Type Here to Get Search Results !

ঠাকুরগাঁওয়ে ১৫ দিনে সাপে কেটে ৫ জনের মৃত্যু

আজম রেহমান, ঠাকুরগাঁও ব্যুরো, চিলাহাটি ওয়েব : বিষধর সাপের কামড়ে গেল ১৫ দিনে ঠাকুরগাও জেলায় স্কুলছাত্র, গৃহবধু সহ মোট ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। সাপে কাটার পর ভুক্তভোগিরা জেলার সদর হাসপাতাল সহ অন্যান্য ৪ টি উপজেলা হাসপাতাল ঘুরে কোথাো কোন ভ্যাকিসন বা সাপের এন্টিভেনম খুজে পাননি ফলে চিকিৎসাবিহীন মারা গেছেন সব কজন রোগী। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো স্বজনদের চিকিৎসাহীন মৃত্যু দেখেছে অসহায়েরমত দ্বাড়িয়ে থেকে। তাদের দু:খ, ক্ষােভ, রাগ রাখার যেন কোন জায়গা নেই। ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার সীমান্ত এলাকা বড়পলাশবাড়ী ইউনিয়নের কদমতলা গ্রামের বাসিন্দা ইসরাইল উদ্দীন। তার ছোট ছেলে ৫ম শ্রেণির ছাত্র সাকিবুল ইসলামকে গত শুক্রবার বিকেলে কামড় দেয় বিষধর সাপ। চিকিৎসার জন্য একের পর এক ৪ টি হাসপাতালে গিয়েও পাননি সাপের বিষমুক্ত করার ভ্যাকসিন। পরে দিনাজপুর মেডিকেলে নেওয়ার পথে রাস্তায় মারা যায় তার ছেলে। সাকিবুল বড়পলাশবাড়ী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির ছাত্র। শনিবার ৯ আগস্ট বিকেলে জানাজা শেষে সাকিবুলকে দাফন করা হয়েছে। ছেলের মৃত্যুর শোকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন মা। দুই দিন ধরে চিকিৎসা চলছে তার। স্থানীয় ও পরিবার সূত্রে জানা গেছে, বিকেলে বাড়ির পাশে একটি দোকানে মোবাইল ফোন চালানোর সময় হঠাৎ দোকানের ছাউনি থেকে বেরিয়ে এক বিষধর সাপ কামড় দেয় সাকিবুলকে। তাকে অসুস্থ অবস্থায় বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে সাপের ইনজেকশন (অ্যান্টিভেনম) না থাকায় ঠাকুরগাঁও ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। সেখানেও সাপের ইনজেকশন না থাকাই দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হলে যাওয়ার সময় পথিমধ্যে ১০ মাইল নামক স্থানে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন সাকিবুল। নিহতের বাবা ইসরাইল উদ্দীন বলেন, চারটা হাসপাতালে নিয়ে গেছি। বালিয়াডাঙ্গী হাসপাতাল থেকে হরিপুর, এরপরে ঠাকুরগাঁও জেনারেল হাসপাতাল। সেখানেও ভ্যাকসিন না পেয়ে দিনাজপুরের বীরগঞ্জ হাসপাতাল নিয়ে গেলাম রাত তখন ১০টা বাজে। সেখানেও ভ্যাকসিন নেই, দিনাজপুর মেডিকেলে নেওয়ার পথে আমার ছেলে কোলে মারা গেছে। বাবা হয়ে ছেলেকে বাঁচাতে পারিনি। আর যেন কোনো বাবার বুক খালি না হয়। এ বিষয়ে সরকারকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করেন তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্কুলছাত্র সাকিবুলের মতো ঠাকুরগাঁও জেলায় গত দুই সপ্তাহে পীরগঞ্জের ৭ম শ্রেণির স্কুলছাত্র তারেক, রাণীশংকৈলের কলেজছাত্র মোকসেদ আলী, হরিপুরে গৃহবধু সম্পা রানীসহ ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে বিষধর সাপের কামড়ে।
মৃতদের স্বজনরা বলছেন, জেলা ও উপজেলার হাসপাতালগুলোতে সাপের বিষমুক্ত করার ভ্যাকসিন (এন্টিভেনম) না থাকায় মারা গেছে এসব রোগী। সম্পা রাণীর স্বামী জিতেন বলেন, সকালে সাপে কামড়ানোর পর হরিপুর, রাণীশংকৈল এবং সবশেষ ঠাকুরগাঁও হাসপাতালে নিয়ে গেছি। কিন্তু ভ্যাকসিন পাইনি। নিরুপায় হয়ে ওঝার কাছে নিয়ে গেছি। এর পরেও স্ত্রীকে বাঁচাতে পারিনি। 
দেড় বছরের একটা ছোট বাচ্চাকে নিয়ে খুব কষ্টে দিন কাটাচ্ছি। স্থানীয় এক পল্লী চিকিৎসক বলেন, বর্ষার সময়ে প্রতি বছর ঠাকুরগাঁও জেলায় ১০-১৫ জন সাপের কামড়ে মারা যায়। এজন্য হাসপাতালগুলো ভ্যাকসিনের চাহিদা পাঠায়। এরপরে যখন ভ্যাকসিন হাসপাতালে এসে পৌঁছায়, তখন বর্ষা শেষ।
স্বাস্থ্য বিভাগের উচিত ইউনিয়ন-উপজেলা ও জেলা শহরের হাসপাতালগুলোতে বর্ষার আগেই ভ্যাকসিন মজুদ রাখা। বলা যায় না কখন কি হয়।
ঠাকুরগাঁও সিভিল সার্জন ডা. মো. আনিছুর রহমান বলেন, চাহিদা পাঠানোর পরও এন্টিভেনম দেয়নি। পরে কথা বলে জানা গেছে, কেন্দ্রীয় ঔষধাগারেও এন্টিভেনম সংকট। আমরা চেষ্টা করছি নিয়ে আসার। সাপের কামড়ে মৃত্যুর এই ধারাবাহিক ঘটনায় আতঙ্কিত জেলার গ্রামাঞ্চলের মানুষ। চিকিৎসক ও সচেতন মহলের দাবি, এন্টিভেনমের সংকট নিরসনে অবিলম্বে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে, যাতে একটি প্রাণও এমনভাবে ঝরে না যায়।
বিভাগ

Top Post Ad

Hollywood Movies