ইব্রাহীম মিঞা, বিরামপুর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি : প্রতিদিনের ন্যায় সংসার ও ছেলের লেখাপড়ার খরচ যোগাতে বিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মিলন ইসলাম বিক্রি করছিলেন বাদাম ভাজা ও মাখা। অটোরিকশাসহ বিভিন্ন যানবাহন যোগে অনেকেই আসে বিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা সেবা নিতে। অটোরিকশায় করে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত একজনের লাশ হাসপাতালে আসলে লাশটি দেখতে ভাজা ও মাখার দোকান রেখে দেখতে যায় মিলন ইসলাম। লাশটির কাছে গিয়ে পরনের প্যান্ট ও রক্তাক্ত এসএসসি পরীক্ষার্থী ছেলের মুখ দেখে চমকে উঠে মিলন ইসলাম।এমন ঘটনাটি ঘটেছে দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।
রবিবার (২০ এপ্রিল) আনুমানিক সাড়ে ১০ ঘটিকায় বিরামপুর পৌরশহরের দোয়েল মোড় এলাকায় মহাসড়কে মোটরসাইকেলের পেছনে মিনি পিকাপের ধাক্কায় একজন নিহতের ঘটনা ঘটে। স্থানীয়রা জানায়, মোটরসাইকেল আরোহীকে মাছবাহী দ্রুতগামী একটি পিকআপ ধাক্কা দিলে মোটরসাইকেলের পেছনের আরোহী ঘটনাস্থলে পড়ে যায়। এতে করে মোটরসাইকেল পেছনের আরোহী গুরুতর জখম হলে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয় এবং মোটরসাইকেল চালক সামান্য আহত হন। গুরুতর আহত অবস্থায় স্থানীয়রা হাসানকে বিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাহাজুল ইসলাম তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
মৃত হাসান (১৭) বিরামপুর পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ডের চকপাড়া গ্রামের (লিচু বাগান সংলগ্ন এলাকার) মিলন ইসলামের ছেলে।সে এবার বিরামপুর আমানুল্লাহ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মানবিক বিভাগ হতে চলমান ২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থী। তাঁর বাবা পেশায় একজন বাদাম ভাজা ও মাখা ব্যবসায়ী।সে প্রতিদিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দোকান দিয়ে বেচাকেনা করে সংসারের খরচ ও ছেলের লেখাপড়ার খরচ চালায়। আজকে চোখের সামনে মাখা বিক্রিরত অবস্থায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসএসসি পরীক্ষার্থী ছেলের লাশ দেখে তাঁর বাঁচার স্বপ্নগুলো টুকরো টুকরো হয়ে যায়।
মৃত হাসানের বন্ধু মোটরসাইকেল চালক ফুয়াদ আহমেদ নাইমের সাথে কথা বলে জানা যায়, সকালে দুই বন্ধু হাসান ও ফুয়াদ আহমেদ নাইম একসাথে Gixxer মোটরসাইকেল নিয়ে মহাসড়ক দিয়ে অবসর মোড়ের দিকে যাচ্ছে ঘুরে বেড়ানোর জন্য।এমন সময় তাঁরা মহাসড়কের দোয়েল মোড় এলাকার কাছাকাছি যায়গায় পৌঁছালে পেছন থেকে একটা মাছবাহী দ্রুতগামী পিকাপ তাঁদের ধাক্কা দিলে এ দূর্ঘটনা ঘটে। এঘটনায় মোটরসাইকেল আরোহী হাসান মারা যায় ও মোটরসাইকেল চালক নাইম সামান্যতম আহত হন।আহত ফুয়াদ আহমেদ নাইম একি এলাকার নিয়ামুল হক ভোলা এর ছেলে।সে কলেজিয়েট উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণীর ছাত্র।
সড়ক দূর্ঘটনায় স্থানীয় সচেতন মহলে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়। এতো অল্প বয়সে সন্তানদের হাতে মোটরসাইকেল তুলে না দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন তাঁরা অভিভাবকদের। তাঁরা বলেন, অভিভাবকদের উচিত মহাসড়কে সন্তানদের মোটরসাইকেল দেওয়ার আগে মোটরসাইকেল চালানোর জন্য ড্রাইভিং লাইসেন্স করে দেওয়া, হেলমেট পরিধান করে মোটরসাইকেল ড্রাইভ করছে কিনা তা নিশ্চিত করা। নিয়ন্ত্রণহীন ভাবে মোটরসাইকেল চালাচ্ছে কিনা এবিষয়ে খোঁজ খবর নেয়া।এমন দূর্ঘটনায় একজন খেটে খাওয়া বাবার স্বপ্ন যেমন শেষ হয়ে যায় অনেকেই হারিয়ে ফেলে তাঁর প্রিয় বন্ধু ও সহপাঠীকে। সড়ক দুর্ঘটনায় হাসানের মৃত্যুর সংবাদে নিমিষেই অর্ধ শতাধিক শিক্ষার্থী ও আত্মীয়স্বজন এলাকাবাসীর উপস্থিতি ভারি হয়ে ওঠে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবেশ। সড়ক দুর্ঘটনায় হঠাৎ মৃত্যু কেউই মেনে নিতে পারছে না।
বিরামপুর থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি মমতাজুল হক এর সাথে মুঠোফোনে কথা বললে তিনি বলেন,সড়ক দুর্ঘটনায় এসএসসি পরীক্ষার্থী হাসান নামে এক জন মারা গিয়েছে। এবিষয়ে সড়ক পরিবহন আইনে মামলা করা হবে। দাফনের জন্য মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।