মাহমুদ আহসান হাবিব, ঠাকুরগাঁও :কলেজ জীবনের বন্ধু, তাই বিশ্বাসে কোনো খাদ ছিল না। সেই বিশ্বাসের মর্যাদা দিতে গিয়েই বন্ধুর কাছে নেওয়া ভুয়া কম্পানির 'কেমিক্যাল যুক্ত' ফেসওয়াশ কিনেছিলেন শাহাজাদ ইসলাম (২০)। কিন্তু সেই ফেসওয়াশই যে তার জীবনের আলো কেড়ে নেওয়ার কারণ হবে, তা ঘুণাক্ষরেও ভাবেননি তিনি। বন্ধুর কাছ থেকে কেনা কেমিক্যাল যুক্ত ফেসওয়াশ ব্যবহার করে এখন চোখের আলো হাড়ানোর যন্ত্রণায় ভুগছেন শাহাজাদ।
শাহাজাদের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু কামরুল কিছুদিন আগে নিজ বাসায় (ডি এক্স এন) নামক কম্পানির কসমেটিকস বিক্রি চালু করেন। বন্ধুর হাজারো অনুরোধে এবং '১০০% ভেষজ ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন' এমন আশ্বাসে বিশ্বাস করে শাহাজাদ একটি দামী ফেসওয়াশ কেনেন।
গত শুক্রবার দুপুরে প্রথমবারের মতো সেটি ব্যবহার করেন তিনি। মুখে লাগানোর পর ধুয়ে ফেলার সময় বাম চোখে ফেনা ঢুকেই কাল হয় শাহাজাদ এর কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই তীব্র জ্বালাপোড়া শুরু হয় চোখ। একপর্যায়ে চোখ লাল হয়ে যায় এবং তিনি দৃষ্টিশক্তির স্বচ্ছতা হারাতে থাকেন
দ্রুত তাকে ঠাকুরগাঁও গ্রামীণ চক্ষু হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে বলে চোখের অবস্থা ভালো নয়,এই চোখ কখনো ভালো করা সম্ভব নয়।এর পর শাহাজাদ এর পরিবার হতাশা হয়ে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করান, সেখানে কিছুটা সুস্থ হয়ে বাড়িতে ফিরে আসে শাহাজাদ।
চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা. নুসরাত জাহান বলেন:
"রোগী যে ফেসওয়াশটি ব্যবহার করেছেন, তাতে ক্ষতিকারক এসিড বা ব্লিচিং এজেন্টের ও পেঁপের এক্সট্রাক্ট
উপস্থিতি ছিল। এটি চোখের কর্নিয়ার ওপরের স্তরে বিষাক্ত জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে যার কারণে চোখ জ্বালা পোড়া শুরু করে এর পর কর্ণিয়া আলসার হয়।
দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসার প্রয়োজন, তবে দৃষ্টিশক্তি পুরোপুরি ফিরবে কি না, তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।
"তবে পন্যের বিএসটিআই এর অনুমোদন লাইসেন্স আছে কিনা তা নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন। এই কম্পানির বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ রয়েছে টাকা হাতিয়ে নিয়ে লাপাত্তা হওয়ার। কম্পানির ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,
২০১৭-১৮ সালে বাংলাদেশে যে সকল এমএলএম কোম্পানি ফুড সাপ্লিমেন্ট বিক্রির নামে মানুষের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে পালিয়েছে তার মধ্যে ডিএক্সএন অন্যতম।
২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি অবৈধ, নিম্নমানের ও অনুমোদনহীন ওষুধ আমদানি ও বিক্রয়ের দায়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত ঢাকার বারিধারায় ডিএক্সএন ফার্মাসিউটিক্যালসকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করে।এছাড়া সেসময় ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়া নিম্নমানের, ভেজাল ও অনুমোদনবিহীন ওষুধ আমদানী ও বাজারজাত করায় ডিএক্সএন ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানীর ১০ লাখ টাকার ঔষধ জব্দ করা হয় এবং এসব ঔষধের কোনো বৈধ কাগজপত্র দেখাতে না পারায় কোম্পানীটির ব্যবস্থাপক সজল চক্রবর্তীকে ২ লাখ টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে আরো ৩ মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করা হয়।
ঘটনার পর থেকেই শাহাজাদের সেই বন্ধু কামরুল মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।
শাহাজাদ ইসলাম এর বোন সানোয়ারা তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, "বন্ধু হয়ে বন্ধুর এমন ক্ষতি কেউ করতে পারে? আমরা কামরুল এর বিরুদ্ধে ভোক্তা অধিকার ও থানায় অভিযোগ দায়ের করার প্রস্তুতি নিচ্ছি।"
স্থানীয় সচেতন মহল বলছেন, বর্তমানে বন্ধু-বান্ধব বা পরিচিত মহলে 'ব্যাগ প্যাক' ব্যবসা বা অনুমোদনহীন অনলাইন ব্যবসার হিড়িক পড়েছে। সম্পর্কের খাতিরে যাচাই-বাছাই ছাড়া এসব পণ্য কেনা বিপজ্জনক হতে পারে।
রুহিয়া থানা ভারপ্রাপ্ত ওসি নাজমুল কাদের বলেন এ বিষয়ে এখনো কোনো অভিযোগ পাইনি, অভিযোগ পেলে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কম্পানির সাথে যোগাযোগ করে এখনো কোন সারা পাওয়া যায় নি
শাহাজাদের এই মর্মান্তিক পরিণতি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে সৌজন্যতা রক্ষা করতে গিয়ে নিজের স্বাস্থ্যঝুঁকি নেওয়া কতটা ভয়াবহ হতে পারে।
