ইব্রাহীম মিঞা, বিরামপুর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি : দিনাজপুরের বিরামপুর ‘ময়ূরাক্ষী’ পুকুরপাড় এখন আর শুধু একটি জলাশয় নয়—এটি একটি জীবন্ত উদাহরণ, কীভাবে পরিকল্পিত উন্নয়ন, প্রাকৃতিক ভারসাম্য আর মানুষের অংশগ্রহণ মিলিয়ে একটি এলাকা হয়ে উঠতে পারে দর্শনীয় ও প্রাসঙ্গিক। এ যেন প্রকৃতি ও আধুনিকতার এক সম্মিলিত উৎসব।
দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলা পরিষদ চত্বরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত ‘ময়ূরাক্ষী’ নামের সুসজ্জিত পুকুরপাড় এখন এক নতুন রূপে আবির্ভূত হয়েছে। এখানে প্রকৃতি, স্থাপত্য, আলোকসজ্জা আর জীববৈচিত্র্য মিলেমিশে সৃষ্টি করেছে এক অনন্য পরিবেশ, যেখানে প্রতিদিন মানুষ পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসছে, সময় কাটাচ্ছে এবং প্রকৃতির সান্নিধ্যে নিজেদের হারিয়ে ফেলছে।
‘ময়ূরাক্ষী’ নামটি দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার নুজহাত তাসনীম আওন। তাঁর উদ্যোগ ও নেতৃত্বেই ৩০ জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে পুকুরটি সংস্কার ও সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ শুরু হয়। সহযোগিতায় ছিলেন উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা ও বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
এই পুকুরের চারপাশেই রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও দৃষ্টিনন্দন কাঠামো। দক্ষিণ পাশে রয়েছে মুক্তমঞ্চ, যার শুভ উদ্বোধন করেন দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক মোঃ রফিকুল ইসলাম । পশ্চিম-দক্ষিণ পাশে নির্মিত হয়েছে অফিসার্স ক্লাব ও উপজেলা শিল্পকলা একাডেমির বর্ধিত ভবন ।
পশ্চিম পাশে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে আধুনিক স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত উপজেলা মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। চারপাশে রয়েছে প্রশস্ত দৃষ্টি নন্দন হাঁটার রাস্তা, শিশুদের খেলাধুলার নানা সামগ্রী, আর সারি সারি পাতাবাহার, ফুল ও ফলজ গাছ।
সন্ধ্যার পর খেজুর ও অন্যান্য গাছে আলোর ঝলকানি, বাতিতে স্নিগ্ধ আলো—পুরো এলাকা হয়ে ওঠে রূপকথার আলো ঝলমলে এক লীলাভূমি। পুকুরে বড় বড় দেশি মাছের পাশাপাশি সম্প্রতি দেখা গেছে বিদেশি প্রজাতির বালি হাঁসের পরিবার—একটি জোড়া ও তাদের ১৭টি ছানা। এছাড়াও, ডাহুক, শালিকসহ নানা পাখির আগমন ঘটছে প্রতিনিয়ত। এটি নিঃসন্দেহে প্রমাণ করে—পরিবেশটি জীববৈচিত্র্যের জন্য সহায়ক এবং স্বস্তিদায়ক। এখানে বইছে সতেজ, নির্মল বাতাস। চারপাশের গাছপালা থেকে ছড়ায় পরিশুদ্ধ অক্সিজেন। মানুষ যখন প্রকৃতির এমন পরিবেশে কিছুক্ষণ হাঁটে বা বসে থাকে—তখন মানসিক প্রশান্তি ও প্রশান্তির অনুভব জাগে।
মুক্তমঞ্চে প্রায়শই বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শিশু-কিশোরদের পরিবেশনা কিংবা জাতীয় দিবস উপলক্ষে আয়োজন অনুষ্ঠিত হয়।
এর ফলে ‘ময়ূরাক্ষী’ কেবল প্রকৃতির নয়, সাংস্কৃতিক চর্চারও প্রাণকেন্দ্র হয়ে উঠছে। স্থানীয় বাসিন্দা শাহিনুর ইসলাম বলেন “এই পুকুরপাড়ে হাঁসের খেলা, বড় মাছের নাচ আর চারপাশের আলো দেখে মনে হয় আমরা যেন অন্য এক জগতে এসেছি। পরিবার নিয়ে আসার জন্য এর চেয়ে ভালো স্থান বিরামপুরে নেই।” পুরো এলাকা সিসি ক্যামেরা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, রয়েছে নিয়মিত পরিচ্ছন্নতার ব্যবস্থা। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে রয়েছে ‘সংযত আচরণ প্রদর্শনের অনুরোধ’—যাতে পরিবেশটি সবাই উপভোগ করতে পারে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার নুজহাত তাসনীম আওন বলেন,“এই পরিবেশটিকে আমরা আরও প্রাণবন্ত ও নিরাপদ রাখতে চাই। ভবিষ্যতে আরও বেঞ্চ, ক্যাফে ও খেলার সরঞ্জাম সংযোজনের পরিকল্পনা রয়েছে।