ট, প্যান্ট ১১২৮৫ পিচ, থান কাপড় ১৩৮ গজ, কস্টিপাথর ১৫টি এবং চা-পাতা চিনি ৩৯৩০ কেজি, মোরটসাইকেল ১৯৭টি, মোবাইল ১৩০৭টি, চকলেট বাজি ১২৪৬০ প্যাকেট, ইঞ্জিন চালিত নৌকা ৪টি, ভারতীয় জাল রুপি ১ লাখ ৫ হাজার ও কারেন্ট জাল ৭৪৪টি জব্দ করা হয়েছে।
সীমান্ত হত্যা, মাদক, নারী ও শিশু পাচার রোধে বিজিবি-বিএসএফ যৌথভাবে নিয়মিত টহল ও ৪ হাজার ১১টি পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। যার ফলে প্রায় শতাধিক চোরাকারবারী স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছেন। রংপুর রিজিয়নের সীমান্তে নতুন করে ৬টি বর্ডার আউট পোস্ট (বিওপি) নির্মাণ করা হয়েছে। সীমান্ত এলাকায় ২৩ হাজার ৩৭৯টি জনসচেতনতামূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। পাশাপাশি সীমান্তবর্তী গরিব ও অসহায়দের মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণ, চিকিৎসা সেবা ও আর্থিক অনুদান প্রদান করছে বিজিবি। শুধু তাই নয়, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত শারদীয় দুর্গাপূজায় আইন-শৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে রংপুর রিজিয়নের দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় ৮০৭টি পূজামণ্ডপে ১৩৮ প্লাটুন বিজিবি সদস্য মোতায়েন ছিল। তারা নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে পূজা উদ্যাপনকে শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ রাখতে সহায়তা করে।
তিনি আরও জানান, আন্তঃ সীমান্ত অপরাধ শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনার লক্ষে বিজিবি সীমান্ত এলাকায় ২৪ ঘণ্টা টহলের পাশাপাশি অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম না করা, সীমান্ত শূন্য লাইন অতিক্রম করে ভারতীয় জমিতে চাষাবাদ না করা, গবাদি পশু চরানোর সময় সীমান্ত অতিক্রম না করা, সীমান্তবর্তী নদীতে মাছ ধরতে ও সীমান্তে ঘাস কাটতে গিয়ে ভারতের অভ্যন্তরে প্রবেশ না করা এবং মাদকদ্রব্যসহ যে কোনো চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত না হওয়ার বিষয়ে বিজিবি এলাকার জনসাধারণের মধ্যে প্রতিদিন জনসচেতনতামূলক সভা এবং মাইকিং এর মাধ্যমে নিয়মিত প্রেষণা প্রদান ও সতর্ক করছেন।
ঠাকুরগাঁও ব্যাটালিয়ন ৫০ বিজিবির অধিনায়ক কর্নেল মো. তানজীর আহম্মদ বলেন, যে কোনো উদ্ভুত আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিজিবি কাজ করে। সীমান্তে কঠোর নজরদারী ও টহল তৎপরতা বৃদ্ধির পাশাপাশি সীমান্তবর্তী জনসাধারণকে অবৈধ সীমান্ত পারাপার, জালনোট পাচার, মাদকদ্রব্য চোরাচালান এবং নারী ও শিশু পাচার সম্পর্কে নিয়মিতভাবে জনসচেতনতামূলক সভার আয়োজন করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন সময়ে সীমান্তবর্তী গরিব ও দুঃস্থদের মাঝে আর্থিক অনুদান, শীতবস্ত্র বিতরণ ও মেডিকেল ক্যাম্পেইন এর মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়। সীমান্তে শান্তি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে বিজিবির এ অভিযান ও জনকল্যাণমূলক কার্যক্রম চলমান থাকবে বলে জানান তিনি।
