ইব্রাহীম মিঞা, বিরামপুর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি :দিনাজপুরের বিরামপুরে চাঁদপুর ফাজিল (স্নাতক) মাদ্রাসায় ঘটে গেছে এক নজিরবিহীন ও নিন্দনীয় ঘটনা। বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ক্লাস চলাকালীন সময়ে বাংলা প্রভাষক মোছাঃ মেফতাহুন নাহার ও তার স্বামী মির্জাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মিজানুর রহমান পদার্থবিজ্ঞান প্রভাষক এ এস এম আশরাফুল আলমকে প্রকাশ্যে লাঞ্ছিত ও মারধর করেন। এসময় বাধা দিতে গেলে জীববিজ্ঞান প্রভাষক জিন্নাত রেহানা লাঠির আঘাতে মাথায় গুরুতর আহত হন। ঘটনায় শিক্ষক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
লিখিত অভিযোগে ভুক্তভোগী আশরাফুল আলম জানান, দুপুর আনুমানিক ২টা ২০ মিনিটে আলিম ১ম বর্ষ সমাপনী পরীক্ষার খাতা ও নম্বরপত্র জমা না দেওয়াকে কেন্দ্র করে বাংলা প্রভাষক মেফতাহুন নাহারের সঙ্গে তর্ক হয়। একপর্যায়ে তিনি অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং লাঠি ও জুতা হাতে তুলে মারতে উদ্যত হন। কিছুক্ষণ পর তার স্বামী মিজানুর রহমান শিক্ষক মিলনায়তনে প্রবেশ করে এএসএম আশরাফুল আলমকে কিল-ঘুষি ও জুতাঘাত করেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গেলে জীববিজ্ঞান প্রভাষক জিন্নাত রেহানা বাধা দিতে এগিয়ে আসলে তাকেও লাঠি দিয়ে মাথায় আঘাত করা হয়।
ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন করার পর দ্রুত ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। একইসঙ্গে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শমসের আলী মন্ডল ও উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার আব্দুস সালাম ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন।
এ বিষয়ে একাডেমিক সুপারভাইজার আব্দুস সালাম মুঠোফোনে বলেন, “শিক্ষকদের মধ্যে সংঘর্ষের বিষয়টি ইতিমধ্যেই মাদ্রাসার সভাপতি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক)-কে অবহিত করা হয়েছে।”
অন্যদিকে অভিযুক্ত শিক্ষিকা মেফতাহুন নাহার ও তার স্বামী মিজানুর রহমান অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “ঘটনার পর আমাদেরকেও প্রিন্সিপালের কক্ষে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়েছে। আমরা নিজেরাও ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করি।”
এদিকে এ ঘটনায় স্থানীয় শিক্ষক সমাজ ও অভিভাবক মহল তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাদের অভিযোগ, “বিদ্যালয় ও মাদ্রাসা হলো শিক্ষার্থীদের নৈতিকতার পাঠশালা। অথচ শিক্ষক-শিক্ষিকারাই যদি প্রকাশ্যে হাতাহাতি ও লাঠিচার্জে লিপ্ত হন, তাহলে ছাত্রছাত্রীদের সামনে কী দৃষ্টান্ত তৈরি হচ্ছে? এ ধরনের ন্যাক্কারজনক ঘটনা পুরো শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য কলঙ্কজনক।”
শিক্ষক মহল ও স্থানীয়রা দোষীদের বিরুদ্ধে দ্রুত তদন্ত সাপেক্ষে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।