ইব্রাহীম মিঞা, বিরামপুর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি :দিনাজপুর জেলার বিরামপুর উপজেলার পলিপ্রয়াগপুর ইউনিয়নের শোটাপির কাচারি এলাকায় ছোট যমুনা নদীর তীরে গড়ে ওঠা একসময়ের প্রাণবন্ত শিশু পার্ক আজ অবহেলায় পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে আছে। এক সময় প্রতিদিন প্রায় ৭০ জন শিশু এখানে খেলাধুলা ও বিনোদনে মেতে উঠত। আজ সেখানে নেই কোনো কোলাহল, নেই হাসি-খুশির শব্দ বরং জরাজীর্ণ রাইডগুলোতে জমেছে ধুলা, ময়লা আর মাকড়সার জাল।
২০১৪ সালের ১৮ ডিসেম্বর তৎকালীন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান (ফিজুল) এর উদ্যোগে এবং একটি এনজিও সংস্থার সহযোগিতায় শিশুদের মানসিক বিকাশ ও বিনোদনের জন্য নির্মিত হয়েছিল এই পার্ক। কিন্তু সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ ও তত্ত্বাবধানের অভাবে কয়েক লক্ষাধিক টাকা ব্যয়ে নির্মিত পার্কটি এখন গবাদি পশু বাঁধার স্থানে পরিণত হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে পার্কে প্রায় ১৪টি খেলাধুলার সামগ্রী থাকলেও প্রতিটি আজ ভাঙাচোরা ও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে। কিছু শিশু এখনও ভাঙা দোলনায় ঝুলতে চেষ্টা করছে, যা যেকোনো মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। বিনোদনের স্থানের বদলে পার্কটি এখন পরিণত হয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায়।
একজন অভিভাবক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমার সন্তানরা মোবাইলে আসক্ত হয়ে পড়ছে। অথচ এই পার্কটি যদি সচল থাকত, তারা মাঠে দৌড়ঝাঁপ করে সুস্থভাবে বড় হতে পারত।
এ বিষয়ে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান জানান, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে শিশু পার্কটি নির্মাণ করা হলেও পরবর্তীতে আর কোনো সরকারি সহযোগিতা মেলেনি। সঠিকভাবে দেখাশোনা না করার কারণেই আজ এ অবস্থা হয়েছে।
এছাড়া ৭ নং ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য ও মাদ্রাসা ঈদগাহ মাঠ পরিচালনা কমিটির সহ-সভাপতি ইস্তামুল হক বলেন, পার্কটি দ্রুত সংস্কার করা জরুরি। শিশুদের নিরাপদ খেলাধুলা ও মানসিক বিকাশের স্বার্থে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অবিলম্বে হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।
স্থানীয়রা বলেন, শিশুদের জন্য এটাই ছিল একমাত্র বিনোদনকেন্দ্র। এখন শিশু-কিশোররা মাঠের বদলে মোবাইল গেমে আসক্ত হয়ে পড়ছে। তারা জোর দাবি জানিয়েছেন শিশু পার্কটি সংস্কার করে নিয়মিত তত্ত্বাবধানে নিয়ে আসা হোক।
একটি সমাজের শিশুদের মানসিক বিকাশ, সুস্থ দেহ ও বিনোদনের জন্য একটি ছোট পার্ক কতটা জরুরি তা বলার অপেক্ষা রাখে না। অথচ দায়িত্বহীনতা ও উদাসীনতায় পার্কটি আজ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। এ অবস্থায় অবিলম্বে সংস্কারের উদ্যোগ না নিলে এটি চিরতরে হারিয়ে যাবে।