ছাদেকুল ইসলাম রুবেল,গাইবান্ধা : স্বাধীনতার ৫৪ বছরেও উন্নয়নের ছোয়া লাগেনি গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার কিশোরগাড়ী ইউনিয়নের গণকপাড়া গ্রামের সীমানা ঘেঁষে বয়ে যাওয়া করতোয়া নদীর অলিরঘাটে। পাঁচ গ্রামের হাজারো মানুষের একমাত্র ভরসা ঝুঁকিপূর্ণ এই বাঁশের সাঁকো। একটি ব্রীজের অভাবে স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী, অসুস্থ্য রোগি সহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিনিয়ত পারাপার হচ্ছেন।
সম্প্রতি গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার গণকপাড়া গ্রামের আখিরা নদীর অলির ঘাটে গিয়ে দেখা যায়,
কিশোরগাড়ী ইউনিয়নের পশ্চিমের সীমানা ঘেঁষে যাওয়া প্রায় ৬০ বছরের পুরোনো করতোয়া নদীর অলিরঘাট। নদী হতে ঘাটের কিনারা অনেক উচু হওয়ায় নদী পারাপারে রিক্সা-ভ্যান, সাইকেল-মটরসাইকেলসহ অন্যান্য যানবাহন চলাচল করতে পারে না। সাঁকোর পার্শ্বে একটি ডিঙ্গি নৌকা থাকলেও তাতে কোন মাঝি থাকেন না। স্থানীয়া নিজেরাই রশি টেনে যাতায়াত করেন। কিন্তু সেই নৌকাটিও পুরোপুরি ডাঙায় পৌঁছায় না। নৌকা থেকে নেমে হাটু পানি মাড়ে ওপরে উঠতে হচ্ছে মানুষদের। এতে তাদের পোষাক ও জুতা ভিজে যাচ্ছে।
স্থানীয়রা জানায়, ইউনিয়নটির গনকপাড়া, জাফর, মুংলিশপুর, পালপাড়া, শীলপাড়া, জাইতর গ্রামের বিভিন্ন পেশার মানুষ এপার থেকে ওপারে চলাচলের জন্য শুকনা মৌসুমে বাঁশের সাঁকো আর বর্ষা মৌসুমে নৌকা ছাড়া কোন উপায় থাকে না। ঘাট পেড়িয়ে পাশ্ববর্তী দিনাজপুর জেলার ঘোড়াঘাটের দুরুত্ব ২ কিলোমিটার হলেও ব্রিজ না থাকয় ঘুরতে হয় অন্তত ৮ কিলোমিটার রাস্তা। নদীতে পানি বেড়ে গেলে অনেকসময় পারাপারের জন্য নৌকার ব্যবস্থাও থাকে না। তখন ঐ এলাকার মানুষের ভোগান্তি যেন আরো বেড়ে যায়। জনপ্রতিনিধিদের প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পর বছরের পর বছর পেরিয়ে গেলেও নির্মাণ হয়নি একটি ব্রিজ।
তারা আরও জানান, নদীতে পানি বেড়ে গেলে পারাপারের জন্য নৌকার ব্যবস্থাও থাকেনা। তখন সাধারণ মানুষের ভোগান্তি যেন আরো বেড়ে যায়। প্রতিদিন যাতায়াত করা স্কুল-কলেজ শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী, চাকুরীজীবীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ চলাচল করে থাকেন এই অলির ঘাট দিয়ে। বছরের পর বছর পেরিয়ে গেলেও আজও একটি সেতু নির্মাণ হয়নি। এ ভোগান্তি যেন পথচারীদের নিত্য-দিনের সঙ্গী।
স্থানীয় বাসিন্দা বদরুল আলম বলেন, অলির ঘাট পেড়িয়ে পাশ্ববর্তী দিনাজপুর জেলার ঘোড়াঘাটের দুরুত্ব দুই কিলোমিটার, যাতায়াতের বিকল্প রাস্তা ব্যবহারে ঘুরতে হয় অন্তত আট কিলোমিটার রাস্তা। তাই এ ঘাট দিয়ে প্রতিনিয়ত অসংখ্য ছাত্র-ছাত্রী, কৃষকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হতে হয়। সাধারণ মানুষের দাবি এই গুরুত্বপুর্ণ স্থানে একটি ব্রীজ নির্মাণের।
ভুক্তভোগী তৌহিদুল ইসলাম বলেন, আমাদের গ্রামের বেশির ভাগ মানুষ পার্শ্ববর্তী ঘোড়াঘাট ব্যবসা বানিজ্য ও হাট-বাজার করে। তারা অন্য ঘাট দিয়ে পার হয়ে গিয়ে দুপুরে বাড়িতে যখন আসে তখন নদীর ওই পারে গাড়ী, সাইকেল রেখে আসতে হয়।
ইয়াকুব আলী নামের এক ব্যক্তি বলেন, অলির ঘাট নামক এই স্থানে সেতু নির্মাণের জন্য দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছেন এলাকাবাসী। এতে জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় প্রশাসন কথা দিলেও সেই কথা কেউ রাখেনি।
৬ষ্ট শ্রেনীর ছাত্র নয়ন ইসলাম বলেন, সাইকেল কাঁধে করে স্কুলে যেতে হয়। খুব ভয় লাগে। কখন যে সাঁকো থেকে পড়ে যাই। নদীর উপর একটি ব্রীজ নিমার্ন করলে আমার মতো কমপক্ষে শতাধিক শিক্ষার্থী জীবনের ঝুঁকিতে থাকবে না।
কিশোর গাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু বককর সিদ্দিক, আখিরা নদীর উপর ব্রীজটি নির্মান করা হলে পলাশবাড়ী শহর ও ঘোড়াঘাটে খুব সহজেই যেতে পারবে এলাকার মানুষজন। সেই সাথে এলাকা উন্নয়নও হবে। তাই আমি একটি ব্রীজ নিমার্নের জোর দাবি জানাচ্ছি।
পলাশবাড়ী উপেজলা প্রকৌশলী তখন চক্রবর্তী বলেন, ওই এলাকায় একটি ব্রীজ নির্মাণের বিষয়টি আমাদের প্রস্তাবের মধ্য রয়েছে। ইতিমধ্যে হেড অফিস থেকে সার্ভে করাও হয়েছে। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্য একটা ব্যবস্থা হবে।
ব্রীজ টি নির্মান করা হলে জন ভোগান্তি কমার পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী উপজেলা ঘোড়াঘাটের সাথে ব্যবসা বাণিজ্যের ও প্রসার ঘটবে বলে প্রত্যাশা এলাকাবাসির।