Showing posts with label ফিচার. Show all posts
Showing posts with label ফিচার. Show all posts

বিরামপুরে বাংলার ঐতিহ্য বাঁশের তৈরি শিল্প হারিয়ে যাচ্ছে

চিলাহাটি ওয়েব ডটকম : Sunday, September 17, 2023 | 9/17/2023 12:00:00 PM

ইব্রাহীম মিঞা, বিরামপুর(দিনাজপুর)প্রতিনিধিঃ দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলায় মাহালি পরিবারের করুন অবস্থা, এর একমাত্র কারণ বাঁশের তৈরি শিল্পের প্রতি বর্তমানে মানুষের অনিহা। সরকারী পৃষ্ঠপোষকতার অভাব, বাঁশ চাষে বিমূখতা ও প্লাসটিকের দৌরত্ব এবং পরিকল্পিত উদ্যোগ না থাকায় দিন দিন বিলুপ্ত হতে চলেছে দিনাজপুর জেলার বিরামপুরে বাঁশের তৈরী শিল্প।
একসময়ে বাঁশ শিল্প বাঙ্গালি সংস্কৃতির একটি অংশ হিসেবে বিবেচিত হতো। সেই সময়ে বাঁশ দিয়ে ঘরের নিত্যদিনের কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন জিনিসপত্র তৈরি করা হতো। তখন এসব জিনিসপত্রের কদরও ছিল ভালো। 
সরেজমিনে বিরামপুরের হাটে গিয়ে বাঁশের তৈরী পণ্য বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানাযায়, বর্তমান পণ্যের সাথে পাল্লা দিয়ে টিকে থাকতে না পেরে মুখ থুবড়ে পড়েছে এক কালের ঐতিহ্যবাহী গ্রাম বাংলার এই শিল্প। অপরদিকে উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় অভাব-অনটনের মধ্যে দিনযাপন করছেন বাঁশের তৈরী শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট পরিবার গুলো। পরিবার নিয়ে বেঁচে থাকতে তারা এ পেশাকে ছেড়ে অন্য পেশায় যেতে বাধ্য হচ্ছেন।
ঐতিহ্যবাহী শিল্পকর্মটি দেশ থেকে বিলুপ্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। একসময় সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিভিন্ন গ্রামে বাঁশ দিয়ে চাটাই, কুলা, ডালা, ডুলি, টুকরি, ওড়া, চালুনি, মাছ রাখার খালই, মাছ ধরার চাই, দারকি, বানা, ঝুড়ি, ফুলের টব ও হাঁস-মুরগি-কবুতরের খাঁচা, বসার মোড়াসহ বিভিন্ন জিনিস তৈরি করা হতো। পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও এ কাজে সামিল হতো। এসব তৈরী পন্য হাটবাজার এমনকি বাড়ি বাড়ি ফেরি করে বিক্রি হতো। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে এ শিল্পের মূল উপকরণ বাঁশের সল্পতা, মূল্য বৃদ্ধিতে বাঁশের কারিগররা তাদের পেশা ধরে রাখতে হিমশিম খাচ্ছে। ফলে বেকার হয়ে পড়েছে গ্রামীণ কারিগররা।
বিরামপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম গুলোতে বড় বড় বাঁশ বাগান দেখা গেলেও এখন আর তেমন চোখে পড়ে না।
বিরামপুর সরকারি কলেজের পাশে মাহালি পাড়ার দিলীপ মাহালি জানান, বাঁশের তৈরির জিনিসপত্র এখন আর আগের মতো ব্যবহার হয় না। প্লাস্টিক পণ্যের উপর ঝুঁকছে মানুষ। ফলে এ শিল্প হারিয়ে যেতে বসেছে। বাঁশ শিল্পের সুদিন ফিরিয়ে আনতে সরকারি উদ্যোগ চোখে পড়ছে না।একসময় প্রতিটি বাড়িতেই বাঁশের তৈরি জিনিসপত্রের ব্যবহার ছিল। চাহিদাও ছিল ব্যাপক। রমরমা ব্যবসা ছিল সেই সময়। বর্তমানে আধুনিকতার ছোঁয়ায় প্লাস্টিক পণ্যের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে মুখ থুবড়ে পড়ছে বাংলার ঐতিহ্যবাহী এ শিল্প। ফলে এ শিল্প হারিয়ে যেতে বসেছে।
বাঁশের পন্য ক্রয় করতে আসা মহিউদ্দিন জানান, বাঁশ শিল্পের সুদিন ফিরিয়ে আনতে সরকারি উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। বরংচ পরিবেশ দুষনকারী প্লাস্টিক পন্যেকে উৎসাহিত করা হচ্ছে প্লাস্টিকের পন্য অধিক হারে ব্যবহারের ফলে নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ।পরিবেশ বান্ধব বাঁশ শিল্পে সরকারী উদ্যোগ ও পৃষ্ট পোষকতা না থাকায় একদিকে যেমন কর্মসংস্থান সংকুচিত হচ্ছে অন্য দিকে প্লাস্টিকের অবাধ ব্যহারে পরিবেশ মারাত্বক ভাবে দুষন হচ্ছে । এই পেশার সাথে জরিত দিলীপ মাহালি জানান শত প্রতিকূলতার মাঝেও পুরোনো পেশা ধরে রাখতে হয়েছে।

বেবি তরমুজ চাষে সাফল্য

চিলাহাটি ওয়েব ডটকম : Wednesday, June 14, 2023 | 6/14/2023 03:05:00 PM

আপেল বসুনীয়া, চিলাহাটি ওয়েব : বড় আকৃতির ফল তরমুজ। তরমুজের ওজনের বেশির ভাগই পানি। পানির পরিমাণ বেশি হয়ায় তরমুজ পানি শূন্যতা দূর করে। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম। নিয়মিত তরমুজ খেলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ে, চুলও সুন্দর হয়। প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘এ’ পাওয়া যায়। এ জন্যেই বাংলাদেশের কৃষক ও ভোক্তাদের মধ্যে ফলটির উৎপাদন বৃদ্ধি ও ক্রেতার সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে।
প্রচলিত অনেক প্রজাতির তরমুজের মধ্যে বারোমাসি ‘বেবি তরমুজ’ অন্যতম। মাচা পদ্ধতিতে ‘বেবি তরমুজ’ চাষ করে সাফল্য অর্জন করেছেন দেবীগঞ্জ উপজেলার টেপ্রিগঞ্জ ইউনিয়নের রামগঞ্জ বিলাসীর রাবেয়া বেগম ও তার স্বামী আব্দুস সাত্তার।
পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের অর্থায়ন এবং সেলফ-হেল্‌প এন্ড রিহেবিলিটেশন প্রোগ্রাম (শার্প) এর সার্বিক সহযোগিতায় ১৫ শতাংশ জমিতে মাচা পদ্ধতিতে বেবি তরমুজ চাষ শুরু করেন রাবেয়া।
খরচ হয়েছে ১৪ থেকে ১৭ হাজার টাকা। এ পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে প্রায় ৬০০ টির মতো যার বাজার মূল্য ৩০ হাজার টাকা। প্রাকৃতিক পরিবেশ ও প্রতিকূলতায়
এ জাতের তরমুজের কোনো ক্ষতির সম্ভাবনা না থাকায় সাফল্যের মুখ দেখেছেন তিনি।

পেকিন হাঁস পালন করে দারিদ্র্যতাকে জয় করেছে চিলাহাটির মেরিনা

চিলাহাটি ওয়েব ডটকম : Tuesday, May 30, 2023 | 5/30/2023 06:05:00 PM

আপেল বসুনীয়া, চিলাহাটি ওয়েব : একদিকে স্বামীর সংসারের ঘানি অন্য দিকে নিজের স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দিনরাত কঠোর পরিশ্রম করে সাফল্যের মুখ দেখতে শুরু করেছেন প্রত্যন্ত অঞ্চলের এক নারী উদ্যোক্তা (গৃহিনী) মেরিনা।
স্বামী-সংসারের উপর নির্ভরশীল না হয়ে নিজ পায়ে দাঁড়ানোর লক্ষ্যে হাঁস পালন শুরু করে আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠেছেন তিনি। তার এই প্রচেষ্টা দেখে বাড়তি আয়ের আশায় এলাকার অনেকেই আগ্রহী হচ্ছেন হাঁস পালনে।
বিদেশী জাতের পেকিন হাঁস পালনের খামার করে দারিদ্র্যতাকে জয় করেছেন নীলফামারী জেলার চিলাহাটির ছয় ফুটিয়া গ্রামের মেরিনা বেগম। মেরিনা দম্পতির অনেক আগে থেকেই একজন বড় খামারি হবেন এই স্বপ্ন। এই স্বপ্ন পূরণ করতে বাজার থেকে বেলজিয়াম নামে সাদা রংয়ের কয়েকটি হাঁস কিনে নিয়ে আসে। এ হাস দেখতে অনেক সুন্দর, দ্রুত বর্ধনশীল হওয়ায় ও বাজারে অনেক চাহিদা ও দাম থাকায় হাঁস পালনের স্বপ্ন আরও বেড়ে যায়। তিনি শার্পের ঋণি সদস্য। তিনি জানতে পারেন চিলাহাটি শাখায় সমন্বিত কৃষি ইউনিট এর প্রাণিসম্পদ খাতের আওতায় বিভিন্ন প্রদর্শনী বাস্তবায়ন হচ্ছে। তার স্বপ্নের কথা জানালে পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) এর অর্থায়নে ও কারিগরি সহযোগিতায় ১০০ টি পেকিন হাঁস এর বাচ্চা নিয়ে খামার শুরু করেন। তিনি শার্পের চিলাহাটি শাখা হতে হাঁস পালন বিষয়ক প্রশিক্ষণ নেন।
 পেকিন হাঁস ব্রয়লার টাইপ, দ্রুত বর্ধনশীল হওয়ায় ৬০-৭০ দিনে প্রায় ২-২.৫ কেজি ওজন আসে, যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ৫০-৫৫ হাজার টাকা। খাবার, ঔষধ ও বাচ্চার খরচ বাদে ২৫-৩০ হাজার টাকা লাভ হবে।
স্থানীয় একজন স্কুল শিক্ষক চিলাহাটি ওয়েবকে বলেন- পেকিন জাতের হাঁস দেখতে যেমন সুন্দর, তেমন অল্প সময়ে ওজন আসে, বড় হয়, অন্য হাঁসের তুলনায় বেশি লাভবান হওয়া সম্ভব। আমিও ৫০০ পেকিন জাতের হাঁস পালন করতে চাই।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা: মো: মোজাম্মেল হক চিলাহাটি ওয়েবকে বলেন- শার্পের সমন্বিত কৃষি ইউনিট প্রাণিসম্পদ খাতের মাধ্যমে পেকিন জাতের হাঁস সম্প্রসারণ হচ্ছে। পানিতে না ছেড়েও এ হাঁস পালন করা যায়। এ হাঁস দ্রুত বর্ধনশীল হওয়ায় বেশি আয় করা যায়।
মেরিনা দম্পতির স্বপ্ন, তারা ১০০০ পেকিন জাতের হাঁস এর খামার করবেন। বাচ্চার সরবরাহ বৃদ্ধির জন্য হ্যাচারী গড়ে তুলবেন।

ঐতিহাসিক ১৭ এপ্রিল ও দিনাজপুরের ঘটনাবলী

চিলাহাটি ওয়েব ডটকম : Tuesday, April 18, 2023 | 4/18/2023 05:17:00 PM

বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে ১৭ এপ্রিল এক অবিশ্বরণীয় দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে তৎকালীন কুষ্টিয়া জেলার মেহেরপুর মহকুমার বৈদ্যনাথ তলার আমবাগানে স্বাধীন বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামানুুসারে বৈদ্যনাথ তলার নাম করা হয় মুজিবনগর। আর সরকারের নাম করা হয় মুজিবনগর সরকার। পাকিস্তানিদের হামলা এবং বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তারের পর তাজউদ্দীন আহমদসহ অন্যান্য আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা প্রতিবেশী দেশ ভারতে চলে যান।
সেখানে তারা ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল স্বাধীন সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার গঠন করে। এদিনই রাত ১০টায় প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ ভাষণ প্রদান করেন। পরদিন ১১ এপ্রিল উক্ত ভাষণ আকাশবাণী কলকাতা বেতার, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র, বিবিসি ও ভয়েস অফ আমেরিকায় প্রচার করা হয়। উক্ত সরকারের শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন টাঙ্গাইলের আব্দুল মান্নান এবং স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন দিনাজপুরের অধ্যাপক ইউসুফ আলী এমএনএ।
১৭ এপ্রিল বাংলাদেশ সরকারের শপথগ্রহণকারী মন্ত্রিপরিষদে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাষ্ট্রপতি, সৈয়দ নজরুল ইসলাম উপ-রাষ্ট্রপতি, তাজউদ্দীন আহমদ প্রধানমন্ত্রী, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী, খন্দকার মোস্তাক আহমদ, এএইচএম কামরুজ্জামান, কর্নেল এমএজি ওসমানী প্রধান সেনাপতি।
এ সরকারের নেতৃত্বেই মহান মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয়। তৎকালীন সময়ে আমাদের দেশে অনেক স্থানে বিহারি রিফুজিরা ছিলো সংখ্যাগরিষ্ঠ। ওইসব স্থানে বাঙালিদের ওপর অত্যাচার নির্যাতন শুরু করে ১৯৭১ সালের প্রথম দিক থেকেই। এক্ষেত্রে পাকিস্থানি সেনা বাহিনী সর্বপ্রকার সাহায্য-সহযোগিতা করে। দিন বাড়ার সাথে সাথে বিহারিদের নির্মমতা বাড়তে থাকে। এসময় আমাদের দিনাজপুরেও বিহারীদের অত্যাচার নির্যাতন ভয়াবহ আকার ধারণ করে। আমাদের উত্তর বাংলার সৈয়দপুর ও পার্বতীপুরে প্রচুর বিহারী রিফুজি ছিলো।
দিনাজপুর শহরেও বিহারীদের সংখ্যা অনেক ছিলো। সেই সাথে বাংলার কিছু বেঈমান তাদের সাথে যোগ দেয় বাঙালিদের ওপর আক্রমণে। যার জন্য প্রথম দিকে বিহারীরা একতরফাভাবে হত্যা, মারপিট ও লুটতরাজ করতে থাকে। তাদের এই অপকর্মের কারণে আমরা বাঙালিরাও সংগঠিত হয়ে প্রতিরোধ গড়ি। এই প্রতিরোধ কর্মে তৎকালীন ইপিআর বাহিনীতে কর্মরত বাঙালি সন্তানরা আমাদের সাথে যোগাযোগ করে এবং সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়। এক পর্যায়ে আমাদের দিনাজপুরের সংগ্রামী জনতা এবং ইপিআর বাহিনী সংগঠিত হয়ে পাকিস্থানীদের প্রতিরোধ করে।
বিহারীসহ পাকিস্থানি ইপিআর ও পুলিশ বাহিনীকে দিনাজপুর থেকে বিতাড়িত করে। ফলে দিনাজপুর শহর পরিচালিত হয় আমাদের সর্বদলীয় সংগ্রাম কমিটির নেতৃত্বে। ৩১ মার্চ দিনাজপুর শহরে একটি সর্বদলীয় মিটিং হয়। মিটিংয়ের সিদ্ধান্ত মোতাবেক অধ্যাপক ইউসুফ আলী এমএনএ, গোলাম রহমান, এ এম আই জেড ইউসুফ, গুরুদাস তালুকদার প্রমুখ নেতৃবৃন্দের নামে একটি প্রচারপত্র প্রকাশিত হয় ১ এপ্রিল।
উক্ত প্রচারপত্রে বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত প্রচারিত হয়। তাতে স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার গঠনের দাবি করা হয় এবং সর্বস্তরের মানুষের কাছে মুক্তিযুদ্ধে যোগদানের জন্য আবেদন করা হয়। প্রচার পত্রটি আমরা সর্ব সাধারণের কাছে বিতরণ করি। এই প্রচার পত্রটি কলকাতায় কালন্তর পত্রিকায় ছাপানো হয়। এতে আমাদের দিনাজপুরবাসীর সংগ্রামী কার্যক্রম বিশ্ববাসীর নজরে আসে।
পাকিস্থাানিদের বিতাড়িত করে দিনাজপুর শহর আমাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসি। প্রসাশনিক কাজকর্ম সহ সবই পরিচালনা করতাম সংগ্রাম পরিষদের নেতা কর্মীরা। এরপর কয়েকদিনের জন্য কাঞ্চন ঘাট থেকে ২ মাইল পশ্চিমে ভবানিপুরে আফতাবউদ্দীন সরকারের বাড়িতে জেলা প্রশাসনের সদর দপ্তর স্থানান্তর করা হয়। জেলা প্রশাসন কর্মকর্তারা সরকারের কর্মকান্ড পরিচালনা ও নির্দেশনামা জারি করতে থাকে।
এদিকে পাঁক হানাদার বাহিনী এপ্রিল মাসের শুরুতে ত্রিমুখী আক্রমণ চালায়। এই আক্রমণে আমাদের ইপিআর বাহিনী এবং বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈনিকরা টিকতে পারেননি। এক পর্যায়ে রণভঙ্গ দিয়ে সরে যায়। এ সময় আমরাও বাধ্য হয়ে শহর থেকে সরে পড়ি এবং আমাদের অনেকেই মারাত্মকভাবে মনোবল হারিয়ে ফেলে। এদিকে পাক সেনারা সৈয়দপুর, দিনাজপুর ও পার্বতীপুরে শক্তিশালী ঘাটি করে বসে এবং বাঙালিদের ওপর ভয়াবহ অত্যাচার নির্যাতন শুরু করে। তারা হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাত চালায়।
সৈয়দপুরে প্রকৌশলী ফজলুর রহমানকে স্ত্রী ও তিন পুত্রসহ একই পরিবারের ৫ জনকে নির্মমভাবে হত্যা করে। ফজলুর রহমানের স্ত্রী হোসনে আকতারকে বেয়নেট চার্জ করে পাকিস্থানি নরপশুরা মাটিতে জীবন্ত পুতে ফেলে। ঘাতকরা চিরিরবন্দরে মাহতাব বেগকে হত্যা করে তার দেহ থেকে মাথা ছিন্ন করে সেই মাথা নিয়ে উল্লাস করে।
দিনাজপুর শহরেও প্রখ্যাত সঙ্গীত শিল্পী সতীস চন্দ্র সরকারকে প্রথমে দুই চোখ উপড়ে ফেলে। তারপর নির্যাতন করে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করে। হত্যা করে ব্যাংক কর্মকর্তা সজিরুদ্দীন, অধ্যাপক ওয়াহিদুর রহমান, প্রকৌশলী ওবায়দুল হক,ডা. এম এ জব্বার, ইসমাঈল হোসেন পল্টু, অধ্যাপক সুমঙ্গল কুন্ডু, হাবিবুর রহমান এডভোকেট, ছাত্র নেতা আসাদুল হক, শাহনেওয়াজ, অধ্যাপক সোলায়মান, আব্দুস সালাম, জহুরুদ্দীন মোক্তার, মো. আমীর আলী সহ অসংখ্য মানুষকে। এই কাজে তাদের সহযোগিতা করে বাঙালি জামাত মুসলিম লীগের নেতা কর্মীরা।
এতে আমাদের নেতা কর্মীদের মধ্য কিছুটা ভীতি ও হতাশা সৃষ্টি হয়। অনেকেই মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ে। তবে অধিকাংশ নেতা কর্মী আপোষহীন মনোভাব নিয়ে স্বাধীনতা যুদ্ধের জন্য জনমত গঠনের চেষ্টা চালিয়ে যায়। কিন্তু এই সময়ে এমন কিছু সংবাদ বিভিন্নভাবে পাই যা মনকে উৎসাহিত করে, অনুপ্রাণিত করে। যার ফলে আরো সাহসী হই। এই সময়ে এপ্রিল মাসের ১১ তারিখে একটি সংবাদ পাই যে, স্বাধীনতার জন্য একটি সরকার গঠিত হয়েছে।
আরো সংবাদ পাই, উক্ত সরকারের রাষ্ট্রপতি করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে এবং উপ-রাষ্ট্রপতি করা হয়েছে সৈয়দ নজারুল ইসলামকে এবং প্রধানমন্ত্রী করা হয়েছে তাজউদ্দীন আহমদকে। এসব সংবাদ আমাদের মনে সাহস এবং শক্তি যোগাতে থাকে। আমরা পুরোদমে মুক্তিযুদ্ধের জন্য সংগঠিত এবং প্রস্তুুত নিতে থাকি। এসময়ে এপ্রিল মাসের ১৭ তারিখে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে জানতে পারি আমাদের সরকারের শপথ গ্রহণের কথা।
শপথের সংবাদ পাওয়ার পর আমাদের মধ্যে আনন্দের ঢেউ জাগে। এতে আত্মবিশ্বাসী হই যে আমাদের বিজয় অনিবার্য। আমরা আরো সংবাদ পাই, উক্ত অনুষ্ঠানে স্বাধীনতা ঘোষণা পাঠ করেন দিনাজপুরের নেতা অধ্যাপক ইউসুফ আলী এমএনএ।
সরকার গঠনের সংবাদ এবং পাকিস্থানীদের অত্যাচার নির্যাতনে ক্ষোভে প্রতিশোধ স্পৃহায় মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য সহকর্মী ও বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে মাতৃভূমি ত্যাগ করে প্রতিবেশী দেশ ভারতে যাই। সেখানে গিয়ে সাত নম্বর সেক্টরে প্রশিক্ষণ নিয়ে স্বদেশে ফিরে আসি এবং পাক হানাদারদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধে লিপ্ত হই। বেশ কয়েকটি যুদ্ধে পাকিস্থানীদের বিরুদ্ধে সফলতা অর্জন করি। যুদ্ধের ময়দানে ৩১ শে জুলাই দিনাজপুর জেলার ফুলবাড়ি উপজেলার ভেড়াম নামক গ্রামে এক ভয়াবহ যুদ্ধে আমি মারাত্মকভাবে আহত হই এবং আমার সহযোদ্ধা বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাফফার শহীদ হন। 
পাকিস্থানীদের বিরুদ্ধে ৯ মাসের সশস্ত্র যুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর আমরা বিজয় অর্জন করি। মুজিবনগর সরকারের শপথ অনুষ্ঠানের ৫২ বছর পূর্তিতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মহান আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে বিজয় অর্জন করতে হবে।
এ জন্য বঙ্গবন্ধুর আদশের সৈনিকদের জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার বিনীতভাবে অনুরোধ জানাই।      জয় বাংলা,     জয় বঙ্গবন্ধু।
 
লেখক :-
অধ্যাপক ডা. এম আমজাদ হোসেন
 
স্বাধীনতা পদক প্রাপ্ত-২০২১ (সমাজসেবা জনসেবায়)
  
চিফ কনসালটেন্ট ও বিভাগীয় প্রধান,
অর্থোপেডিক, ট্রমা এবং রিপ্লেসমেন্ট সার্জারি বিভাগ
ল্যাব এইড স্পেশালাইজড হাসপাতাল।
 

হারিয়ে যাচ্ছে ক্যানসার-ডায়াবেটিস প্রতিরোধী তুঁতফল

চিলাহাটি ওয়েব ডটকম : Tuesday, April 11, 2023 | 4/11/2023 03:40:00 PM


আপেল বসুনীয়া,চিলাহাটি ওয়েব : বাংলাদেশ থেকে বিলুপ্ত প্রায় গাছগুলোর মধ্যে তুঁতগাছ অন্যতম। এ গাছের ফলের সঙ্গে অনেকের শৈশব স্মৃতি বিজড়িত থাকে। লাল কালো বর্ণের হালকা টক মিষ্টি এ তুঁতফল। 
উপকারী হলেও বর্তমানে এ ফলকে সংগ্রহ কিংবা সংরক্ষণের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়না। আগে গ্রামের রাস্তার দুইপাশে তুঁতফলের গাছ লাগানো হতো। রাস্তা সম্প্রসারণ কিংবা বিভিন্ন কারণে নির্বিচারে কাটা হয়েছে এসব গাছ। পরবর্তীতে আর লাগানো হয়নি উপকারী এ ফলের গাছটি। যার ফলে ক্রমশই কমে যাচ্ছে তুঁতগাছের সংখ্যা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ তুঁতফল নানা পুষ্টিগুণে ভরপুর। ডায়াবেটিস বা ক্যান্সারের মতো রোগ প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে এ তুঁতফল। বিভিন্ন শহর কিংবা গ্রাম কোথাও আর আগের মতো তুঁতগাছের দেখা মেলে না। তবে দিনাজপুর অঞ্চলে বাংলাদেশ রেশম উন্নয়ন বোর্ডের রেশম বীজাগারের অধীনে জেলা শহরের মাহুতপাড়া এলাকায় একটি বিশাল তুঁত বাগান রয়েছে।
রেশম বীজাগার সূত্রে জানা, এ বাগানে প্রায় ১১৮ একর জমিতে তুঁতগাছ ও চারা উৎপাদন করা হয়, যা রেশম গুটি উৎপাদনকারী পোকার খাদ্য সরবরাহের জন্য লাগানো হয়েছে।
রেশম পোকা এই গাছের পাতা খেয়ে গুটি উৎপাদন করে থাকে। তবে তুঁতফল সংগ্রহ কিংবা সংরক্ষণ নিয়ে রেশম বীজাগারের কোনো উদ্যোগ নেই। তুঁত বাগানে ফল খাওয়ার সময় কথা হয় দিনাজপুর উলিপুর এলাকার সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে।
তিনি জানান, তুঁত ফলের মৌসুমে একবার হলেও ফল খেতে আসি। ছোট বেলায় তো রাস্তার পাশে থাকা তুঁতগাছ থেকে অনেক তুঁতফল খেতে পারতাম। কিন্তু এখন তো আর আমাদের ওদিকে তেমন তুঁতগাছ নাই। এ ফল খাওয়ার সময় শৈশবের স্মৃতি মনে পড়ে। তাই এখানে ফল খেতে আসি। শুনেছি এ ফল খাওয়ার উপকারও আছে। মানুষের পাশাপাশি পশুপাখিরাও এ ফল খেয়ে থাকে।
সাধারণত অক্টোবর থেকে নভেম্বর মাসে এই গাছের চারা রোপণ উপযোগী। ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ মাসে এই গাছে ফল ধরে। যা পরবর্তীতে এক মাসের মধ্যে পাকতে শুরু করে। তুঁতফল প্রথম অবস্থায় সবুজ, পরে হালকা গোলাপি, লাল এবং সম্পূর্ণ পাকলে কালচে লাল রঙ ধারণ করে।
তুঁতফল বা মালবেরি ফলের আদিবাস চীনে। তবে ভারত, বাংলাদেশসহ এশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপ ও আমেরিকার বিভিন্ন স্থানে তুঁতফলের চাষ হয়ে থাকে। যা দিয়ে বিভিন্ন প্রকার জুস ও জেলি তৈরি করা হয়।
১৯৮০ সালের পরে কোনো ধরনের বেসরকারি সংস্থাকে নিবন্ধন পেতে হলে সর্বপ্রথম শর্ত ছিল তুঁতগাছ রোপণ করতে হবে।
মূলত, রেশমকে প্রাধান্য দিতেই তৎকালীন সরকারের এই পদক্ষেপ ছিল। এই নিয়মটি ছিল বিংশ শতাব্দী পর্যন্ত। কিন্তু এখন আর এই শর্ত নেই। তাই গ্রামের রাস্তাঘাটে এ গাছ আর তেমন একটা চোখে পড়ে না। ফলে দেশ থেকে প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে এই ফলের গাছ।

বিউটির ক্ষীর দেশ ছাড়িয়ে যায় বিদেশে

চিলাহাটি ওয়েব ডটকম : Tuesday, January 10, 2023 | 1/10/2023 01:43:00 PM


চিলাহাটি ওয়েব ডেস্ক : ২০০৬ সালে অষ্টম শ্রেণিতে থাকতেই বিয়ে হয় বিউটির। কম বয়সে বিয়ে হওয়ার পরও হাল ছাড়েননি তিনি। সিদ্ধান্ত নেন, ব্যবসা করবেন। প্রথমেই নেমে পড়েন স্বামীর ক্ষীরের ব্যবসায় সহযোগিতা করতে। পরে প্রতিবেশী নারীদের নিয়ে গড়ে তোলেন একটি সমিতি। ঋণ নিয়ে ক্ষীর বানিয়ে তিনি আজ সফল। মাসে আয় করছেন ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা। ২০১২ সালে পল্লী উন্নয়ন বোর্ড (বিআরডিবি) থেকে ১৫ হাজার টাকা ঋণ নেন বিউটি। তারপর পরিধি বাড়ান ক্ষীর ব্যবসার। শুরুতেই ক্ষীর বানিয়ে দেখেন লাভের মুখ। একসময় ভালো আয় হতে থাকে। এতে ফেরে সংসারের সচ্ছলতা। ক্ষীরের ব্যবসা করে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি বিউটি কুড়িয়েছেন সুনাম ও পুরস্কার। উপজেলার সেরা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা হিসেবে পেয়েছেন জাতীয় পল্লী উন্নয়ন পদক। পেয়েছেন মহিলা অধিদপ্তর থেকে জয়িতা পুরস্কার। সরেজমিনে বিউটির বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, লাকড়ির চুলায় বড় একটি কড়াইয়ে দুধ গরম করছিলেন বিউটি ও কয়েকজন নারী শ্রমিক। তৈরি করা ক্ষীর বাজারজাতের জন্য মাটির সানকিতে রাখছেন। আবার পাঠিয়ে দিচ্ছেন স্থানীয় বাজারে তাদের ‘আনন্দ দধি-ক্ষীর হাউস’ দোকানে। প্রবাসেও যায় তার বানানো ক্ষীর। দূরদূরান্তের মানুষ তার ক্ষীর কিনে নিয়ে পাঠিয়ে দেন প্রবাসে থাকা স্বজনদের কাছে। তিনি জানান, তার পৈত্রিক বাড়ি চাঁদপুর জেলা শহরের পুরাণবাজার এলাকায়। ছোটবেলা থেকে অসচ্ছল পরিবারে বেড়ে ওঠেন। ভাই-বোনের মধ্যে সবার ছোট ছিলেন তিনি। তার শৈশব কেটেছে অভাবে। ইচ্ছে ছিল পড়ালেখা করে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার। কিন্তু আর্থিক সমস্যায় অষ্টম শ্রেণির পর আর পড়তে পারেননি। কিন্তু বিয়ের পর তিনি নিজেকে শেষ হতে দেননি। সব সময় তার মনে উদ্যোক্তা হওয়ার বাসনা ছিল। উদ্যোক্তা বিউটি বলেন, কয়েক দফা ঋণ নিয়ে ক্ষীরের ব্যবসার পরিধি বাড়ান। এখন প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪০ কেজি ক্ষীর বানিয়ে বিক্রি করেন। মাসে গড় বিক্রি তিন লক্ষাধিক টাকা। লাভ থাকে ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা। প্রতি কেজি ক্ষীর বানাতে ৩৫০ টাকা খরচ হয়। বিক্রি করেন ৪০০ টাকায়। ক্ষীরের ব্যবসা করে সাত শতক জমি কিনেছেন। সেখানে বাড়ি করবেন। সন্তানকে বানাবেন উচ্চশিক্ষিত। তার বানানো ক্ষীর যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যে, এ বিষয়ে বিউটি বলেন, প্রবাসে থাকা মানুষ বাড়িতে এলে আমাদের কাছে আসেন ক্ষীর কিনতে। তারা নিজেরা কিনে খান। আবার আত্মীয়স্বজনের জন্য নিয়ে যান। ছুটি শেষে প্রবাসে ফেরার সময় এসে বেশি করে কিনে নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে নিয়ে যান। কারণ, প্রবাস থাকা আত্মীয়রা তাদের কাছে অর্ডার পাঠান। স্বামী উৎপল কুমার ঘোষ জানান, প্রথমে আমি একা ক্ষীরের ব্যবসা শুরু করি। পরে আমার স্ত্রীর সহযোগিতায় আমরা ব্যবসা বড় করেছি। গুণমান ঠিক রেখে ক্ষীরের ব্যবসা করে আজ সাফল্য অর্জন করতে পেরেছি আমরা। চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলার ঐতিহ্যবাহী দুগ্ধজাত মিষ্টান্ন ক্ষীরের ইতিহাস শত বছরের। এখানকার ক্ষীর গুণেমানে সেরা এবং এর সুনাম ও ঐতিহ্য দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও আছে। মতলবের ক্ষীর চাঁদপুর, কুমিল্লা, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় পৌঁছে যাচ্ছে। সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকেও প্রবাসীরাও লোক মারফত ক্ষীরের ফরমাশ (অর্ডার) পাঠান এ উপজেলায়। জানা গেছে, ইংরেজ শাসনামল থেকে শুরু করে এখনো এই ক্ষীরের চাহিদা এতটুকুও কমেনি। আগের তুলনায় এখন চাহিদা অনেক বেশি। উপজেলা প্রশাসন সম্পাদিত ‘মতলবের ইতিবৃত্ত’ বইয়ে এই ক্ষীরের উল্লেখ আছে। ২০১৩ সালে প্রকাশিত ওই বইয়ের ৪৪ নম্বর পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে, ‘মতলবের ক্ষীর খুবই প্রসিদ্ধ। সারা দেশে ক্ষীরের ব্যাপক চাহিদা ও কদরের কারণে এইখান অনেক হিন্দু পরিবার ক্ষীর তৈরি কাজে ব্যস্ত রয়েছে। বিউটির বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলে মতলব বাজরের রাস্তার পাশে নির্মল ঘোষের দেখা মেলে তার ছোট্ট পান-সিগারেটের দোকানে। সেখান কথা হয় তার সঙ্গে। এ ব্যবসার পাশাপাশি নির্মল দোকানে বিক্রি করেন ক্ষীরসহ অন্যান্য মিষ্টান্নসামগ্রী।পরে তার ছেলে মোহন ঘোষ এই প্রতিবেদককে নিয়ে যান দাসপাড়া তাদের বাড়িতে। তাদের পরিবারে এক সদস্য একদিন ক্ষীরের দোকানে গিয়ে ২০০ টাকা দিয়ে ক্ষীর কিনতে চান। কিন্তু দোকানদার ২০০ টাকায় ক্ষীর বিক্রি করেননি। পরে ওই ক্ষোভ থেকে তারা নিজেরাই বাড়িতে শুরু করেন ক্ষীরের ব্যবসা। মোহন ঘোষ বলেন, আমাদের পূর্বপুরুষরা ক্ষীরের ব্যবসা করত। এখন আমার বাবা এই ব্যবসা ধরে রেখেছেন। আমি ও আমার মা-দাদি ক্ষীর তৈরিতে বাবাকে সাহায্য করি। আমরা নিজেরাই বাজারজাত করি। আবার রাস্তার পাশে ফুতপাতে বসে ক্ষীর বিক্রি করি। আমাদের দৈনিক ২০ থেকে ৩০ কেজি ক্ষীর বিক্রি হয়। তিনি আরও বলেন, নতুন ক্রেতা যখন আসে, তারা চান না আমাদের কাছ থেকে ক্ষীর কিনতে। আমি বলি, ভাই, রাস্তার ক্ষীরও ভালো হয়। একটু বিশ্বাস রাখুন। আমরা মাটির চুলায় ক্ষীর তৈরি করি। আমরা খুচরা বাজার থেকে দুধ কিনে থাকি তা বানাই। আয় সম্পর্কে ঘোষ বাবু বলেন, মাসে আমাদের ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা আয় হয়। তবে বিশেষ দিন উপলক্ষে ৫০ থেকে ৬০ হাজার আয় হয়। এখন প্রবাসীরাও আমাদের কাছ থেকে ক্ষীর কিনে নেন। ক্ষীর ফ্রিজে বেশি দিন থাকলে স্বাদ নষ্ট হয়ে যায় বলেও সতর্ক করে দেন ঘোষ। স্থানীয়রা জানান, বিক্রেতারা প্রতিদিন সকালে গৃহস্থের কাছ থেকে খাঁটি দুধ সংগ্রহ করেন। অতঃপর সংগৃহীত দুধ বড় পাত্রে ঢেলে চুলায় একটানা দুই ঘণ্টা জ¦াল দেন এবং পাশাপশি তিনটি কাঠি দিয়ে পাত্রের তলদেশে বিচক্ষণতার সঙ্গে নাড়তে থাকেন, যেন পাতিলের তলায় পোড়া না লেগে যায়। অতঃপর দুধের রং পরিবর্তন হয়ে ক্ষীরে পরিণত হয়ে এলে তা মাটির ছোট ছোট পাত্রে আধা কেজি ও এক কেজি পরিমাপ করে আলাদাভাবে রাখেন। বিক্রির উপযুক্ত করার জন্য পাত্রের ক্ষীর কিছুক্ষণ ফ্যানের বাতাসে ঠান্ডা করে নেন। এ এলাকায় দেখে হয় চট্টগ্রাম থেকে আসা ক্ষীর ক্রেতা সোলাইমানের সঙ্গে। তিনি জানান, মতলবের ক্ষীরের অনেক সুনাম শুনি। এটি খুবই সুস্বাদু। ভালো মানের। আমার বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়স্বজনের জন্য নিচ্ছি। আমাদের আত্মীয় স্বজনের বিদেশে পাঠাই। স্থানীয় এক ক্রেতা বলেন, আমি এই ক্ষীর আগেও খেয়েছি। পরিবারের জন্য নিয়েছি। আমার অনেক বন্ধুবান্ধব বিদেশে থাকে। তাদের জন্য অনেক ক্ষীর পাঠিয়েছি। আমার জানামতে এখানকার ক্ষীর প্রধানমন্ত্রীও খেয়েছেন। মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীরা তো সব সময় নিয়ে খান। বোঝা গেল শুধু বিউটি বা নির্মল ও মোহন ঘোষরাই নন, ঘোষপাড়া এলাকার সুনীল ঘোষ, মিলন ঘোষ, গান্ধী ঘোষ, অনিক কুমার ঘোষ, উৎপল ঘোষ, নিবাস চন্দ্র ঘোষ, উত্তম ঘোষ এবং দাসপাড়ার মাখনলাল ঘোষ, নির্মল ঘোষসহ কয়েকটি পরিবার ক্ষীরের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।

ডোমারে পরচুলা তৈরী করে স্বাবলম্বী হাজারো নারী

চিলাহাটি ওয়েব ডটকম : Thursday, January 5, 2023 | 1/05/2023 12:25:00 PM

আপেল বসুনীয়া, চিলাহাটি ওয়েব : আগে ক্ষেত খামারে শ্রমিকের কাজ করতাম। পরচুলা তৈরীর কাজের কথা শুনে সেখানে প্রশিক্ষণ নিয়ে পরচুলা তৈরীর কাজ করি। রোদ বৃষ্টিতে ভিজে মাঠে শ্রমিকের কাজ করতে খুবই কষ্ট হয়। এখন ঘরে বসে কাজ করছি। তিনি আরো বলেন, নতুন শিখেছি তাই মজুরি কম পাচ্ছি। কিন্তু তাতেও ভালো কারন মাঠে কাজ করতে অনেক সমস্যা হয়। তাছাড়া মাঠে প্রতিদিন কাজ পাওয়া যেতোনা। বেশির ভাগ দিন বসে থাকতে হয়। এখন প্রতিদিন কাজ করতে পারছি। এতে তিনি অনেকটাই স্বাচ্ছন্দবোধ করছেন। কথাগুলো চিলাহাটি ওয়েব ডটকমকে বলেন পরচুলা তৈরী করতে আসা বামুনিয়া ইউনিয়নের বারবিশা বামুনিয়া গ্রামের মানু রায়ের স্ত্রী শারতী রানী(২৫)। তার মতো অনেকে এসেছেন পরচুলা তৈরীর কাজে। পরচুলা তৈরী করে নীলফামারীর ডোমারে স্বাবলম্বী হয়েছেন হাজারো বেকার নারী।
নীলফামারী জেলায় পরচুলা তৈরীর কাজে সম্পৃক্ত রয়েছেন লক্ষাধিক নারী। বামুনিয়া ইউনিয়নের সাগর মেম্বারের মোড়ে গ্রামের ওই নারীদের পরচুলা তৈরীতে সহায়তা করছেন সুবর্ণ ট্রেডার্স প্রসেসিং নামের একটি প্রতিষ্ঠান। শুধু এই একটি প্রতিষ্ঠান থেকে জেলার ডোমার,ডিমলা, জলঢাকা ও নীলফামারী সদর উপজেলায় ১৪টি ইউনিটে কাজ করছেন ৪হাজার মহিলা। পরচুলা তৈরী করে বেকার নারীর কর্মসংস্থান হয়েছে এসব নারীর। নারীদের তৈরী করা এসব পরচুলা রপ্তানি করা হচ্ছে চীনসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে।
শারতী রানীর মতো পরচুলা তৈরী করতে আসা অপর নারী শৈবা রানী, লক্ষীরানী, পবিত্রা রানী জানায়, আগে বাড়িতে বসে ঘর সংসারের কাজ করতাম এখন পরচুলা তৈরী করে বাড়তি আয় করছি। এতে সংসারের কিছুটা হলেও সহায়তা হচ্ছে। বামুনিয়া ইউনিয়নের সাবেক মেম্বার সাগর চন্দ্র রায় চিলাহাটি ওয়েব ডটকমকে বলেন, আমার একটি গোডাউন ঘরে ১০০জন মহিলাকে নিয়ে একটি ইউনিটে পরচুলা তৈরীর কাজ চলছে। এলাকার অসহায় মহিলারা সেখানে কাজ করে স্বাবলম্বী হচ্ছে। এতেকরে কিছুটা হলেও এলাকাবাসীর আর্থসামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে।
সুবর্ণ ট্রেডার্স হেয়ার প্রসেসিং পরচুলা তৈরীর ওই ইউনিট পরিচালনাকারী মিলন চন্দ্র রায় জানান, ৪টি উপজেলায় ১৪টি ইউনিটের মাধ্যমে কাজ করছেন ৪হাজার মহিলা। আমি নীলফামারী উত্তরা ইপিজেডে এভার গ্রীন কোম্পানিতে কাজ করতাম। ২০২১ সালে চীনা কোম্পানির সাথে আলোচনা করে পরচুলা তৈরীর কাজ শুরু করি। এসব ইউনিটে কয়েক ধরনের ক্যাপ তৈরী করা হয়।
এসব ক্যাপ তৈরীতে একজন নারী প্রকারভেদে ৩০০থেকে ১২০০টাকা মজুরি পেয়ে থাকে। তিনি আরো জানান অনেক নারী এখান থেকে চুল এবং অন্যান্য সরঞ্জাম নিয়ে নিজ বাড়িতে বসেসাংসারিক কাজের ফাঁকে পরচুলা তৈরী করে অর্থ উপার্জন করছে।