Type Here to Get Search Results !

৩টি গাভী দিয়ে শুরু : বর্তমানে সফলতার জীবন যাপন

ইব্রাহীম মিঞা, বিরামপুর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি : বিদেশ ঘুরে এসে নিজ দেশেই ৩টি বিদেশী গাভী নিয়ে শুরু করেন একটি ডেইরি ফার্ম করার স্বপ্ন পূরণের লক্ষে যাত্রা।
বর্তমানে দেড় কোটি টাকার ডেইরী ফার্ম, এতে রয়েছে ছোট-বড় মিলে প্রায় ২৮টি বিদেশী গরু এবং আধুনিক একটি খামারের সব উপকরণ। দিনাজপুর বিরামপুর উপজেলার টাটাকপুর গ্রামের মেসার্স মন্ডল ডেইরী এগ্রো ফার্মের সফল উদ্যোক্তা আসাদুজ্জামান মুক্তা ১৯৯৫ সালে বিদেশে পাড়ি দিয়েছিলেন জীবিকার তাগিদে পরবর্তীতে ২০০১ সালে দেশে ফিরে ছোট-বড় অনেক উদ্যোগই নিয়েছিলেন তিনি কিন্তু কোনটাতেই ভালো কিছু করতে পারেননি।
২০১২ সালে ৬ লক্ষ টাকায় ৩টি বিদেশী গাভি নিয়ে নিজ বাড়িতে শুরু করেন ডেইরী ফার্ম করার স্বপ্ন পূরণের লক্ষে যাত্রা। আসাদুজ্জামান মুক্তার নিকট তার সফলতার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন,১৯৯৬ সালে জীবিকার তাগিদে পাড়ি দিয়েছিলেন মালোয়েশিয়ায় ৫ বছর পর ২০০১ সালে দেশে ফিরে প্রথমে হাঁসের খামার করেন ৩ বছর। এরপর লেয়ার মুরগি ২বছর ও ব্রয়লার মুরগির খামার করেন ৩ বছর এতেও ভালো কিছু করতে না পেরে পরবর্তীতে ২ বছর ধরে ঔষধ ও ফিডের ব্যাবসা করেন। অবশেষে ২০১২ সালে নিজ উদ্যোগে ৩ টি ফ্রিজিয়ান (বিদেশি) গাভীর ১টি আড়াই লক্ষ ও ২ টি সাড়ে তিন লক্ষ মোট ৬ লক্ষ টাকায় ক্রয় করে নিজ বাড়িতে শেড করে লালন পালন করেন তিনি ।গাভীগুলো বাছুর প্রসব করলে সেই গাভীর দুধ বিক্রয় করে ভালো লাভবান হন তিনি।
২০১৯ সালে নিজের ৩৩ শতক জমিতে ২৮ লক্ষ টাকা ব্যায়ে আধুনিক ডেইরী ফার্ম গড়ে তুলেন। বর্তমানে তার এই আধুনিক ডেইরী ফার্ম দেখার জন্য বীভিন্ন প্রজেক্টের আওতায় বিরামপুর উপজেলা ও পার্শ্ববর্তী উপজেলাসহ বিভিন্ন জেলা হতে শত শত মানুষ আসেন তার ফার্ম থেকে অনেক কিছু শেখার ও জানার জন্য। তিনি তার ফার্মের নাম রেখেছেন মেসার্স মন্ডল ডেইরী এগ্রো ফার্ম ।এই ফার্মটি সম্পূর্ণ সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে তিনি ঘরে বসে দেখে থাকেন এখানে রয়েছে দুধ দহনের জন্য আধুনিক মিল্কিং মেশিন, অত্যাধিক গরমে ঝর্ণার মত গাভীর শরীরে পানি দিয়ে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা,গাভীর শরীরে ঘোষার জন্য ব্রাশ, গরুর খাদ্য তৈরি ও প্রক্রিয়াজাতকরণের মেশিন, গরুর অবাধ চলাচলের জন্য যথেষ্ট পরিমাণে ফাঁকা জায়গা, সর্বোপরি গরুগুলোকে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা হয় না।
তার এই ফার্ম দেখাশোনার জন্য রয়েছে ১৫ হাজার টাকা বেতনের ৪ জন কর্মচারী তারা সর্বদা গরুগুলো দেখাশোনা করে থাকেন।
কেউ গরুর দুধ দহনে,কেউ গরুর গোবর তোলে বায়োগ্যাস প্ল্যান্টে ফেলাতে,গরুর গোসল করানো,ট্রলিতে করে নিজ জমি থেকে ঘাস কেটে আনায় ব্যাস্ত থাকেন তারা। মন্ডল ডেইরী ফার্ম এর সত্বাধিকারী আসাদুজ্জামান মুক্তা জানান, তার এই ফার্ম থেকে প্রতিদিন ১২০ থেকে ১৫০ লিটার দুধ বিক্রয় করা হয়। এই দুধ গুলো বিরামপুর পাবনা মিষ্টির কারখানায় ৫০-৬০ টাকা দরে পাইকারি দিয়ে থাকেন। এছাড়াও বিকেলে এলাকার অনেকেই ফার্ম থেকে দুধ সংগ্রহ করেন। তিনি তার ফার্মের গোবর দিয়ে বায়োগ্যাস প্ল্যান্টের মাধ্যমে বাড়িতে রান্নার জন্য বায়োগ্যাস প্লান্ট স্থাপন করেছেন। অতিরিক্ত গোবর জৈব সার হিসেবে নিজের আবাদকৃত জমিতে ব্যবহারের পর অতিরিক্ত জৈব সারগুলো ৬ শত টাকা ট্রলি হিসেবে বিক্রয় করেন। এছাড়াও গরুর জন্য নিজের ৬ বিঘা জমিতে ঘাস ও ১০ বিঘাতে ২ বার ভুট আবাদ করে এবং এগুলো নিজের হাইড্রোলিক মেশিনে স্লাইস করে প্রক্রিয়াজাত করেন এবং মাংসের জন্য ও অধিক দাম পাওয়ার আশায় গরু মোটাতাজাকরণ করে বেচাকেনা করে থাকেন তিনি। বর্তমান তার ফার্মে ১৮ টি ফ্রিজিয়ান ও ২ টি শাহিওয়াল গাভী রয়েছে এর মধ্যে ১৮ টি গাভীর গাভ অবস্থা এবং ৮ টি বাছুর রয়েছে এসব মিলে মোট ২৮ টি ফ্রিজিয়ান (বিদেশী) গরু রয়েছে।
আসাদুজ্জামান মুক্তা বলেন, প্রতিদিন তার ফার্মে ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা খরচ হয় এবং এ ফার্ম থেকে মাসে প্রায় দুই লক্ষ টাকা আয় হয়ে থাকে তার। মাত্র ৫ বছরে ৬ লক্ষ টাকা দিয়ে কঠোর পরিশ্রম ও বিরামপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাদের সঠিক পরামর্শে আজ সফলতা অর্জন করেছেন তিনি।ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, একটি মানসম্মত দই ও মিষ্টান্ন ভান্ডার করার ইচ্ছা রয়েছে তার।
বিরামপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ বিপুল কুমার চক্রবর্তী বলেন, মন্ডল ডেইরী ফার্ম বিরামপুর উপজেলার মধ্যে একটি আধুনিক ডেইরী ফার্ম। আসাদুজ্জামান মুক্তা আজকে এই অবস্থায় পৌঁছেছেন একমাত্র তাঁর কঠোর পরিশ্রম ও সবসময় প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাদের সঠিক পরামর্শে অনুযায়ী কাজ করার কারণে।
বিভাগ