Type Here to Get Search Results !

আসল ঘটনা ধামাচাপা দিতে সাংবাদিকদের হুমকি

আকাশ রহমান, বদরগঞ্জ (রংপুর) প্রতিনিধি, চিলাহাটি ওয়েব : বদরগঞ্জ ওয়ারেছিয়া ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসা পরীক্ষাকেন্দ্রে নকল সরবরাহের সময় ৫০ সেট নকল সহ গোয়েন্দা সংস্থা হাতে বদরগঞ্জ ওয়ারেছিয়া ইসলামীয়া আলিম মাদ্রাসার আরবী প্রভাষক শাফিকুল ইসলাম আটকের সংবাদ গত ১৫-০৮-২০২৫ ইং বৃহপতিবার যুগের আলো সহ বিভিন্ন পত্রিকা ও অনলাইন টিভি চ্যানেল সহ বিবিন্ন মিডিয়ায় প্রচার হয় । এতে ক্ষিপ্ত হয়ে কেন্দ্র সচিব এবং তার ভাতিজি জামাই নকল সরবরাহের অপরাধে গ্রেফতার কৃত শাফিকুল জামিনে মুক্ত হয়ে ফেজবুক ও মুঠোফোনে সাংবাদিকদের ভয় ভীতি দেখাচ্ছে । প্রকৃত বিষয় হলো গত ১৪-০৮-২০২৫ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের ইংরেজী ২য় পত্রের পরীক্ষা ওয়ারেছিয়া ইসলামীয়া আলিম মাদ্রাসা কেন্দ্রে চলাকালিন সময় একই মাদ্রাসার আরবী প্রভাষক শাফিকুল ইসলাম বাহির থেকে নকল নিয়ে পরীক্ষার কেন্দ্র প্রবেশ করলে পূর্বে থেকে ওৎপেতে থাকা গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য এবং কেন্দ্রের দ্বায়িত্ব প্রাপ্ত পুলিশের নিকট হাতেনাতে ধর পড়ে।
এরপর কেন্দ্র সচিব এর উপস্থিতিতে তার শরীর তল্লাসি করে ৫০ সেট নকল পাওয়া যায় , যা ৫০ জন পরীক্ষার্থীর নিকট প্রতিকপি ১০০০ একহাজার টাকার বিনিময়ে সরবরাহ করা হতো । ওই দিন কেন্দ্র সচিব বাদি হয়ে মামলা করলে পরদিন শূক্রবার জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে হাজির করলে আদালত তার জামিন মঞ্জুর করেন।
আদালত থেকে বের হলে নকল সরবরাহকারী এই শিক্ষককে ফুলের মালা দিয়ে বরণ করে ওই মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থীরা ছবি তুলে ফেজবুকে আপলোড করে। এবং তারা বলে হজুর আমাদের সহযোগিতা করতে গিয়ে বিপদে পড়েছে, যে সকল সাংবাদিক হুজুরকে ফাঁসিয়েছে তাদেরকে আমরা দেখে নেব । উপজেলার চারজন শিক্ষক বলেন একজন নকলবাজ শিক্ষক হাতেনাতে গোয়েন্দা পুলিশের হাতে ধরা পড়ল, পরে তার বিরুদ্ধে মামলা হলো । আদালত জামিন দিলে ওই পরীক্ষারর্থীরা তাকে ফুলের মালা দিয়ে বরন করে নেয়ার বিষয়টি রহস্যজনক।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে প্রভাষক শাফিকুল ২০১২ সালে ওয়ারেছিয়া আলিম মাদ্রাসায় প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। তার বাড়ি দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার পলাশবাড়ি প্রমানিক পাড়া গ্রামে। তিনি কেন্দ্র সচিবের ভাতিজি জামাই হওয়ার সুবাদে ২০১৩ সালে আলিম কেন্দ্রের শুরু থেকেই ছাত্র-ছাত্রিদের কাছে থেকে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে নকল সরবরাহ করে পরীক্ষার্থীদের পাশ করিয়ে দেয়ার চুক্তি করেন বলে অনেক অভিভাবক বলেছেন। আর এ কাজে তাকে সকল ধরনের সহযোগিতা করেন কেন্দ্র সচিব ও ওয়ারেছিয়া আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আব্দুল আলিম।
গত ১৪ আগষ্ট ইংরেজি ২য পত্র পরীক্ষার দিন সকাল ১০ টার ১৫ মিনিট পূর্বে প্রশ্নের প্যাকেট খোলার সাথে সাথে কেন্দ্র সচিব সুকৌশলে একটি প্রশ্ন প্রভাষক শাফিকুলকে দিয়ে বাহিরে পাঠিয়ে দেন। কেন্দ্রের বাহিরে পাশের বাড়িতে সেখানে উংরেজি বিষয়ের প্রভাষক আতাউল গনি হাতে উত্তরপত্র লিখে তা ফটোকপি করে শাফিকুলে মাধ্যমে পরীক্ষার্থীদের নিকট সরবরাহ করার কথা ছিল । কিন্তু তার আগেই গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন প্রভাষক শাফিকুলকে ধরে ফেলে । মামলায় শাফিকুল কে একমাত্র আসামী করা হয় মুল অপরাধী আতাউল গনি অধ্যক্ষের ভাতিজি জামাই হওয়ার কারনে তাকে বাদ দেয়া হয়েছে । ঘটনার পরদিন থেকে আতাউল গণি মোবাইল ফোন বন্ধ করে গা ডাকা দিয়েছে । তবে যে বাড়িতে উত্তরপত্র তৈরী করা হয়েছিল সেই বাড়ির মালিক মেজবাউল বলেন,বৃহস্পতিবার বেলা ১১ টার দিকে ইংরেজি প্রভাষক আতাউল গনি আমার এখানে এসে কিছু লিখি ফটোকপি করে প্রভাষক শাফিকুলকে দিয়েছে। তবে তারা কী ফটোকপি করেছে তা আমি জানি না। নামপ্রকাশ না করার শর্তে ওয়ারেছিয়া আলিম মাদ্রাসার এক কর্মচারী বলেন প্রশ্নের প্যাকেট খোলার সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও অধ্যক্ষ আব্দুল আলিম, ট্যাগ অফিসার শামীম আরা ইয়াছমিন (উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের একাডেমিক সুপারভাইজার ) ও অধ্যক্ষ আব্দুর রাজ্জাক (অধ্যক্ষ দামোদরপুর আলিম মাদ্রাসা) তাদের চোখকে ফাঁকি দিয়ে প্রশ্ন কিভাবে বাহিরে গেল । এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও অধ্যক্ষ আব্দুল আলিম মুঠোফোনে বলেন , পরীক্ষা চলাকালিন সময় আমাদের চোখকে ফাঁকি দিয়ে প্রশ্ন কিভাবে বাহিরে গেল তা আমি জানিনা তবে আজকালকে যুগে এটা কোন বিষয় না। প্রশ্ন খোলার সময় আমি , ট্যাগ অফিসার শামীমআরা ইয়াসমিন ও দামোদরপুর আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আব্দুর রাজ্জাক উপস্থিত ছিলেন।
প্রভাষক শাফিকুলকে তার অপরাধের জন্য সাময়িক বহিস্কার করা হয়েছে। ট্যাগ অফিসার শামীম আরা ইয়াছমিন (উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের একাডেমিক সুপারভাইজার ) পরীক্ষাচলাকালিন সময় প্রশ্ন বাহিরে যাওয়া বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন এটা আমার নখদর্পনের বাহিরে হয়েছে । কিভাবে গেল আমি জানিনা । তবে তিনি বলেন প্রশ্নের প্যাকেট খোলার সময় আমি , কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও দামোদরপুর আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আব্দুর রাজ্জাক উপস্থিত ছিলেন । এ বিষয়ে জানার জন্য দামোদরপুর আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আব্দুর রাজ্জাক কে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি মোবাইল রিসিফ করেননি।
প্রভাষক শাফিকুল ইসলাম বলেন , প্রশ্ন কিভাবে বাহিরে গেছে তা আমি বলবো না । আপনারা যা শুরু করেছেন তাতে আপনাদের সাথে কথা বলা উচিত নয়। সাংবাদিকদের হুমকি দেয়া বিষয়ে তিনি বলেন আমার অনেক প্রাত্নন ছাত্র আছে , তারা আমাকে ভালবেশে একাজ করেছে । ওয়ারেছিয়া মাদ্রাসার সভাপতি আব্দুল হান্নান খান বলেন অপরাধী শাফিকুলকে সাময়িক বহিস্কার করা হয়েছে। তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
উল্লেখ্য ওয়ারেছিয়া আলিম মাদ্রাসা আলিম পরীক্ষা কেন্দ্রে মোট ১৭৬ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ওয়ারেছিয়া আলিম মাদ্রাসার মাদ্রাসার ৮৯ জন, দামোদরপুর আলিম মাদ্রাসার ১৭ জন , ময়নাকুড়ি আলিম মাদ্রাসার ১৯ জন ও ওসমানপুর কামিল মাদ্রাসার ৫১ জন পরীক্ষার্থী ।
বিভাগ

Top Post Ad

Hollywood Movies