Showing posts with label ফিচার. Show all posts
Showing posts with label ফিচার. Show all posts

হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী মাচাং ঘর

চিলাহাটি ওয়েব ডটকম : Monday, October 23, 2023 | 10/23/2023 05:16:00 PM

আপেল বসুনীয়া, চিলাহাটি ওয়েব : আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে গেছে ঐতিহ্যবাহী মাচাং ঘর। বাঁশ, কাঠ, টিন ও ছন দিয়ে বিশেষ পদ্ধতিতে তৈরি মাচাং ঘর এক সময়ের ঐতিহ্যবাহী ঘর।
আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে গেছে ঐতিহ্যবাহী মাচাং ঘর। বাঁশ কাঠ ও ছন দিয়ে বিশেষ পদ্ধতিতে তৈরি এক ধরনের ঘরকে বলা হয় মাচাং ঘর।
ভূমি থেকে উচুঁ খুঁটির উপর নির্মিত এ মাচাং ঘরে পোকা মাকড় ও বন্যপ্রাণীর আক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। শুধু তাই নয় বিশ্রাম নেয়া, ধান রাখা থেকে শুরু করে গৃহস্থালির নানা কাজে ব্যবহৃত হয় মাচাং ঘর। আধুনিকতার ছোঁয়ায় মাচাং ঘর প্রায় বিলুপ্তির পথে।

চিলাহাটিতে বিলুপ্তির পথে বাবুই পাখি

চিলাহাটি ওয়েব ডটকম : Friday, October 6, 2023 | 10/06/2023 06:15:00 PM

আপেল বসুনীয়া,চিলাহাটি ওয়েব : নীলফামারী জেলার চিলাহাটির বিভিন্ন এলাকায় উঁচু তাল, নারিকেল ও খেজুর গাছে এক সময় দেখা মিলতো বাবুই পাখির বাসা। কিন্তু এখন সারিবদ্ধ তালগাছের পাতায় ঝুলতে দেখা যায় না তাদের শৈল্পিক বাসা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন, কীটনাশকের ব্যবহার, শিকারিদের দৌরাত্ম্য, অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাবুই পাখি বিলুপ্ত হতে বসেছে। 
সাধারণত বাবুই পাখি খড়, ঝাউ, তালপাতা ও কাশবনের লতাপাতা দিয়েই উঁচু তাল গাছ এবং খেজুর গাছে বাসা বাঁধে। বাবুই পাখি বাসা বানানোর জন্য খুবই পরিশ্রম করে থাকে। বাবুই প্রথমে ঠোঁট দিয়ে ঘাসের আস্তরণ সারায় এবং যত্ন করে পেট দিয়ে ঘষে অর্থাৎ পালিশ করে মসৃণ করে বাসা তৈরি করে। সাধারণত উঁচু তালগাছে খড়-কুটো দিয়ে তৈরি বাসা দেখতে খুব সুন্দর, আকর্ষণীয় ও মজবুত যা প্রবল ঝড়েও ছিঁড়ে পড়ে না। বাবুই পাখির বাসা শুধু শৈল্পিক নিদর্শনই নয়, মানুষকে স্বাবলম্বী হতে উৎসাহিত করতো।
কবি রজনী কান্ত সেনের ভাষায়- ‘বাবুই পাখিরে ডাকি বলিছে চড়াই, কুঁড়েঘরে থেকে করো শিল্পের বড়াই। আমি থাকি মহাসুখে অট্টালিকার ’পরে, তুমি কত কষ্ট পাও রোদ, বৃষ্টি-ঝড়ে।’ চিরচেনা সেই বাবুই পাখি এখন আর খুব একটা চোখে পড়ে না। নির্বিচারে তাল ও সুপারি গাছ কাটায় বসবাস উপযোগী পরিবেশ নেই। ফলে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামবাংলার শৈল্পিক কারিগর ‘বাবুই পাখি’!
অথচ মাত্র ১৫-১৬ বছর আগেও গ্রামবাংলার সবখানে চোখে পড়তো চিরচেনা সেই পাখি। দেখা যেত সারিবদ্ধ তালগাছ অথবা সুপারি গাছের পাতায় কি সুন্দরভাবে ঝুলে আছে। এখন আর ঝুলতে দেখা যায় না, কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত হয় না গ্রামবাংলার জনপদ।

কাশফুলের সৌন্দর্যে মুগ্ধ প্রকৃতি প্রেমীরা

চিলাহাটি ওয়েব ডটকম : Sunday, October 1, 2023 | 10/01/2023 12:59:00 PM

আপেল বসুনীয়া,চিলাহাটি ওয়েব : শরৎ মানেই নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা এবং কাশফুলের শুভ্রতা। স্বচ্ছ নীল আকাশে সাদা মেঘ, মাঠজুড়ে সবুজের সমারোহ ও সাদা কাশফুল যখন বাতাসের দোলায় দুলতে থাকে তখন মনটাও যেন আন্দোলিত হয়।
প্রকৃতিতে যখন শরৎকাল আসে তখন কাশফুলই জানিয়ে দেয় এর আগমনী বার্তা। এই ঋতুতে পালকের মতো নরম ও ধবধবে সাদা রঙের কাশফুল ফোটে। কাশফুলের অপরূপ সৌন্দর্য পুলকিত করে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দায়। 
নীলফামারী জেলার চিলাহাটিরি গিরিয়ার ডাঙ্গা এলাকায় ঢেকে গেছে কাশফুলে। ঝকঝকে নীল আকাশে ভেসে বেড়ানো সাদা মেঘের ভেলা প্রকৃতি প্রেমীদের কাছে টানছে। এমন মনোমুগ্ধকর পরিবেশ সবার মন ছুঁয়ে যায়।
সূর্য অস্ত যাওয়ার আগে ওইসব স্থানে প্রকৃতিপ্রেমীদেরকে দেখা যায়। কেউ কেউ ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করছেন।

সৈয়দপুরে দর্শনীয় ন্যারোগেজ ইঞ্জিন ও রেলের মিউজিয়াম

চিলাহাটি ওয়েব ডটকম : Saturday, September 30, 2023 | 9/30/2023 12:10:00 PM

আপেল বসুনীয়া,চিলাহাটি ওয়েব : দেশের বৃহত্তম সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার অভ্যন্তরে রাখা ন্যারোগেজ ইঞ্জিন ও গড়ে উঠা রেলওয়ের মিউজিয়াম দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়েছে। ফলে দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন আসছেন কয়লাচালিত লোকোমোটিভ বা ইঞ্জিন দেখতে। কেউবা রেলের মিউজিয়াম ঘুরে দেখে অতীত ঐতিহ্য খুঁজে ফিরছেন।
১৮৭০ সালে ১১০ একর জমির ওপর সৈয়দপুরে নির্মিত হয় দেশের প্রাচীন এবং বৃহত্তম রেলওয়ে কারখানা। ব্রিটিশ আমলে নির্মিত এ রেল কারখানার ২৬টি উপ-কারখানায় শ্রমিকরা কাজ করে থাকেন। রেলের ছোটবড় যন্ত্রাংশ থেকে শুরু করে ব্রডগেজ ও মিটারগেজ লাইনের বগি মেরামতসহ সব কাজ করা হয় এই কারখানায়।
রেলওয়ে সম্পর্কে বাস্তব জ্ঞান অর্জনে দেশের বিভিন্ন কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এই কারখানা পরিদর্শন করেন। সৈয়দপুর রেল কারখানা ঘুরে দেখা মেলে ইতিহাসের সাক্ষী কয়লাচালিত ইঞ্জিনের। কারখানা চত্বরে যে তিনটি লোকোমোটিভ স্থান পেয়েছে তার মধ্যে একটি ন্যারোগেজ ইঞ্জিন, একটি কয়লাচালিত ব্রডগেজ এবং অন্যটি ডিজেলচালিত মিটারগেজ ইঞ্জিন।
কয়লা চালিত ন্যারোগেজ বাষ্পীয় লোকোমোটিভ বা ইঞ্জিন সিএস ১৫। এটি তৈরি করা হয় ১৯৩৬ সালে। বিজ্ঞানী জেমস ওয়াটের বাষ্পীয় ইঞ্জিন আবিষ্কারের অনেক পরে। ইঞ্জিনটি নির্মাণ করে ইংল্যান্ডের ডবিউজি বাগলান লিমিটেড নামের একটি কারখানা। ১০ ফুট ৬ ইঞ্চি উচ্চতা আর ১৯ ফুট দীর্ঘ ইঞ্জিনটির ওজন ১১ দশমিক ৭৬ টন। খুলনা-বাগেরহাট রুটে কয়লাচালিত ইঞ্জিন দিয়ে ট্রেন চলাচল করত।
সর্বশেষ ১৯৩৬ থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত চলাচল করেছে এই কয়লাচালিত ন্যারোগেজ স্টিম লোকোমোটিভ। বর্তমানে সারা পৃথিবীতে ন্যারোগেজ ইঞ্জিনের ব্যবহার নেই বললেই চলে। রেলের ইতিহাস বহন করা আরেকটি ইঞ্জিন হলো কয়লাচালিত ব্রডগেজ বাষ্পীয় লোকোমোটিভ বা ইঞ্জিন এসজিসি-জেড ২৪০। এটি ৫৩ ফুট ১০ ইঞ্চি লম্বা। ১৯২১ সালে তৈরি হয়েছিল। এ ইঞ্জিন দিয়ে পাকশি রুটে ট্রেন চলাচল করত।
১৯৩৭ থেকে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত চলাচলের উপযোগী ছিল। সময়ের বিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে রেলের ইঞ্জিনেও আসতে থাকে পরিবর্তন। কয়লাচালিত ইঞ্জিনের পরিবর্তে আসতে থাকে ডিজেলচালিত ইঞ্জিন।
সৈয়দপুর রেল কারখানার চত্বরে ডিজেলচালিত একটি মিটারগেজ লোকোমোটিভ বা ইঞ্জিন এমএইচজেড-৮ (৩৩৩২) রাখা আছে। এটি ৩৮ ফুট লম্বা। এ ইঞ্জিনটি ১৯৮২ সালে তৈরি হয়েছিল। ইঞ্জিনটি দিয়ে পার্বতীপুর-সান্তাহার-লালমনিরহাট রুটে ট্রেন চলাচল করত বলে জানা গেছে।
সর্বশেষ ১৯৮৩ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত এ ইঞ্জিন চলাচল করেছে। বাংলাদেশ রেলওয়ের তথ্য অনুসারে, ১৮৬২ সালে বাষ্পীয় ইঞ্জিনের রেলসেবা চালুর পরবর্তী শত বছরেরও বেশি সময় ধরে এই ইঞ্জিনগুলো বাংলাদেশের রেলওয়েতে সেবা দিয়ে এসেছে। ১৯৫৩ সালে কানাডার তৈরি ‘ইএমডি বি-১২’ মডেলের ২০০০ শ্রেণির মিটার গেজ লোকোর মাধ্যমে বাংলাদেশে (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) ডিজেল লোকোর সূচনা হয় এবং রেলে ডিজেল ইঞ্জিনের চাহিদা ও ব্যবহার বাড়তে থাকে। তবে আধুনিকতার দাপটে ধীরে ধীরে কমতে থাকে বাষ্পীয় ইঞ্জিনের ব্যবহার। সর্বশেষ বাংলাদেশে স্টিম লোকোমোটিভ পরিচালিত হয় ১৯৮৪ সালে।

চাঁই বেচে জীবিকা

চিলাহাটি ওয়েব ডটকম : Friday, September 29, 2023 | 9/29/2023 05:30:00 PM

চিলাহাটি ওয়েব ডেস্ক : দেশী প্রজাতির ছোট মাছ ধরার উপকরণ বাঁশের তৈরি চাঁই (মাছ ধরার ফাঁদ) কেনার ধুম পড়েছে। বৃষ্টির পানিতে এখন টই-টুম্বুর ফসলের জমি থেকে শুরু করে খাল-বিল ও নদী । এতে দেশি প্রজাতির ছোটজাতের মাছের পরিমাণ বেড়ে গেছে। তাই বিভিন্ন উপায়ে মাছ ধরতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
জানা যায়, জেলার বিভিন্ন হাটবাজারগুলোতে শত শত চাঁই বিক্রি হচ্ছে। এখানকার তৈরি চাঁই স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে সরবরাহ করা হচ্ছে পার্শ্ববর্তী জেলাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়। গুণগত মান ভালো হওয়ায় আশানুরূপ দাম পাচ্ছেন চাঁইশিল্পের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা। নিম্নআয়ের অনেক পরিবার বাড়তি আয়ের উৎস হিসেবে চাঁই তৈরিকে বেছে নিয়েছেন। বাঁশ ও সুতা দিয়ে তৈরি এসব চাঁই ভালো মানের হওয়ায় দেশের বিভিন্ন এলাকার মাছশিকারিরা হাটবাজার থেকে তা কিনে নিয়ে যান।
বর্ষা মৌসুমে চাহিদা বেশি হওয়ায় চাঁই তৈরির সঙ্গে জড়িত পরিবারগুলো দুই-তিন মাসেই প্রায় সারা বছরের আয় করে নেন। চাঁই তৈরির কারিগররা জানান, চাঁই তৈরিতে প্রকারভেদে খরচ পড়ে ৮০ থেকে ২০০ টাকা। বিক্রি হয় ২০০ থেকে ৫০০ টাকায়। আকারে বড় চাঁই তৈরিতে খরচ অনুযায়ী বিক্রির মূল্য নিধারণ করা হয়। চাঁই বিভিন্ন এলাকায় ধন্দি, বানা, খাদন, খালই, বিত্তি, বুড়ং ও ভাইর নামে পরিচিত। ছোট প্রজাতির মাছ ধরার সুতি, কারেন্ট জালসহ বিভিন্ন উপকরণের দাপটের কারণে বাঁশের তৈরি চাঁই বাজারে বেশ প্রতিযোগিতার মুখে পড়েছে।

পথচারিদের ডাকছে কারমাইকেলের কাঠগোলাপ

চিলাহাটি ওয়েব ডটকম : Thursday, September 28, 2023 | 9/28/2023 06:07:00 PM

চিলাহাটি ওয়েব ডেস্ক : হে পথিক একটু দাড়াঁও না, তোমার জন্যই না আমি সুভাস্বনী হয়ে রয়েছি। প্রাচ্যের অক্সফোর্টখ্যাত কারমাইকেল কলেজসহ রংপুরের বিভিন্ন স্থানে প্রকৃতি প্রেমীদের এভাবেই মুগ্ধ করছে বাহারী কাঠগোলাপ ফুল। ফুলটি বছরের প্রায় সবসময়ই ফোটে। তবে গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ ও হেমন্তকালে গাছ ফুলে ফুলে ছেয়ে যায়।
এ ফুল নানা রঙের হয়। কোনোটি দেখতে ধবধবে সাদা, কোনোটি সাদা পাপড়ির ওপর হলুদ দাগ, আবার কোনোটি লালচে গোলাপি রঙের। দূরে বা কাছ থেকে এসব বাহারি কাঠ গোলাপ সহজেই নজর কাড়ে প্রকৃতিপ্রেমীদের। কাঠগোলাপের সৌন্দর্য্যে বিমোহিত হয়ে ফটোসেশন করতেও দেখা যায় অনেক পথিককে।
বিমোহিত প্রকৃতিপ্রেমী অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে নয়নাভিরাম কাঠগোলাপে। একটু নিজেকে সতেজ করার জন্যই প্রকৃতির এমন চিরচেনা রুপ। কারমাইকেল কলেজ প্রাঙ্গণে দূর থেকেই চোখে পড়ে অসংখ্য কাঠগোলাপ পড়ে আছে সবুজ ঘাসের বুকে। শ্বেত শুভ্র ফুলগুলো দেখে আকৃষ্ট হচ্ছেন তরুণ-তরুণীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষজন।
শুধু কারমাইকেল কলেজেই নয় রংপুর শহরে বিভিন্ন সড়কের পাশে, বাগানে ও নার্সারিতেও স্নিগ্ধতা ছড়াচ্ছে সুগন্ধিমাখা শুভ্র কাঠগোলাপ। অনেক অভিভাবক শিশুদেরকে ফুল চেনাচ্ছেন এবং ফুল দিয়ে সাজিয়ে ছবি তুলে তুলছেন। প্রকৃতিপ্রেমীরা যে কাঠগোলাপে বিমোহিত তা বলার আর অপেক্ষা রাখে না।
শিশুকে ফুল দেখতে নিয়ে আসা এক অভিভাবক বলেন, শিশুদের মেধা বিকাশে প্রকৃতির সৌন্দর্যের সঙ্গে পরিচয় হওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বইয়ে কিংবা মোবাইলে হয়তো চিনিয়ে দেওয়া সম্ভব কিন্তু কাছ থেকে দেখার আনন্দই আলাদা। এ জন্য প্রায় সময়ই ঘুরতে আসি কারমাইকেল কলেজ প্রাঙ্গণে। নিজেও মুগ্ধ হই চমৎকার প্রকৃতিতে নিঃশ্বাস নিতে পেরে, আমার সন্তানও খুশি হয়।

মাটির নিচে সমৃদ্ধ ইতিহাস

চিলাহাটি ওয়েব ডটকম : Wednesday, September 27, 2023 | 9/27/2023 10:45:00 AM

চিলাহাটি ওয়েব, ঢাকা অফিস : ১৮০৮ সালে চিহ্নিত করেন ফ্রান্সিস বুকানন হ্যামিলটন বাংলার অন্যতম প্রাচীন জনপদ মহাস্থানগড় বা পুন্ড্রনগর। এটি পুণ্ড্রবর্ধন নামেও পরিচিত। তৎকালীন বাংলার রাজধানী ছিল পুন্ড্রনগর। প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে এই জনপদ গড়ে ওঠে। বগুড়া শহর থেকে প্রায় ১৩ কিলোমিটার উত্তরে করতোয়া নদীর তীরে মহাস্থান গড় অবস্থিত। শিবগঞ্জ উপজেলার মধ্যে এই গড়। ২০১৬ সালে মহাস্থানগড়কে সার্কের সাংস্কৃতিক রাজধানী হিসেবে ঘোষণা করে 

ইতিহাস : চীনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাঙ্গ ৬৩৯ থেকে ৬৪৫ সালের মধ্যে ভ্রমণ শেষে ধারাবাণীতে বলেন এটি মূলত বৌদ্ধ ধর্মের পীঠস্থান ছিল। চীন তীব্বত থেকে ভিক্ষুকরা আসতেন মহাস্থানে লেখাপড়া করতে। সেন বংশের শেষ রাজা লক্ষ্মণ সেন (১০৮২-১১২৫) গৌড়ের রাজা থাকাকালে এই গড় অরক্ষিত ছিল। তখনকার পুন্ড্রনগরের রাজা ছিলেন নল। আর তার বিরোধ চলত আপন ভাই নীলের সাথে। এসময় ভারতের শ্রীক্ষেত্র থেকে অভিশপ্ত ব্রাহ্মণ আসেন। যিনি পশুরাম হিসেবে পরিচিত পরবর্তীতে রাজা বনে যান পুণ্ড্রনগরের সময় ইসলাম ধর্ম প্রচার করতে বাংলায় আসেন হযরত শাহ সুলতান মাহমুদ বলখী() তার সাথীরা। কথিত আছে তিনি করতোয়া নদী পার হয়েছিল বিশাল মাছ আকৃতির নৌকার পীঠে চড়ে। মহাস্থানগড় পৌঁছে ধর্ম প্রচার করতে থাকলে রাজা পশুরামের সাথে বিরোধ দেখা দেয়

রাজা হওয়ার পর থেকেই পশুরাম জনগণের কাছে অত্যাচারী শাসক হয়ে যায়। জনগণ অতিষ্ঠ হয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে থাকলে শাহ সুলতানের (.) সাথে যুদ্ধ বেঁধে যায়। যুদ্ধে রাজা পশুরাম জিয়ৎ কুণ্ড কূপের পানির বিশেষ সাহায্য নেয়। তার আহত সৈন্যদের সেই কূপের পানি পান করে আহত সৈন্য সুস্থ হয়ে যায়। তাই হযরত শাহ সুলতান মাহমুদ বলখী (.) একটি ঈগল পাখির মাধ্যমে এক টুকরো মাংস ওই কূপে ফেলে দেন। এতেই কূপের পানি আশ্চর্য গুণ হারিয়ে ফেলে। শেষমেষ পরশুরাম পরাজয় বরণ করে

মহাস্থানগড়ে শাহ সুলতান মাহমুদের (.) মাজার শরীফ রয়েছে তার সামনেই বিখ্যাত কটকটির দোকান রয়েছে এখানকার একটি জনপ্রিয় খাবার হিসেবে বেশ পরিচিত

গড়ের আবিস্কার

১৮০৮ সালে ফ্রান্সিস বুকানন হ্যামিলটন প্রথম এই গড় চিহ্নিত করেন। পরে ১৮৭৯ সালে আলেক্সান্ডার এই ঐতিহাসিক নগরীকে পুণ্ড্রনগরের রাজধানী হিসেবে উল্লেখ করেন। ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে প্রত্নতাত্ত্বিক খননে ব্রাহ্মী লিপির সন্ধান মেলে। সেই লিপির লেখার মাধ্যমে  প্রাদেশিক সরকার সম্রাট অশোক দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষকে রাজভান্ডার থেকে খাদ্য টাকার সাহায্য দিতে নির্দেশ দেন

দর্শনীয় স্থানের বিবরণ জেনে নেওয়া যাক-

ভাসু বিহার: এটি মূলত বৌদ্ধ ধর্মপীঠ ছিল। এটি স্থানীয়ভাবে নরপতি ধাপ নামেও পরিচিত। এখানে বৌদ্ধদের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে

গোবিন্দ ভিটা : এটার অর্থ হলো দেবতা বিষ্ণুর আবাসস্থল। এখানে মন্দির থাকলেও বৈষ্ণব ধর্মের কোনো নির্দশন পাওয়া যায়নি

শীলাদেবীর ঘাট : এটি করতোয়া নদীর তীরে অবস্থিত। রাজা পশুরামের বোন ছিল শীলাদেবী। যখন শাহ সুলতান মাহমুদ বলখীর (.) কাছে তার ভাই পরাজিত হয় তখন তিনি সেই ঘাটে আত্মহত্যা করেন

ভীমের জাঙ্গাল : এটি মূলত লম্বা বাঁধ বা পিলার। যা শত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে তৈরি করা হয়েছিল। আবার কেউ কেউ বলেন বন্যা থেকে বাঁচতে এই বাঁধ। এটি প্রায় ৭০ কিলোমিটার জুড়ে বৃস্তিত

বেহুলা লখিন্দরের বাসর ঘর: স্থানীয়দের কাছে এটা গোকুল মেধ হিসেবেও পরিচিত। চাঁদ সওদাগর তার ছেলে লখিন্দরকে দেবী মনষার হাত থেকে বাঁচানোর জন্য গোপন একটি ঘর তৈরি করেন। বেহুলা লখিন্দরের বিয়ের রাতে সেই ঘরে কঠোর নিরাপত্তা থাকা অবস্থায় মনষার পাঠানো সাপ দংশন করেন

খোদার পাথর ভিটা : জানা যায় রাজা পশুরাম এই পাথরকে বলি দেওয়ার কাজে ব্যবহার করতো এটা দেখতে লম্বা আয়তাকার মসৃণ

এছাড়ও অনেক দর্শনীয় স্থান রয়েছে মানকালীর টিবি, বৈরাগীর ভিটা, বিহার ধাপ, কালিদহ, জিয়ত কুণ্ড কূপ ইত্যাদি

খনন পুনরুদ্ধার

১৯২৮-২৯ সালে আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অভ ইন্ডিয়ার তৎকালীন মহাপরিচালক কাশীনাথ নারায়ন দীক্ষিতের তত্ত্বাবধানে প্রথম খননকাজ শুরু হয়। আর যেসব ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায় তা সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে মহাস্থান প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘরে। ১৯৬৭ সালে জাদুঘর প্রতিষ্ঠিত হয়। যাবৎ খনন কাজে পাওয়া যায় বৌদ্ধ ধর্মের দেব দেবতাদের মূর্তি, বিভিন্ন যুগের মুদ্রা, স্মারক লিপি, মাটির তৈজসপত্র, পোড়ামাটির ফলক, সিলমোহর, শিলালিপি, আত্নরক্ষার অস্ত্র, মূল্যবান অলংকার সামগ্রী সোনা, রুপা, লোহা, কাঁসা, তামাসহ বিভিন্ন ধাতব সামগ্রী। বর্তমানে মহাস্থান গড় প্রত্নতাত্ত্বিকের খনন কাজ চলমান রয়েছে। মহাস্থানগড় প্রাচীন নগরী হলেও এখন প্রায় জনমুখী হয়ে উঠেছে। পর্যটন শিল্প হিসেবে প্রতিদিন দেশ বিদেশের মানুষ এসে ভিড় করে ইতিহাসের বাস্তব চিত্র দেখতে

যোগাযোগ

রাজধানী ঢাকা থেকে আসতে গেলে ট্রেন বাসে আসতে হবে। ঢাকা কল্যানপুর গাবতলি বাসস্ট্যান্ড থেকে গাড়ি সরাসরি বগুড়ার মেইন শহর সাথমাথায় আসা যায়। সেখান থেকে বাস, সিএনজি করে ১৩ কিলোমিটার দূরে এই মহাস্থানগড়। ট্রেনে আসতে গেলে কমলাপুর রেলস্টেশনে উঠে সরাসরি সান্তাহার জংশনে পৌঁছে, সেখান থেকে বগুড়ার ট্রেনে উঠতে হবে। এখন হেলিকপ্টারেও আসা যায় বগুড়াতে। ঢাকা থেকে মমইন হোটেলে হেলিকপ্টার এসে পৌঁছে