এস.এম. রকি, খানসামা (দিনাজপুর) প্রতিনিধি : দিনাজপুরের খানসামা উপজেলায় মাচায় গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছেন চাষীরা। মাত্র ৭৩ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে ফসল ঘরে তুলতে পারায় তারা লাভবান হচ্ছেন। কৃষি বিভাগের দাবি, এ পদ্ধতি জনপ্রিয় ও পরিধি বৃদ্ধি হলে স্থানীয় কৃষি অর্থনীতি আরও সমৃদ্ধ হবে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, টেকসই কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় চলতি মৌসুমে ৬০ শতক জমিতে মাচায় তরমুজ চাষ হয়েছে। কৃষকদের বীজ, সার, ফেরোমন ফাঁদ, জৈব বালাইনাশক ও আন্ত: পরিচর্যা বাবদ নগদ অর্থ সহায়তাও দেওয়া হয়। এছাড়া উদ্বুদ্ধ হয়ে কৃষকরা নিজ উদ্যোগে আরও ১ একর ৪০ শতক জমিতে চাষ করেছেন। সব মিলিয়ে উপজেলায় এবার ২ একর জমিতে মাচায় গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষ হয়েছে।
সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে উপজেলার গোয়ালডিহি গ্রামে দেখা যায় কৃষক রবিউল ইসলাম বিক্রির জন্য তাঁর মাচা থেকে তরমুজ তুলছেন।
গোয়ালডিহি গ্রামের চাষি রবিউল ইসলাম জানান, তিনি ২০ শতক জমিতে মার্সেলো গোল্ড জাতের তরমুজ চাষ করেছেন। মাচা তৈরি ও পরিচর্যায় প্রায় ২০–২২ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এর মধ্যে বাঁশের মাচায় ১৪–১৫ হাজার টাকা, জৈব বালাইনাশক, শ্রমিক ও সার বাবদ আরও কিছু খরচ হয়েছে।
তিনি বলেন, “৭৫ দিনে প্রথম দফায় ১৫–১৬ মণ তরমুজ বিক্রি করেছি। প্রতি মণ ২ থেকে ২.৫ হাজার টাকায় বিক্রি হওয়ায় ভালো লাভ হয়েছে। দ্বিতীয় দফায় আরও ১০ মণ এবং তৃতীয় দফায় কিছু তরমুজ বিক্রির আশা করছি। সব মিলিয়ে প্রায় ৬০–৭০ হাজার টাকার তরমুজ বিক্রি সম্ভব হবে।”
রানীরবন্দর বাজারের ব্যবসায়ী রাকিবুল ইসলাম জানান, আগে দিনাজপুরে তরমুজ বাইরে থেকে আনতে হতো। এখন স্থানীয়ভাবে চাষ হওয়ায় কৃষকদের কাছ থেকে ৫০–৬০ টাকা কেজি দরে কিনে বাজারে ৮০–৯০ টাকায় বিক্রি করা যাচ্ছে। ফলে ব্যবসায়ীরাও লাভবান হচ্ছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইয়াসমিন আক্তার বলেন, “মোট ২ একর ৬০ শতক জমিতে মাচায় তরমুজ চাষ হয়েছে। কৃষকদের হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দিয়ে সার, বীজ ও নগদ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। মাচা তৈরিই ছিল প্রধান খরচ। তবে কৃষকরা লাভবান হওয়ায় এ উদ্যোগ আরও সম্প্রসারিত হবে।”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কামরুজ্জামান সরকার বলেন, “খানসামা এখন কৃষি সমৃদ্ধ উপজেলায় পরিণত হয়েছে। সবজি উৎপাদনের পাশাপাশি মাচায় তরমুজ নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে। কৃষি বিভাগের সহায়তা ও মাঠ পর্যায়ের প্রশিক্ষণ এ সাফল্যের মূল কারণ। ভবিষ্যতে আরও নতুন ফসল যুক্ত করে কৃষি সমৃদ্ধিকে এগিয়ে নেওয়া হবে।”