ছাদেকুল ইসলাম রুবেল,গাইবান্ধা : অন্তবর্তীকালীন সরকারের মেয়াদকালে তিস্তা মহাপরিকল্পনা কার্যক্রমের শুভ সূচনার দাবিতে গাইবান্ধায় পদযাত্রা ও স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে।
রোববার (৫ অক্টোবর) তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন গাইবান্ধা জেলা কমিটির পক্ষ থেকে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
‘জাগো বাহে জাগো তিস্তা বাঁচাও’ স্লোগানে গাইবান্ধা শহরে পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। শেষে গাইবান্ধা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন নেতারা। এটি গ্রহণ করেন জেলা প্রশাসক চৌধুরী মোয়াজ্জম আহমেদ।
এসময় গাইবান্ধা জেলা বিএনপির সভাপতি ও তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন গাইবান্ধা জেলা কমিটির অধ্যাপক ডা. মইনুল হাসান সাদিকের নেতৃত্বে উপস্থিত ছিলেন- জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি শহীদুজ্জামান শহীদ, সাধারণ সম্পাদক মাহামুদুনবী টিটুল, সাদুল্লাপুর উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব আব্দুস ছালাম মিয়া, সুন্দরগঞ্জে মাহামুদুল প্রামাণিকসহ অনেকে।স্মারকলিপি উল্লেখ করা হয়- তিস্তা নদী উত্তরাঞ্চলের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জলাধার, যা দীর্ঘদিন ধরে পানি বণ্টন চুক্তি না হওয়া এবং ভারতের একতরফা পানি প্রত্যাহারের কারণে এ অঞ্চলের প্রায় ২ কোটি মানুষ মারাত্মক সংকটে পড়েছে। একদিকে ভারতের পানি প্রত্যাহার, অন্যদিকে ভাঙন এ কারণে বাংলাদেশ অংশে নদীটির তীরবর্তী মানুষদের জীবন-জীবিকা ও বসতি হুমকির মধ্যে পড়েছে। ভিস্তায় প্রয়োজনের সময় পানি না পাওয়ায় উত্তরাঞ্চলের গাইবান্ধা, নীলফামারী, লালমনিরহাট, রংপুর ও কুড়িগ্রাম জেলার দারিদ্র্য পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না। এই অঞ্চলের জনসাধারণের নানান বৈষম্য দূর করার লক্ষ্যে তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন কমিটি দীর্ঘদিন থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছেবৈষম্যপীড়িত তিস্তা অববাহিকার ২ কোটি মানুষের প্রাণের দাবি তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন। এই দাবিতে 'জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই' স্লোগানে তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন কমিটির ব্যানারে সংগঠনের প্রধান সমন্বয়কারী অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলুর নেতৃত্বে চলতি বছরের ১৭ ও ১৮ ফেব্রুয়ারি ১১৫ কিলোমিটার বিস্তৃত তিস্তার দুই তীরে ৪৮ ঘণ্টাব্যাপী অবস্থান কর্মসূচি পালিত হয়েছে। কর্মসূচিতে তিস্তা পাড়ের ৫ জেলার ১১ টি পয়েন্টের প্রতিটিতে লাখো মানুষ অংশ নেন। দ্রুত তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন ও তিস্তা পানি চুক্তি সম্পাদনের দাবিতে ৪৮ ঘণ্টার লাগাতার কর্মসূচির সমাপনী অনুষ্ঠানে বিএনপি'র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে লাখো লাখো মানুষের সমাবেশে উত্থাপিত দাবির প্রতি সংহতি জানিয়েছেন। তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের সেই কর্মসূচিতে উপস্থিত হয়ে এ অঞ্চলের সব রাজনৈতিক দল, জাতীয় নেতৃবৃন্দ, ছাত্র-ছাত্রী, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনসমূহ এ দাবিতে ঐকমত্য পোষণ করেছে।মধ্যে তিস্তা গণশুনানি, পাওয়ার চায়নার সঙ্গে ৫ জেলায় অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভা এবং চীনের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিবৃন্দের সাথে বৈঠক সম্পন্ন হয়েছে। প্রতিটি পর্যায়ে অন্যান্য স্টেকহোল্ডারের সাথে আমরাও সংগঠনগতভাবে উপস্থিত থেকে আমাদের সুচিন্তিত মতামত প্রদান করেছি।
সম্প্রতি সরকারের পক্ষে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান গণমাধ্যমে বলেছেন যে, ২০২৬ সালের জানুয়ারি মাসের শুরুতেই তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের ১ম ফেইজের কাজ শুরু করা হবে। ১২ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ১০ বছর মেয়াদি তিস্তা প্রকল্পের ১ম পর্যায় (৫ বছর) বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ৯ হাজার ১৫০ কোটি টাকা। এর মধ্যে চীনের কাছে ঋণ চাওয়া হয়েছে ৬ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। বাকি ২ হাজার ৪১৫ কোটি টাকা সরকারি কোষাগার থেকে ব্যয়চীনের সঙ্গে ফাইন্যানশিয়াল অ্যাগ্রিমেন্ট এখনও হয়নি। এ বিষয়টিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সঙ্গে চীন কাজ করছে। বিভিন্ন গণমাধ্যম থেকে জানা যায় যে, চলতি বছরের শেষের দিকে চীনের সঙ্গে প্রযুক্তিগত এবং ঋণচুক্তি সম্পন্ন হতে পারে। এ কাজের জন্য জরুরি প্রয়োজন আগামী একনেক সভায় অর্থ বরাদ্দ নিশ্চিত করা। ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ঘরপোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলে ভয় পায়। স্বৈরাচারী পতিত হাসিনা সরকার কথা দিয়ে তিস্তা মহাপরিকল্পনার স্বপ্নতরী তিস্তার তীরে নিয়ে এসে ডুবিয়ে দিয়েছিল। আমরা আর আশাহত হতে চাই না।
এ বিষয়ে গাইবান্ধা জেলা বিএনপির সভাপতি ও তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন গাইবান্ধা জেলা কমিটির অধ্যাপক ডা. মইনুল হাসান সাদিক বলেন, আমরা চাই নির্বাচনি তফশিল ঘোষণার আগেই নিজস্ব কোষাগারের টাকা দিয়েই (২ হাজার ৪১৫ কোটি, যা প্রকল্পে বরাদ্দ রাখা হয়েছে) ২০২৫ সালের নভেম্বর মাসে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদকালে তিস্তা মহাপরিকল্পনা কার্যক্রমের শুভ উদ্বোধন হোক। পরবর্তীতে নির্বাচিত সরকার যারাই আসবেন তারাই এ কাজের ধারাবাহিকতা রক্ষা করবেন।