Type Here to Get Search Results !

ধান রোপণে নারীদের নিরব বিপ্লব

ইব্রাহীম মিঞা, বিরামপুর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি : বাংলাদেশের কৃষিভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থায় নারীরা আজও পেছনের কাতারে থেকেও সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। বিশেষ করে বর্ষাকালে ধানের চারা রোপণের সময় পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও কৃষিকাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় চাষাবাদের ভরা মৌসুমে দেখা যাচ্ছে নারী শ্রমিকদের ব্যস্ততা। ধান রোপণের জন্য সকালে মাঠে নেমে, হাঁটু পানি মাড়িয়ে, ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাদার মধ্যে কাজ করছেন তাঁরা। রোদের উত্তাপ কিংবা বৃষ্টির ঝাপটা—কোনো কিছুতেই দমে যাচ্ছেন না। কিন্তু তাদের শ্রমের মূল্যায়ন? সেখানে রয়েছে বড় ধরনের বৈষম্য। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা (অতিরিক্ত ) জাহিদুল ইসলাম ইলিয়াস জানান, রোপা আমন মৌসুমে উপজেলায় ১৭ হাজার ৪৪৫ হেক্টর জমিতে ধান চাষ করা হয়। বর্তমানে রোপণের সময় নারীরা বিঘা প্রতি ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা পারিশ্রমিক পেলেও পুরুষ শ্রমিকরা একই পরিমাণ কাজের জন্য নিচ্ছেন ১৪০০ থেকে ১৬০০ টাকা। অথচ অনেক ক্ষেত্রেই নারীরা বেশি পরিশ্রম করেন এবং ধান রোপণে তাদের দক্ষতাও বেশি।” নারী শ্রমিকদের ভাষ্যমতে, “আমরা সকাল থেকে বিছন (চারা) উত্তোলন করে জমিতে বিকাল পর্যন্ত কাদায় দাঁড়িয়ে রোপণের কাজ করি। তারপরও পুরুষদের থেকে আমাদের মজুরি কম। তাও এই কাজ না করলে সংসার চলবে না।” এই বৈষম্যের বিষয়ে স্থানীয় সচেতন মহল মনে করেন, নারী শ্রমিকদের জন্য ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করা এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি। সমাজের চোখে যারা ‘সহযোগী’, তারা আসলে কৃষির ‘মূল চালিকাশক্তি’।নারী শ্রমিকরা শুধু রোপণ নয়—ধান বোনা, আগাছা পরিষ্কার, সেচ, ও ক্ষেত পরিচর্যার প্রতিটি পর্যায়ে যুক্ত থাকেন। কিন্তু সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে তাদের অবদান এখনো আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পায়নি। দিনাজপুরের বিরামপুরের মাঠে যে চিত্র প্রতিদিন ধরা পড়ে, তা গোটা দেশের নারীবান্ধব কৃষিনীতির জন্য একটি বার্তা বয়ে আনে। নারীদের শ্রমের ন্যায্য মূল্য, সম্মান এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারলে এই নীরব বিপ্লব কোনোদিনই গর্বের ইতিহাস হয়ে উঠবে না।
বিভাগ

Top Post Ad

Hollywood Movies