Type Here to Get Search Results !

হরিপুর সীমান্তে অনুষ্ঠিত হলো দুই বাংলার মিলন মেলা

শেখ শমসের আলী, পীরগঞ্জ প্রতিনিধি : প্রতি বছরের মতো এ বছর ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর সীমান্তে দুই বাংলার মিলন মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ শুক্রবার হাজারো মানুষের এ মিলন মেলায় অনেকের চোখে ছিল আনন্দের অশ্রু। জেলা শহর থেকে প্রায় ৫৫ কিলোমিটার দূরে হরিপুর উপজেলার ভাতুরিয়া ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামে জামোরকালি জিউ মন্দির কমিটি পাথরকালী মেলা উপলক্ষে প্রতিবছর এই মিলন মেলার আয়োজন করে। স্বজনরা প্রতিবছর অপেক্ষা করেন এই দিনটিতে নিকটাত্মীয়ের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের। লাখো লোকের ভিড়ে অনেকে নিজ স্বজনকে খুঁজতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় পার করেন।
বিভিন্ন জেলা থেকে আসা হাজার হাজার নারী-পুরুষ আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে দেখা করতে সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই ভিড় করেন সীমান্তে। স্থানীয়রা বলেন, ব্রিটিশ আমল থেকেই সীমান্তঘেঁষা গোবিন্দপুরের এই মেলা পাথরকালী মেলা নামে পরিচিত। প্রতিবছর এখানে একদিনের জন্য এই মেলা বসে। দেশ স্বাধীনের পর মেলাটি বাংলাদেশের অংশে পড়লেও ভারতীয়দের অংশগ্রহণের জন্য ওইদিন সীমান্ত উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। সাধারণত কালীপূজার পর ডিসেম্বর মাসের প্রথম শুক্রবার এ মেলা বসানো হয়। প্রতিবছরের মতো এবারও আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে কয়েকদিন ধরেই দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজার হাজার মানুষ স্থানীয় আত্মীয়স্বজনদের বাড়িতে আশ্রয় নেয়। মেলাস্থলে কথা হয় দিনাজপুর উপজেলার কমল চন্দ্র রায় (৬৫) সঙ্গে। তিনি জানান, ভারতের রায়গঞ্জে তার বড় ভাই নিখিল চন্দ্রের বাড়ি। দেশ স্বাধীনের আগে তার বড় ভাই ভারতে চলে যান। তাই ভাই ও ভাইয়ের ছেলেমেয়েদের সঙ্গে দেখা করতে প্রতিবছর এই মেলায় আসেন তিনি। করিমুল (৫৭) জানান, মালদার কালিয়াচোখ থানায় তার ভাগ্নে আশরাফ আলী (৩৫) থাকেন। দেশ স্বাধীনের আগে তার বোনের ভারতে বিয়ে হয়। বোনের শ্বশুরবাড়িতে যাওয়া হয়নি। তাই এখানে এসেছেন সবার সঙ্গে দেখা করতে।
স্থানীয়রা জানান, দুই একদিন আগে থেকেই বিভিন্ন আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে একত্রিত হতে শুরু করে লোকজন। ভোর থেকে দুই দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষেরা এসে জড়ো হন সীমান্তের এই মেলায়। দুই দেশ তথা ভারত বাংলাদেশের মানুষজন দীর্ঘদিন বিচ্ছিন্ন থাকায় একে অপরের সঙ্গে মিলিত হবার এ সুযোগ হাতছাড়া করতে চায়নি বলে ছুটে আসে স্বজনদের টানে।
বিভিন্ন আত্মীয়-স্বজন দুই বাংলায় থাকলেও বিভিন্ন জটিলতার কারণে দেখা না হলেও এখানে দেখা করার সুযোগ হয় তাদের তাই সারা বছর দু’বাংলার মানুষজন অপেক্ষা করে এই দিনটির জন্য। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে আগে থেকেই জানিয়ে দেয় স্বজনরা। কে কোথায় দেখা করবে এই মিলন মেলায়। জামোরকালি জিউ মন্দির কমিটির সভাপতি ও পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি নগেন কুমার পাল বলেন, মেলাকে কেন্দ্র করে বিজিবি ও বিএসএফের পতাকা বৈঠক হয়েছে। তারাও সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন। এটি এ অঞ্চলের একটি ঐতিহ্য।
বিভাগ