Type Here to Get Search Results !

জনবল ও ওষুধের অভাবে ভুগছে খানসামা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ

এস.এম .রকি, খানসামা (দিনাজপুর) প্রতিনিধি : দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ চরম জনবল সংকট ও ওষুধের অভাবে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। ফলে পরিবার পরিকল্পনা সংশ্লিষ্ট সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন উপজেলার সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে নারী ও কিশোরীরা। জানা গেছে, ০৬ টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত খানসামা উপজেলায় প্রায় আড়াই লক্ষ মানুষের বসবাস। এসব মানুষের সেবায় এই উপজেলায় একটি মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র এবং তিনটি ইউনিয়ন সাস্থ ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র রয়েছে। যেগুলোতে সরকারি ছুটি ব্যতীত প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত সপ্তাহে ৬ দিন এসব স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি, প্রসবপূর্ব সেবা, প্রসবকালীন সেবা, নবজাতকের পরিচর্যা, ০-৫ বছরের শিশু স্বাস্থ্যসেবা, কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্য ও প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা, সাধারণ রোগের চিকিৎসা কার্যক্রমসহ ২৫ রকমের ওষুধ বিনা মূল্যে সরবরাহ করার কথা কিন্তু জনবল ও ঔষধ সংকট এর চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) দুপুরে উপজেলার ১০ শয্যা বিশিষ্ট খানসামা মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র এবং গোয়ালডিহি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ঘুরে দেখা যায়, মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রসহ ০৩ টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র থাকলেও অধিকাংশ কেন্দ্রে দীর্ঘদিন ধরে জনবল সংকট রয়েছে। যারা কর্মরত আছেন, তারাও অতিরিক্ত কাজের চাপে পর্যাপ্ত সেবা দিতে পারছেন না। অন্যদিকে এর মধ্যে গত সাত মাস ওষুধ সরবরাহ না থাকায় মুখ থুবড়ে পড়েছে চিকিৎসাসেবা। প্রয়োজনীয় জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী ও ওষুধের ঘাটতির কারণে স্বাস্থ্য সহকারীরাও সেবা প্রদানে হিমশিম খাচ্ছেন। এতে মা ও শিশু স্বাস্থ্যসেবা যেমন ব্যাহত হচ্ছে, তেমনি বাড়ছে অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণের ঝুঁকি। উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, খানসামা ১০ শয্যা মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে মোট অনুমোদিত পদের সংখ্যা ১৩টি, সেখানে কর্মরত আছেন মাত্র ৬ জন। এখানে ২ জন মেডিকেল অফিসারের পদ থাকলেও উভয় পদই দীর্ঘদিন ধরে শূন্য। ফলে স্বাস্থ্যকর্মীরাই কোনোরকমে সেবা চালিয়ে যাচ্ছেন। অন্যদিকে আল্ট্রা সেবা বন্ধ থাকায় গর্ভবতী মায়েরা বিপাকে। অন্যদিকে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ল্যাব) পদে একজন কর্মরত থাকলেও যন্ত্রপাতি না থাকায় প্যাথলজি সেবা মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। এতে প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেবা নিতে গিয়ে রোগীদের বাড়তি খরচ গুণতে হয়। সেই সাথে এখানে উন্নয়ন খাতে নিয়োগে পাওয়া সহকারী নার্স প্রায় এক বছর থেকে বেতন না পেয়ে কষ্টে রয়েছেন। অন্যদিকে ভেড়ভেড়ী পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে ৫ পদের বিপরীতে কর্মরত ২ জন, খামারপাড়ায় ৫ পদের বিপরীতে ৩ জন এবং গোয়ালডিহি মডেল পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে ৯ পদের বিপরীতে রয়েছেন মাত্র ৪ জন কর্মী। নিরাপদ প্রসবের জন্য ৪ মিডওয়াইফের পদ থাকলেও কর্মরতের সংখ্যা শূন্য। খানসামা ১০ শয্যা মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে সেবা নিতে আসা গোবিন্দপুর গ্রামের হোসনেয়ারা বেগম ও সুফিয়া খাতুনসহ একাধিক নারী জানান, এমনিতেই তো ডাক্তার নাই তারউপর হাসপাতালে এসে যদি প্রাথমিক ঔষধ এবং সুখী বড়িও পাওয়া না যায়, তাহলে এই হাসপাতাল চালু রেখে কি লাভ? খানসামা ১০ শয্যা মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের ফার্মাসিস্ট ফারজানা মলি বলেন, প্রায় ৭ মাস ধরে ঔষধ সরবরাহ নেই। শুধু শিশুদের পুষ্টিসমৃদ্ধ কিছু ঔষধ রয়েছে। ঔষধ না থাকায় রোগীরা সেবা নিতে এসে আমাদের উপর ক্ষুব্ধ হচ্ছেন। ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে কর্মরত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক স্বাস্থ্যকর্মী বলেন, “একদিকে জনবল নেই, অন্যদিকে মাসের পর মাস ওষুধ ঘাটতি। সেবা নিতে এসে ঔষধ ছাড়া ফেরত গিয়ে রোগী ও রোগীর স্বজনরা আমাদের উপর প্রায়ই ক্ষিপ্ত হচ্ছে।” খানসামা উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ও মেডিকেল অফিসার ডা. হাফিজুর রহমান হারুন বলেন, “আমরা দীর্ঘদিন ধরে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জনবল ও ওষুধ সরবরাহের বিষয়ে লিখিতভাবে জানিয়েছি। কেননা এর প্রভাবে সেবা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে ফলে সেবাগ্রহীতাদের প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হচ্ছে প্রায়ই। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনায় নিয়ে সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।” তবে তিনি আরও বলেন, ঔষধ সরবরাহের বিষয়টি পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরে সাময়িক জটিলতার কারণে বন্ধ রয়েছে। আশা করছি জুলাই মাস থেকে মধ্যে সমস্যার সমাধান হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কামরুজ্জামান সরকার বলেন, “পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত। এ বিষয়ে আমরা সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অবহিত করব। যেন দ্রুত সমস্যা সমাধানে পদক্ষেপ গ্রহণ করে তাঁরা। ” সচেতন মহলের দাবি, জনস্বার্থে দ্রুত জনবল নিয়োগ ও ওষুধ সরবরাহ নিশ্চিত না হলে খানসামা উপজেলার পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম ধ্বসে পড়তে পারে।
বিভাগ