ইব্রাহীম মিঞা, বিরামপুর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি : দুই ছেলের লেখাপড়ার খরচ ও সংসারে বোঝা চালাতে প্রতিদিন ট্রেনের ভেতরে হকারি করে জীবিকা নির্বাহ করেন আশফাকুল ইসলাম (৪০)। কখনো পিয়ারা মাখা আবার কখনো আমড়া এছাড়াও বিভিন্ন সময় বিভিন্ন খাবার জিনিস চলন্ত ট্রেনে ফেরি করে সংসার চালিয়ে আসছে সে। আজকেও চলন্ত ট্রেনে উঠতে গিয়ে প্লাটফর্মে বৃষ্টির পানিতে বার্মিজের স্যান্ডেল পিছলে গিয়ে নিচে পড়ে যায় সে। এসময় তাঁর শরীরের সম্পূর্ণ বাম হাত ও বাম পা হাঁটুর নিচ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ঘটনাটি ঘটেছে দিনাজপুরের বিরামপুর রেলওয়ে স্টেশনে ১ নং প্লাটফর্মে।
শনিবার (১৭ মে) দিনাজপুরের বিরামপুর রেলওয়ে স্টেশনের ১ নং প্লাটফর্মে বেলা আনুমানিক ১১ ঘটিকায় রাজশাহী থেকে ছেড়ে আসা চিলাহাটি গামী তিতুমীর ট্রেনটি বিরামপুর রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছানোর পর ছেড়ে যাওয়ার সময় চলন্ত ট্রেনে উঠতে যায় আশফাকুল ইসলাম। এসময় প্লাটফর্মে বাহিরে বৃষ্টি না হলেও কিছুক্ষণ আগে হয়ে যাওয়ায় বৃষ্টির পানি প্লাটফর্মের মেইন গেটে পরতে থাকে এতে করে যাত্রীদের চলাচল ভোগান্তির সৃষ্টি হয়। উক্ত অবস্থায় ছেড়ে যাওয়া ট্রেনে উঠতে গিয়ে প্লাটফর্মে বয়ে যাওয়া বৃষ্টির পানিতে আশফাকুলের পায়ে পড়ে থাকা বার্মিজের স্যান্ডেল পিছলে গিয়ে সে ট্রেনের নিচে পড়ে যায়। এসময় তাঁর শরীরের বাম হাত ও বাম পা বিচ্ছিন্ন হয়ে ১ নং লুপ লাইনের উপর পড়ে থাকে।
বিরামপুর রেলওয়ে স্টেশন মাষ্টার ইসরাফিল ইসলাম বিরামপুর ফায়ার সার্ভিসে ফোন করলে বিরামপুর ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে আশফাকুল ইসলামকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসে। পরবর্তীতে কর্তব্যরত চিকিৎসক আশফাকুল ইসলামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন।
আহত আশফাকুল ইসলাম দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার আলাদিপুর ইউনিয়নের বাড়াইহাট গ্রামের আঃ রাজ্জাকের ছেলে।সে বর্তমানে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাঁর শরীরের ৪ পাউন্ড রক্ত দেওয়া হয়েছে বর্তমানে সে সুস্থ রয়েছেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ফুলবাড়ি উপজেলার আলাদিপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নাসমুশ সাখির বাবলু।
স্থানীয়রা জানান, বিরামপুর রেলওয়ে স্টেশনের প্ল্যাটফর্মটি ও ট্রেনের দরজা থেকে নিচে হওয়ায় প্রায় এধরনের দূর্ঘটনা শিকার হতে হচ্ছে যাত্রীদের। এর আগে গত বছর শনিবার (৯ মার্চ) বিরামপুর রেলওয়ে স্টেশনে ঢাকাগামী দ্রুতযান এক্সপ্রেস ট্রেনে উঠতে গিয়ে বিরামপুর পৌরসভার ৪ নং ওয়ার্ডের শফিকুল ইসলাম নয়ন(৪৫) নামের একজনের মৃত্যু হয়েছে। বর্তমানে যাত্রীদের জন্য এটি একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়াও বিরামপুর রেলওয়ে স্টেশনের নতুন বিল্ডিংয়ের মধ্য দিয়ে প্লাটফর্মে প্রবেশ করতে গিয়ে বৃষ্টির সময় পানিতে ভিজে প্রবেশ করতে হয় যাত্রীদের,স্টেশন মাষ্টারের অফিসের ভেতরে টয়লেটের ফিটিং পাইপ দৃশ্যমান যা দেখতে দৃষ্টি কটু এধরনের বিভিন্ন বিষয়ে একাধিকবার অভিযোগ দিলেও আমলে নেয়নি কর্তৃপক্ষ।সর্বোপরি বিগত সরকারের আমলে আধুনিক রেলওয়ে স্টেশন নির্মাণে বিরামপুর রেলওয়ে স্টেশনের ঠিকাদারের বিভিন্ন কাজের অনিয়মের অভিযোগ তুলেন স্থানীয়রা। বিরামপুর আধুনিক রেলওয়ে স্টেশন নির্মাণে দূর্নীতি ও অনিয়ম রয়েছে কিনা সঠিকভাবে তদন্ত করলে আসল ঘটনা বেরিয়ে আসবে।এবিষয়ে দূর্নীতি দমন কমিশন দুদক এর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকার সচেতন মহল।