নজরুল ইসলাম,বোদা (পঞ্চগড়) প্রতিনিধি, চিলাহাটি ওয়েব : বালু পাথরের জেলা পঞ্চগড়। নদ নদী ঘেরা উর্বর হিমালয়ান এই সমতল অঞ্চলে ট্রাকে করেই মুলত: সারাদেশে এই জেলার বালু পাথর রপ্তানী করতো ব্যবসায়ীরা। কিন্তু সম্প্রতি পঞ্চগড় রেল ষ্টেশন থেকে মালবাহি ট্রেনে করে বালু পরিবহন শুরু হওয়ায় নতুন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে জেলার অন্যতম এই অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে। তবে শুরু হতে না হতেই স্টেশন সংশ্লিষ্ট কয়েকজন কর্মকর্তা কর্মচারীর বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম আর ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে।
ব্যবসায়ীরা শ্রমিকরা বলছেন মালবাহী ট্রেন ব্যবস্থাপনার জন্য ট্রেন প্রতি মোটা অংকের ঘুষ দিতে হচ্ছে কর্মকর্তাদের। তারা আরও জানান ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকার বালু ১০ চাকার ট্রাকে ঢাকা, গাজীপুর, কুষ্টিয়া, রাজশাহী, পাবনা, নাটোর, নওগাঁ, বগুড়ায় পরিবহন করতে গুনতে হয় ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা। অনেক সময় ট্রাক পাওয়া যায় না। তখন ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
তবে রেলপথে একই পরিমাণ বালু পরিবহনে খরচ হয় ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা। যমুনা সেতু দিয়ে সরাসরি রেলপথে পঞ্চগড় থেকে ঢাকা পর্যন্ত বালু পাঠানো গেলে পরিবহন খরচ ২০ থেকে ২৫ শতাংশ কমে যায় ।
ঢাকনাওয়ালা এবং ঢাকনা বিহীন খোলা দুটি মালবাহি ট্রেনের ৩০ টি ওয়াগনে বালু পরিবহন করা হয়। এসব ওয়াগনের ধারণ ক্ষমতা ৫৫ মেট্রিক টন। ভেজা বালু ২৮ ইঞ্চি এবং শুকনো বালু ৩৫ ইঞ্চি উচ্চতায় চিহ্ণিত দাগে প্রত্যেকটি ওয়াগনে বালু লোড দেয় পাথর শ্রমিকরা। তবে ধারণ ক্ষমতা ৫৫ মেট্রিক টন হলেও ট্রেন চলাচলের সময় ঝাঁকি খেয়ে পরিমাপের স্কেলে বালুর পরিমান কমে যায়। এ জন্য ব্যবসায়িরা কয়েক ইঞ্চি ওভার লোড করে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে আন্তদেশীয় বালূু আমদানীকারক ও কয়েকজন কর্মকর্তা কর্মচারী প্রত্যেক বগিতে অতিরিক্ত ৩০ থেকে ৩৫ মেট্রিক টন বালু পরিবহন করে।
এতে করে মালবাহি ট্রেনগুলো যান্ত্রিক ঝুঁকিতে পড়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে প্রতি মালবাহি ট্রেন থেকে প্রায় ৮ থেকে ১০ লক্ষ টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।
জানা গেছে- অতিরিক্ত বালু লোডের বিপরীতে সংশ্লিষ্ট ষ্টেশনে কর্মরত স্টেশন ইনচার্জ, জেটিআই, টি এক্সআর, আরএনবি এসআই সহ বিভিন্ন দপ্তরে মোটা অংকের ঘুষ দিতে হচ্ছে ব্যবসাীদের। অতিরিক্ত এই বালু পরিবহনের জন্য এসব দপ্তরে মালবাহি ট্রেন প্রতি প্রায় আড়াই থেকে তিন লক্ষ টাকা প্রদান করতে হয়।
অনেক সময় ব্যবসায়ীদেরকে বাধ্য করেই নেয়া হচ্ছে টাকা। নাম গোপন রাখার শর্তে কয়েকজন ব্যবসায়ি ও কর্মচারী কর্মকর্তা বলছেন শুরু হতে না হতেই বালু পরিবহনে দুর্নীতি শুরু হয়েছে। ষ্টেশনে কর্মরত সকলের মধ্যে এ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। অন্যদিকে স্থানীয় ব্যবসায়ী এবং শ্রমিকরা বলছেন ট্রেনে করে বালু পরিবহন শুরু হওয়ার পর অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।
পঞ্চগড়ের অর্থনীতিতে নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু অসাধু কিছু কর্মকর্তা কর্মচারীর কারণে বালু পরিবহন বন্ধ হয়ে গেলে সরকার যেমন রাজস্ব হারাবে তেমনি অনেক মানুষের কর্মসংস্থান ক্ষতিগ্রস্থ হবে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী রবি হাসান জানান, ওভার লোডে ঘুষ লেনদেনের বিষয়টি স্টেষনের সবখানে ফিঁশ ফাঁশ আলোচনা হচ্ছে। বিষয়টি খুব দুঃখজনক ।
রেলে বালুর ব্যবসা শুরু হওয়ায় ষ্টেশনে সকলের মধ্যে উৎসাহ শুরু হয়েছে। কিন্তু এভাবে দুর্নীতি শুরু হলে একসময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে বালু পরিবহন। তখন আমরা সকলেই ক্ষতিগ্রস্থ হবো। আমরা চাই স্বচ্ছভাবে পরিচালিত হোক।
অন্যদিকে বালু পাথর সরবরাহকারি প্রতিষ্ঠান এস এস ট্রেডার্স এর কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান মুঠো ফোনে জানান অতিরিক্ত লোড করা হয়না। এজন্য কাউকে ঘুষ প্রদান করা হয়না। স্বচ্ছ ভাবেই আমরা বালু নিয়ে আসছি।
তবে সকল অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ভারপ্রাপ্ত স্টেশন ইনচার্জ জাহেদুল ইসলাম- জুনিয়র ট্রাফিক ইন্সপেক্টর মোশারফ হোসেন।
তারা জানান মালবাহি পরিবহনে অতিরিক্ত বালু লোড করা হয়না। কিছু ব্যবসায়ি অবৈধ সুযোগ নেয়ার জন্য এমন রটনা ছড়িয়েছে। এখানে ঘুষ বাণিজ্য হয়না।
নিয়মতান্ত্রিক ভাবে বালু পরিবহন করা হচ্ছে।
তবে প্রধান রেল পরীক্ষক আনোয়ার সোহেল অন্য স্টেশনে দায়িত্ব পালন করায় তার সাথে ফোনে যোগাযোগ করা হয়। তিনি ফোন রিসিভ করেন নি।