Showing posts with label ফিচার. Show all posts
Showing posts with label ফিচার. Show all posts

গ্রামীন অর্থনৈতিক উন্নয়নে নারীদের স্বপ্ন চূড়া

চিলাহাটি ওয়েব ডটকম : Saturday, December 9, 2023 | 12/09/2023 05:18:00 PM

চিলাহাটি ওয়েব ডেস্ক : বর্তমান সরকারে নানান মুখী উদ্যোগে ফসলের বহুমুখীকরণ সহ ক্ষুদ্র ব্যবসা থেকে শিল্পকারখানায় দিনবদলেছে। উত্তরের মঙ্গা আজ অতীত। অভাব-অনটন না থাকার কারণ নেই। নেই না খেয়ে মরে যাওয়ার সেই দিন।
এ অঞ্চলের পুরুষদের পাশাপাশি নারীরা বিভিন্ন কাজে অর্থনীতি চাঙ্গা করছে। দৃশপট পাল্টে গেছে শহর বন্দর গ্রামের। আর সেই মঙ্গা বা অভাব চলে গেছে যাদু ঘরে। উত্তরের নীলফামারীর গ্রামীণ নারীরা কুটির শিল্প, গ্রামে গ্রামে গড়ে উঠা পরচুল তৈরীর কারখানা, বিভিন্ন ধরনের হাতের কাজ, সেলাই প্রভৃতির মাধ্যমে অর্থনীতিতে অবদান রাখতে সক্ষম হচ্ছে। গ্রামীণ নারীরা সংসারের যাবতীয় কাজ স¤পন্ন করার পরও বাড়তি আয় উপার্জনে আর্থিক সচ্ছলতার আনছে বিভিন্ন ধরনের কুটির শিল্পের কাজ করছে।
গ্রামীণ অর্থনীতির উপার্জনের প্রধান মাধ্যম হচ্ছে বাঁশ ও বেতের কাজ। গ্রামীণ মহিলারা বেতের সাহায্যে পাঁটি, জায়নামায, ঝুড়ি ইত্যাদি তৈরি করে থাকে। বাঁশের সাহায্যে মুরগির খোপরি, ঘরের বেড়া ইত্যাদি তৈরি করে, যা স্থানীয় বাজারে ও পাড়া প্রতিবেশির কাছে বিক্রি করে আর্থিক প্রয়োজন মেটাই। গ্রামীণ নারীরা ছোটা আকারে পোল্ট্রি শিল্পের কাজ করছে।
দেশি ও বিদেশি জাতের স্বল্প সংখ্যক হাস মুরগি লালন-পালন করে তারা। বিভিন্ন মুরগি ও মুরগির ডিম বিক্রি করে তারা টাকা আয় করছে। গ্রামের অনেক নারী শাক-সবজির পাশাপাশি মৎস্য চাষ করে। মৎস্য চাষ ছোট হলেও অনেক সাফল্য ইতিমধ্যে অর্জিত হয়েছে। গবাদিপশু পালন গ্রামীণ অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য অবদানকারী একটি কাজ। গ্রামের এমন কোন বাড়ি নেই, যাদের দুই- চারটি গরু ছাগল থাকে না।
গরু দিয়ে চাষাবাদের পাশাপাশি দুধ ও গরুর বাছুর বিক্রির মাধ্যমে সংসারের প্রায়োজনীয় চাহিদা পুরন করে। ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতীয় ছাগল পালন অত্যন্ত লাভ জনক বলে বিবেচিত। কারণ এ জাতীয় ছাগল বছরে একাধিক বাচ্চা দেয়। যার ফলে নারীরা পারিবারিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হয়েছে।
উত্তরের নীলফামারী ছিল এক সময় অভাব অনটনের জেলা। ভাগ্য পরিবর্তনে আজ গ্রামীণ নারীদের হাতের বিভিন্ন কারুকার্য দেশে-বিদেশে ব্যাপক চাহিদা জাগাতে সক্ষম হয়েছে। গ্রামীণ বিশাল জনগোষ্ঠির মধ্যে নারীদের এই অবদান অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশেষ উল্লে¬খযোগ্য ভূমিকা রাখছে। সংসারে ফিরেছে স্বচ্ছলতা, হয়েছেন স্বাবলম্বী, মুখে ফুটেছে হাসি।
নীলফামারী সদর উপজেলার লক্ষীচাপ ইউনিয়নের পারঘাট আলোর বাজারে গড়ে ওঠা স্বপ্ন চূড়া হস্ত কুটির শিল্প।
এখানে অসংখ্য গ্রামীন নারী প্রশিক্ষণ নিয়ে কাজ করে হয়েছেন স্বাবলম্বী। এখানে নারীরা সংসারে কাজ শেষে নিজবাড়িতে বসেই তাদের নিপুন হাতে ২০ ধরনের নানান আকৃতির পন্য তৈরি করছেন। তারা পাট দিয়ে তৈরি করছেন ম্যাট, ওয়াল ম্যাট, রাউন্ড ম্যাট, ব্যাগ এবং হোগলা পাতা দিয়ে ফুলদানী, টব, বাস্কেটসহ নানান রকমের পন্য।
এসব পণ্যের প্রতিটি বাজার মূল্য প্রায় ৩০০-১০০০ টাকা পর্যন্ত। প্রতি সপ্তাহে নারীরা তাদের তৈরীকৃত এসব পন্য স্বপ্নচুড়ায় এনে সরবরাহ করেন। এতে তাদের মাসিক আয় হচ্ছে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা। এ সব পন্য তৈরির কাচাঁমালের যোগান আর্টিশান ও বিডিকেশন কো¤পানী দিয়ে থাকে। আর এসব পণ্য জার্মানী, জাপান, ইতালি, ফ্রান্স, মরোক্ক,হংকংসহ বিদেশের রপ্তানী করা হচ্ছে। একটা সময় যে গ্রামীণ নারীদের সময় কাটত অলসভাবে তারাই এখন স্বপ্ন দেখছেন আকাশ ছোঁয়া।
জেলা সদরের পলাশবাড়ী ইউনিয়নের সুমিত্রা রানী, কনিকা রানী , ফুলো বালা , বলেন- এখান থেকে আয় করে তাদের সংসারের স্বচ্ছলতা ফিরে এসেছে। এখন আর আগের মত সংসারে অভাব মনে হয় না তাদের। অনেক ভালো আছেন তারা।এখানকার এসব পন্য গুলো মানসম্মত ও পরিবেশ সামঞ্জস্ব পুর্ন হওয়ায় বিদেশে প্রচুর চাহিদা, জাপান,অস্টেলিয়া,ফ্রান্স,ইতালি,আমেরিকা, হংকংসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হয়।
স্বপ্নচুড়ার উদ্দ্যোক্তা ও পরিকল্পনা কারী শংঙ্কর চন্দ্র রায় জানান, কারিগরদের কাছে পন্যের কাচামাল আমরা সরবরাহ করি এবং আমরাই সঠিক দামে তৈরি পন্যগুলো ক্রয় করে বিদেশী বায়ারের কাছে বিক্রয় করে থাকি। এই কাজের মাধ্যমে এলাকার গ্রামীন পরিবার গুলো হচ্ছে উপকৃত অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী। মুল উদ্যেগতা শংঙ্কর রায় আরো বলেন, আমরা কয়েক বন্ধু মিলে চার লাখ টাকা মুলধন নিয়ে এই কুটির শিল্পের ব্যবসা শুরুকরি। দুই বৎসরে আমদের মোট মুলধন ছাড়িয়ে গেছে। আমরা এখন পাঁচ হাজার নারীর নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃস্টি করার জন্য কাজ করছি।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক)-এর উপ-মহাব্যবস্থাপক হোসনে আরা বেগম চিলাহাটি ওয়েব ডটকমকে বলেন- গৃহিণীরা এখন আর সংসারের কাজ শেষ করে বসে থাকতে চায়না।
নীলফামারীর জেলার ৬০টি ইউনিয়নের প্রতিটি গ্রামে গ্রামে গড়ে উঠেছে ক্ষুদ্র কঠির শিল্পকারখানা। ঘুরলেই চোখে পড়ে নারীদের ক্ষুদ্র নানা কাজে অংশগ্রহণের চিত্র। নারীদের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণের ফলে অর্থনীতির চাকা মজবুত হচ্ছে এই অঞ্চলের। ঘুরে দাঁড়াতে পারছেন নারীরা। নারীদের মধ্য থেকে উদ্যোক্তা তৈরি হচ্ছে, তারা কর্মক্ষেত্র তৈরি করছেন। এর ফলে নারীরা যেমন সমৃদ্ধ হচ্ছেন তেমনি সংসারে সক্ষমতা বাড়ছে।
নীলফামারীতে গ্রামে গ্রামে কুটির শিল্প ও পরচুলা তৈরির ফ্যাক্টরি হওয়ায় এলাকায় একটা পরিবর্তন এসেছে। এ ছাড়া নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডে ২৫ হাজার নারী বিভিন্ন কারখানায় কাজ করছে। এখানে কাজ করে অনেক নারী সংসারের অভাব ঘুচিয়েছেন। ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া করাচ্ছেন।
নারীদের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে ব্যস্ততা বেড়েছে। যারা কাজ করেন তারা সবাই নারী। তাদের সংসারে উন্নতির পরিবর্তন এসেছে। গ্রামের নারীদের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের বিকাশে বিসিক নানাভাবে পাশে রয়েছে এবং সহযোগিতা করছে।

সৈয়দপুরের ঐতিহ্য বেসন আর ছোলার মিঠাই মনসুরী

চিলাহাটি ওয়েব ডটকম : Friday, December 1, 2023 | 12/01/2023 04:21:00 PM

চিলাহাটি ওয়েব ডেস্ক : নীলফামারীর সৈয়দপুরের হোটেল-রেস্তোরাঁয় প্রচুর পরিমাণে বিক্রি হয় মনসুরী মিঠাই। বেসন, ছোলার ডাল আর চিনি দিয়ে বানানো এই মিষ্টি সংরক্ষণ করা যায় বেশ কয়েক দিন। ফলে কয়েক দিন ঘরে রেখে খাওয়ার জন্য অনেকেই এই মিষ্টি কিনেন। সৈয়দপুর শহরের গোলাহাট রেলকলোনির বাসিন্দা মো. ভোলার দাবি, তিনি বংশপরম্পরায় মনসুরী মিঠাইয়ের কারিগর।
তিনি ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর বিহারিঅধ্যুষিত জনপদ সৈয়দপুরে চলে আসেন। ভারতের বিহার রাজ্যের মুঙ্গের জেলার বাসিন্দা ছিলেন তিনি। সৈয়দপুরে তিনিই প্রথম মনসুরী মিঠাই বানিয়েছেন। পরে অন্যরা এই মিষ্টি বানাতে শুরু করেন। এভাবে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে যায় এই মিষ্টি। ভোলা বলেন, মনসুরী মিঠাই বানাতে প্রয়োজন হয় বেসন, ছোলার ডাল, চিনি ও সয়াবিন তেল। প্রথম যখন মনসুরী মিঠাই বানাতেন তখন ঘিয়ে ভাজতেন। বানানোর সঙ্গে সঙ্গেই বিক্রি হয়ে যেত। এখন ঘিয়ের বদলে সয়াবিন তেলে ভাজা হয় এই মিষ্টি।
সৈয়দপুর শহরের শহীদ ডা. জিকরুল হক সড়কে অবস্থিত দিলকুশা মিষ্টি ভান্ডার। পাকিস্তান আমলে এটার নাম ছিল দিলকুশা সুইটমিট। এর মালিক কামরুদ্দিন এসেছিলেন বিহার থেকে। ২০০৪ সালে মারা যান তিনি। এখন এই দোকান চালান তাঁর একমাত্র ছেলে মো. কাওসার। তিনি বলেন, ‘যত দূর জেনেছি, মনসুরী মিঠাই প্রথম দিল্লিতে তৈরি হয়।
মোঘল সম্রাটদের পাতে থাকত এই মিষ্টান্ন। আফগানিস্তানের কাবুলের একজন ময়রার নাম ছিল মনসুর পাঠান। তাঁর নামেই এই মিষ্টির নাম মনসুরী। তবে এ নিয়ে ভিন্ন মতও আছে।’ সৈয়দপুরের পাহলয়ান সুইটসের স্বত্বাধিকারী সখেন ঘোষ বলেন, মনসুরী মিঠাই কম দামের মিষ্টি। সবকিছুর দাম বাড়লেও এখনো এই মিষ্টি ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। সৈয়দপুরে শতাধিক রেস্তোরাঁয় প্রতিদিন কমপক্ষে ১০০ মণ মনসুরী মিঠাই তৈরি হয়। স্থানীয় ক্রেতার পাশাপাশি আশপাশ থেকে আসা পাইকারেরা মনসুরী মিঠাই কিনে নিয়ে যান। ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলাতেও এটার ক্রেতা আছে।
শহরের শহীদ তুলশিরাম সড়কে অবস্থিত নাটোর দই ঘরে আসা ক্রেতা মতিয়ার রহমান বলেন, সৈয়দপুরে অনেক ভালো মিষ্টির শোরুম হচ্ছে। নতুন নতুন নানা পদের মিষ্টি আসছে। কিন্তু মনসুরী মিঠাইয়ের কোনো পরিবর্তন নেই। মানুষ এখনো এই মিষ্টি আনন্দ নিয়ে খায়।
অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক বিলকিস আরা বলেন, ‘আমার ছেলেমেয়েরা ঢাকায় থাকে। এখান থেকে কেউ গেলে মনসুরী মিঠাই পাঠানোর কথা বলে তারা। আমি সেভাবে মনসুরী মিঠাই পাঠাই।’
সৈয়দপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোখছেদুল মোমিন বলেন, সৈয়দপুরের ঐতিহ্য মনসুরী মিঠাই টিকিয়ে রেখেছেন হোটেল মালিক ও কারিগরেরা।
সৈয়দপুরে বিয়েবাড়ি কিংবা মিলাদ মাহফিলে মনসুরীর কদর থাকে সবচেয়ে বেশি। প্রয়োজনে কারিগরদের সহযোগিতা দিয়ে ঐতিহ্যবাহী মনসুরী টিকিয়ে রাখার চিন্তাভাবনা চলছে বলে তিনি জানান।

ব্রিটিশদের তৈরি বাংলাদেশের প্রথম রেল স্টেশনের ইতিহাস

চিলাহাটি ওয়েব ডটকম : Tuesday, November 21, 2023 | 11/21/2023 01:40:00 PM

চিলাহাটি ওয়েব ডেস্ক : ১৮৬২ সালের ১৫ নভেম্বরে প্রথম রেলগাড়ি চলেছিলো বর্তমানের বাংলাদেশ ভূখণ্ডে, থেমেছিলো কুষ্টিয়ায় জগতি রেলস্টেশনে। প্রায় ১৬০ বছর ধরে চলমান আছে বাংলাদেশের প্রথম রেলস্টেশন। কুষ্টিয়া শহর থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে।
ব্রিটিশরা কুষ্টিয়ার জগতিতে এই রেলস্টেশনটি গড়ে তুলেছিলো। লাল ইট দিয়ে নির্মাণ করেছিলো দোতলা স্টেশন ভবন। এখন অবশ্য ঐতিহ্য-মণ্ডিত এই স্টেশন ভবনটি এক রকম পরিত্যক্তই বলা যায়। ভবনে ফাটল ধরায় উপরতলাতে কেউ যায়নি বহুবছর।
অনেকদিন আগেই যাত্রীদের সুবিধার জন্য তৈরি করা ওয়েটিং রুমও ভেঙে গেছে। আবার প্লাটফর্মের ইটও ভেঙে গেছে আর গাঁথুনিও ক্ষয়ে গেছে। স্টিম ইঞ্জিনে পানি দেওয়ার জন্য প্লাটফর্মের দুই পাশে নির্মাণ করা হয়েছিলো বড় দুটি ওভারহেড পানির ট্যাংক, সেগুলোও অনেকদিন আগেই পরিত্যক্ত হয়ে গেছে। এই ট্যাংক দুটিতে সেই সময় কয়লার ইঞ্জিনে চলা পাম্প দিয়ে মাটির নিচে থেকে পানি তোলা হতো।
১৮৫৩ সালের ১৬ এপ্রিল পেনিনসুলার রেলওয়ে নামক কোম্পানির নির্মিত প্রথম যাত্রীবাহী বাষ্পচালিত ট্রেন ইঞ্জিন ভারতীয় উপমহাদেশে যাত্রা শুরু করে। মুম্বাইয়ের বোরিবন্দর থেকে থানে পর্যন্ত ৩৪ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেয় ৪০০ জন যাত্রী নিয়ে।
এর পরের বছর, অর্থাৎ ১৮৫৪ সালে পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া থেকে হুগলি পর্যন্ত ৩৮ কিলোমিটার রেলপথ চালু করার মধ্য দিয়ে বাংলায় প্রথম রেলপথের সূচনা হয়।
এরপর ইস্টার্ন বেঙ্গল রেলওয়ে ১৮৬২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর পশ্চিম বাংলার রাজধানী কলকাতার শিয়ালদহ থেকে রানাঘাট পর্যন্ত ব্রডগেজ (৫ ফুট ৬ ইঞ্চি) রেলপথ চালু করে। শিয়ালদহ থেকে রানাঘাট পর্যন্ত যে রেলপথ চালু করা হয়েছিলো, সেটাকে সেই বছরেই বর্ধিত করে বর্তমান কুষ্টিয়া জেলার (সাবেক নদীয়া) জগতি পর্যন্ত ৫৩.১১ কিলোমিটার দীর্ঘ করা হয়।
তারপর ১৮৬২ সালের ১৫ নভেম্বর কলকাতার শিয়ালদহ থেকে কুষ্টিয়ার জগতি পর্যন্ত ট্রেন চলাচল শুরু হয়। পশ্চিম বাংলার গেদে–বাংলাদেশের দর্শনা সীমান্ত পার হয়ে সরাসরি ট্রেন এসেছিলো বর্তমান কুষ্টিয়া জেলা শহর থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে জগতি পর্যন্ত।
প্রায় বছর-খানেক আগে যখন খোঁজ নিয়েছিলাম, তখন এই স্টেশনে কর্মকর্তা-কর্মচারী ছিলো মাত্র পাঁচজন। এদের মধ্যে ছিলো একজন স্টেশন মাস্টার, তিনজন পয়েন্সম্যান আর একজন গেটম্যান। তাদের কথামতে, এখানে আরো ১২-১৩টি পদ দীর্ঘদিন ধরেই ফাঁকা রয়েছে।
এই এলাকার বয়স্ক কয়েকজন চিলাহাটি ওয়েবকে জানান- তারা নাকি ছোটবেলায় ২০-২২ জন কর্মচারীকে ব্যস্ত দিন-রাত পার করতে দেখেছেন।
রেলস্টেশনের সাথেই গড়ে উঠেছে জগতি বাজার, অল্প কিছু দোকানপাট রয়েছে সেখানে। এখনও মাঝেমধ্যে এখানে ভারত থেকে কয়লা, পাথর নিয়ে আসা মালবাহী ট্রেনের দেখা পাওয়া যায়।
একসময় স্টেশনের অনেক জমি থাকলেও এখন খুব বেশি জমি অবশিষ্ট নেই। বাংলাদেশ ভূখণ্ডের প্রথম স্টেশনটি একে একে পার করে ফেলেছে ১৫৮ বছর।
অযত্ন, অবহেলায় ধীরে ধীরে বাতিল হতে থাকা এই স্টেশনটি রেলসেবা প্রদানের জন্য রেল মন্ত্রণালয়ের কাছে লাভজনক না হলেও ঐতিহাসিকভাবে জগতি স্টেশন অনেক গুরুত্ব বহন করে। তাই এর রক্ষণাবেক্ষণও জরুরি।

কুমিল্লার মনোহরগঞ্জে ৩৬৬ বছরের মসজিদটি এখনো তেমনই আছে

চিলাহাটি ওয়েব ডটকম : Monday, November 20, 2023 | 11/20/2023 05:39:00 PM

ফৌজিয়া-তুজ-জাহান : প্রাচীন স্থাপত্যকলার এক অনন্য নিদর্শন কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলার ঐতিহাসিক বড় শরীফুর মসজিদ। উপজেলার শরীফপুর গ্রামে ১৬৫৭ সালে নির্মিত হয় একটি দৃষ্টিনন্দন মসজিদ। মসজিদটি এখনো আগের মতোই দেখতে। পৌনে ৪০০ বছরেও এটির সৌন্দর্য নষ্ট হয়নি। চুন-সুরকির মসজিদটি দেখতে প্রতিদিনই সেখানে মানুষ ভিড় জমান। অনেকে এসে নামাজ পড়েন। তিন জেলার মোহনায়
এ মসজিদটির অবস্থান। পাশে চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলা। কিছু দূরে নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলা। মসজিদের পেছনে রয়েছে ২৭.২৪ একর আয়তনের নাটেশ্বর দীঘি। এর মালিকানা কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ ও চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলার বাসিন্দাদের। ওই দীঘিরপাড়ে রয়েছে সৈয়দ শাহ শরীফ বাগদাদি পীরের মাজার।
মসজিদ, দীঘি ও মাজারকে ঘিরে এখানে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠতে পারে বলে অভিমত স্থানীয়দের। সরাসরি গেলে দেখতে পারবেন, মসজিদের বাইরের দৈর্ঘ্য ১৪.৪৮ মিটার ও প্রস্থ ৫.৯৪ মিটার। মসজিদের ওপরে তিনটি গম্বুজ রয়েছে। গম্বুজে রয়েছে পদ্মফুলের নকশা। মসজিদের সামনের দেয়ালে ফার্সি ভাষায় শিলালিপি রয়েছে।
সেখানে উল্লেখ আছে, জনৈক হায়াতে আবদুল করিম নামে এক ব্যাক্তি মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করেন। হায়াতে আবদুল করিমের পরিচয় নিয়ে দুটি মত রয়েছে, একটি হচ্ছে- তিনি নাটেশ্বর নামের এক রাজার কর্মকর্তা ছিলেন। আরেকটি মত হচ্ছে- তিনি সৈয়দ শাহ শরীফ বাগদাদি নামের একজন দরবেশের মুরিদ ছিলেন।
এদিকে মসজিদের পেছনে ২৭ বিঘা আয়তনের শান্ত জলের বড় দীঘি। সেটির পাড়ে বসলে স্নিগ্ধ হাওয়ায় ঝরে যাবে দেহের যত ক্লান্তি। হাতে কিছুটা সময় নিয়ে আসতে পারেন । ঘুরে দেখলে অবশ্যই ভালো লাগবে। জানতে পারবেন পুরনো এই মসজিদটির ইতিহাস সম্পর্কে। বড় শরীফপুরের এ মসজিদটি দেখতে প্রতিদিনই সেখানে মানুষ আসেন। এ মসজিদের ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে। মসজিদের ভিতরে-বাইরে মিলিয়ে পাঁচ শতাধিক মানুষ নামাজ পড়তে পারেন।
আরো জানতে পারবেন, জেলা সদর থেকে মসজিদটি ৪০ কিলোমিটার ও উপজেলা সদর থেকে ছয় কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এ মসজিদের একদিকে ডাকাতিয়া নদী, অন্যদিকে নরহ খাল। অপরদিকে মনোহরগঞ্জ-হাসনাবাদ সড়ক। পেছনে রয়েছে বিশাল নাটেশ্বর দীঘি। দীঘির পাড়ে মাজার শরীফ।
এখানে একটি পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠতে পারে। প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে থেকে জানা যায়, এটি কুমিল্লা জেলার গুরুত্বপূর্ণ প্রাচীন মসজিদ। বর্তমানে এটি প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের আওতায় সংরক্ষিত। তিন জেলার মোহনায় মসজিদ, দীঘি ও মাজারকে ঘিরে একটি প্রত্ন পর্যটন কেন্দ্র গড়ে ওঠার ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে।

হারিয়ে যাচ্ছে পাহাড়ের মাচাং ঘর

চিলাহাটি ওয়েব ডটকম : Sunday, November 5, 2023 | 11/05/2023 03:31:00 PM

টিং শৈ গ্রু মংটিং : বান্দরবান পার্বত্য জেলায় বসবাসকারী ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায় যেন নানাভাবেই শিল্পী। তারা যেমন নিজেদের পোশাক নিজেরাই তৈরি করেন, চাষাবাদেরও রয়েছে তাদের ভিন্ন পদ্ধতি।
বসবাসের জন্য তারা ব্যবহার করেন পাহাড়ের ঢালুতে ভিন্ন কায়দায় বিশেষ পদ্ধতিতে তৈরি মাচাং ঘর। 
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বান্দরবানে সদর উপজেলা, রুমা, থানছি, লামা, আলীকদম, নাইক্ষ্যংছড়ি, রোয়াংছড়িসহ সাতটি উপজেলায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অনেক পরিবারই তাদের বসবাসের জন্য মাচাং ঘর তৈরি করেন। বিশেষ করে দূর্গম এলাকায় জুম চাষাবাদ এবং বসবাসের জন্য মাচাং ঘরগুলো তৈরি হয়। সাধারণত বাঁশ, ছন দিয়ে নিপুণভাবে তৈরি হয় এসব মাচাং ঘর। তবে ঘরের বেশির ভাগ অংশেই বাঁশের ব্যবহার হয়ে থাকে। ছনের মাচাংগুলো দেখতে যেমন চৌকস, তেমনি প্রাকৃতিক শীতাতপ হওয়ার কারণে এই মাচাং ঘরে বসতে ও ঘুমাতে খুবই আরামদায়ক।
তবে জীবনযাত্রার পরিবর্তন এবং পাহাড় থেকে বাঁশ ও ছন হারিয়ে যাওয়ার ফলে বর্তমানে বান্দরবানের বিভিন্ন স্থানে বাঁশের, ছনের তৈরি মাচাং ঘরের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। জুম পাহাড়ের শীর্ষে কিংবা ছোট বাগান বাড়িতে একসময় জমির মালিকরা মাচাং ঘর তৈরি করে সেখানে তাদের সময় ব্যয় করতেন। কিন্তু কালের বিবর্তনে চাহিদার মতো বাঁশ, গাছ ও ছন না পাওয়ায় এখন পার্বত্য জেলাগুলো মাচাং ঘর হারিয়ে যাওয়ার পথে।
বান্দরবানের পরিবেশবিদ অং চা মং বলেন, পার্বত্য এলাকায় এক সময় মাচাং ঘরের যথেষ্ঠ কদর ছিল। যে কোনো পাহাড়ি বাগানে একটি মাচাং ঘর দেখতে পেতাম, কিন্তু বর্তমানে কিছু অসাধু বনখেকোদের কারণে পাহাড়ে এখন আর আগের মত ছন, বাঁশ, গাছ পাওয়া যায় না। কারণ বনখেকোরা বড় বড় গাছ কাটার কারণে পরিবেশ একদিকে দূষিত হচ্ছে অপরদিকে প্রয়োজনমতো ছন, বাঁশ ও গাছ না পাওয়ার কারণে পাহাড়ের ঐতিহ্য মাচাং ঘর তৈরিতে অনেকেই আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন।
তিনি আরো বলেন, ঐতিহ্যবাহী মাচাং ঘরকে টিকিয়ে রাখতে হলে সরকারি-বেসরকারিভাবে সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। তিনি জানান, পার্বত্য জেলায় বসবাসরত পাহাড়িরা পাহাড় কাটায় অভ্যস্ত ছিল না। পাহাড় কাটা রোধ করতেই তারা মাচাং ঘর বেঁধে থাকেন। পাহাড়ের মাটি সাধারণত ঢালু থাকে। মাচাং ঘর না বাঁধলে পাহাড়ি ঢালু মাটি সমতল করতে পাহাড় কাটতে হতো। মূলত এ কারণেই পাহাড়িরা মাচাংঘরে জীবন ধারণ করে থাকেন। আর এ থেকেই পাহাড়ি সমাজে এটি একটি সংস্কৃতি হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। 
বান্দরবানের বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী ও কবি আমিনুর রহমান প্রামানিক বলেন, “আদিকাল থেকে পার্বত্য এলাকায় বসবাস করা সম্প্রদায় মাচাং ঘরে বসবাস করে আসছে, তারা ঘর তৈরির কথা ভাবলেই মাচাং ঘরের কথা বলতো এবং বন জঙ্গল থেকে ভালোমানের বাঁশ ও ছন নিয়ে মাচাং ঘর তৈরি করতো কিন্তু এখন মাচাং ঘর হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের কাছ থেকে।” তিনি জানান, কালক্রমে পার্বত্য জেলায় জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে বন-জঙ্গল উজাড় হয়ে পড়েছে। তাই এখন বন্যপশু বা হিংস্র প্রজাতির জীব-জন্তুও বিরল হয়ে পড়ছে। ফলে সেই হিংস্র পশুর আক্রমণের আশংকাও আর নেই। পাশাপাশি আধুনিকতার ছোঁয়ায় এখন প্রায়ই ঘরে দরজা ব্যবহার চলছে।
কেবল গ্রামাঞ্চলে সংস্কৃতিগত কারণে অথবা বিশেষ বাস্তবতায় এখনও ব্যবহার রয়েছে এ ঐতিহ্যবাহী মাচাংঘরের। বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্টির সাংস্কৃতিক ইনিস্টিটিউটের কনভেনিং কমিটির সদস্য সিং ইয়ং বলেন, “এক সময় মাচাং ঘর পাহাড়ের জন্য জনপ্রিয় হলে ও দিন দিন এই ঘর হারিয়ে যাচ্ছে।
এখন জনসাধারণ ইট সিমেন্টের দালান তৈরি করতে ব্যস্ত। মূলত বনে বাঁশ,গাছ আর ছন নেই, তাই সাধারণ মানুষ মাচাং ঘর তৈরি করতে পারছে না আর আমরা হারিয়ে ফেলছি মাচাং ঘর।”

চিলাহাটিতে হালকা শীতের অনুভূতি

চিলাহাটি ওয়েব ডটকম : Friday, October 27, 2023 | 10/27/2023 02:08:00 PM

দিনে গরম থাকলেও ভোরে ও সন্ধ্যায় হালকা কুয়াশা পড়ছে। উত্তরাঞ্চলের সীমান্তবর্তী এলাকা চিলাহাটিতে ভোরে ও রাতে হালকা শীতও অনুভূত হচ্ছে।
ফসলের ক্ষেতসহ ঘাসে শিশির এঁকে দিচ্ছে শীতের চিহ্ন। প্রকৃতিও শান্ত-নীরব থাকছে। শীতের আগমনে নদী-নালা ও খালবিলে কমতে শুরু করেছে পানি। মিষ্টি রোদ আর সবুজ ঘাসের ওপর বিন্দু বিন্দু শিশিরকণা দিচ্ছে শীতের আগমনি বার্তা।
আগাম শীতের বার্তা দিচ্ছে প্রকৃতি। গরিব ও অভাবী মানুষ পুরোনো কাঁথা ও লেপ-তোশক নতুন করে সেলাই করে শীতের প্রস্ততি নিচ্ছেন। রাতে সব বয়সী মানুষের শরীরে কাঁথা ও হালকা কম্বল জড়াতে হচ্ছে।
শীতের সঙ্গে সঙ্গে আগাম সবজি চাষ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন প্রান্তিক চাষিরা। মুলা, ফুলকপি, বাঁধাকপি, শিম, লাউ, টমেটো, লালশাকসহ বিভিন্ন শীতকালীন সবজির আগাম চাষাবাদ করেছেন তারা।
এ বছর আগাম শীত এসে যাওয়ায় অনেকের আশঙ্কা, পুরো শীত মৌসুমে এর তীব্রতা বেড়ে যাবে।

লেখক :

আহসান ইবনে রোকন

শত বছরের সন্দেশ

চিলাহাটি ওয়েব ডটকম : Tuesday, October 24, 2023 | 10/24/2023 02:05:00 PM

চিলাহাটি ওয়েব ডেস্ক : বাঙালি জাতি হিসাবে আমরা ভোজনরশিক। খাওয়া-দাওয়া আমরা খুবই পছন্দ করি। আমাদের দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে রয়েছে বিখ্যাত সব মিষ্টি। মিষ্টির কথা স্থান পেয়েছে সাহিত্যের পাতায়। সৈয়দ মুজতবা আলি মিষ্টি নিয়ে লিখেছেন।
নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলার সন্দেশ একবার যিনি খেয়েছেন তাকে বারবার মনে করতে হবে এর স্বাদের কথা। মুখে দিলেই হাওয়ায় মিষ্টির মতো যেন গলে যায়। মান্দা থানার ফেরিঘাট সংলগ্ন ছোট ছোট এই মিষ্টান্নের দোকানগুলোতে পাওয়া প্রায় শত বছরের পুরনো সন্দেশ।
যতোদূর জানা যায় যে, সন্দেশ দেব দেবীর ভোগের জন্য। পরবর্তীতে এই সন্দেশের সুখ্যাতি জেলা শহরের গন্ডি পেরিয়ে দেশ বিদেশের বহু অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। সন্দেশ এমনিতেই কৃত্রিম উপায়ে এক সপ্তাহ পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়। তাই ঘরে রেখে সময় নিয়ে ইচ্ছেমত খাওয়া যায়।
মান্দার সন্দেশ তৈরির কারিগরদের সাথে কথা বলে জানা যায়, দুধ থেকে তৈরি ছানা দিয়ে সন্দেশ তৈরি করা হয়। ছানার সাথে চিনি, ছোট এলাচ ও খেজুরের গুড় মিশিয়ে তৈরি করা হয় সুস্বাদু সন্দেশ। এখানকার সন্দেশগুলো গোলাকৃতির হয়ে থাকে, ৭৫ থেকে ৮০ পিসে ১ কেজি ওজন হয়।

হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী মাচাং ঘর

চিলাহাটি ওয়েব ডটকম : Monday, October 23, 2023 | 10/23/2023 05:16:00 PM

আপেল বসুনীয়া, চিলাহাটি ওয়েব : আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে গেছে ঐতিহ্যবাহী মাচাং ঘর। বাঁশ, কাঠ, টিন ও ছন দিয়ে বিশেষ পদ্ধতিতে তৈরি মাচাং ঘর এক সময়ের ঐতিহ্যবাহী ঘর।
আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে গেছে ঐতিহ্যবাহী মাচাং ঘর। বাঁশ কাঠ ও ছন দিয়ে বিশেষ পদ্ধতিতে তৈরি এক ধরনের ঘরকে বলা হয় মাচাং ঘর।
ভূমি থেকে উচুঁ খুঁটির উপর নির্মিত এ মাচাং ঘরে পোকা মাকড় ও বন্যপ্রাণীর আক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। শুধু তাই নয় বিশ্রাম নেয়া, ধান রাখা থেকে শুরু করে গৃহস্থালির নানা কাজে ব্যবহৃত হয় মাচাং ঘর। আধুনিকতার ছোঁয়ায় মাচাং ঘর প্রায় বিলুপ্তির পথে।

চিলাহাটিতে বিলুপ্তির পথে বাবুই পাখি

চিলাহাটি ওয়েব ডটকম : Friday, October 6, 2023 | 10/06/2023 06:15:00 PM

আপেল বসুনীয়া,চিলাহাটি ওয়েব : নীলফামারী জেলার চিলাহাটির বিভিন্ন এলাকায় উঁচু তাল, নারিকেল ও খেজুর গাছে এক সময় দেখা মিলতো বাবুই পাখির বাসা। কিন্তু এখন সারিবদ্ধ তালগাছের পাতায় ঝুলতে দেখা যায় না তাদের শৈল্পিক বাসা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন, কীটনাশকের ব্যবহার, শিকারিদের দৌরাত্ম্য, অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাবুই পাখি বিলুপ্ত হতে বসেছে। 
সাধারণত বাবুই পাখি খড়, ঝাউ, তালপাতা ও কাশবনের লতাপাতা দিয়েই উঁচু তাল গাছ এবং খেজুর গাছে বাসা বাঁধে। বাবুই পাখি বাসা বানানোর জন্য খুবই পরিশ্রম করে থাকে। বাবুই প্রথমে ঠোঁট দিয়ে ঘাসের আস্তরণ সারায় এবং যত্ন করে পেট দিয়ে ঘষে অর্থাৎ পালিশ করে মসৃণ করে বাসা তৈরি করে। সাধারণত উঁচু তালগাছে খড়-কুটো দিয়ে তৈরি বাসা দেখতে খুব সুন্দর, আকর্ষণীয় ও মজবুত যা প্রবল ঝড়েও ছিঁড়ে পড়ে না। বাবুই পাখির বাসা শুধু শৈল্পিক নিদর্শনই নয়, মানুষকে স্বাবলম্বী হতে উৎসাহিত করতো।
কবি রজনী কান্ত সেনের ভাষায়- ‘বাবুই পাখিরে ডাকি বলিছে চড়াই, কুঁড়েঘরে থেকে করো শিল্পের বড়াই। আমি থাকি মহাসুখে অট্টালিকার ’পরে, তুমি কত কষ্ট পাও রোদ, বৃষ্টি-ঝড়ে।’ চিরচেনা সেই বাবুই পাখি এখন আর খুব একটা চোখে পড়ে না। নির্বিচারে তাল ও সুপারি গাছ কাটায় বসবাস উপযোগী পরিবেশ নেই। ফলে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামবাংলার শৈল্পিক কারিগর ‘বাবুই পাখি’!
অথচ মাত্র ১৫-১৬ বছর আগেও গ্রামবাংলার সবখানে চোখে পড়তো চিরচেনা সেই পাখি। দেখা যেত সারিবদ্ধ তালগাছ অথবা সুপারি গাছের পাতায় কি সুন্দরভাবে ঝুলে আছে। এখন আর ঝুলতে দেখা যায় না, কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত হয় না গ্রামবাংলার জনপদ।

কাশফুলের সৌন্দর্যে মুগ্ধ প্রকৃতি প্রেমীরা

চিলাহাটি ওয়েব ডটকম : Sunday, October 1, 2023 | 10/01/2023 12:59:00 PM

আপেল বসুনীয়া,চিলাহাটি ওয়েব : শরৎ মানেই নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা এবং কাশফুলের শুভ্রতা। স্বচ্ছ নীল আকাশে সাদা মেঘ, মাঠজুড়ে সবুজের সমারোহ ও সাদা কাশফুল যখন বাতাসের দোলায় দুলতে থাকে তখন মনটাও যেন আন্দোলিত হয়।
প্রকৃতিতে যখন শরৎকাল আসে তখন কাশফুলই জানিয়ে দেয় এর আগমনী বার্তা। এই ঋতুতে পালকের মতো নরম ও ধবধবে সাদা রঙের কাশফুল ফোটে। কাশফুলের অপরূপ সৌন্দর্য পুলকিত করে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দায়। 
নীলফামারী জেলার চিলাহাটিরি গিরিয়ার ডাঙ্গা এলাকায় ঢেকে গেছে কাশফুলে। ঝকঝকে নীল আকাশে ভেসে বেড়ানো সাদা মেঘের ভেলা প্রকৃতি প্রেমীদের কাছে টানছে। এমন মনোমুগ্ধকর পরিবেশ সবার মন ছুঁয়ে যায়।
সূর্য অস্ত যাওয়ার আগে ওইসব স্থানে প্রকৃতিপ্রেমীদেরকে দেখা যায়। কেউ কেউ ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করছেন।

সৈয়দপুরে দর্শনীয় ন্যারোগেজ ইঞ্জিন ও রেলের মিউজিয়াম

চিলাহাটি ওয়েব ডটকম : Saturday, September 30, 2023 | 9/30/2023 12:10:00 PM

আপেল বসুনীয়া,চিলাহাটি ওয়েব : দেশের বৃহত্তম সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার অভ্যন্তরে রাখা ন্যারোগেজ ইঞ্জিন ও গড়ে উঠা রেলওয়ের মিউজিয়াম দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়েছে। ফলে দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন আসছেন কয়লাচালিত লোকোমোটিভ বা ইঞ্জিন দেখতে। কেউবা রেলের মিউজিয়াম ঘুরে দেখে অতীত ঐতিহ্য খুঁজে ফিরছেন।
১৮৭০ সালে ১১০ একর জমির ওপর সৈয়দপুরে নির্মিত হয় দেশের প্রাচীন এবং বৃহত্তম রেলওয়ে কারখানা। ব্রিটিশ আমলে নির্মিত এ রেল কারখানার ২৬টি উপ-কারখানায় শ্রমিকরা কাজ করে থাকেন। রেলের ছোটবড় যন্ত্রাংশ থেকে শুরু করে ব্রডগেজ ও মিটারগেজ লাইনের বগি মেরামতসহ সব কাজ করা হয় এই কারখানায়।
রেলওয়ে সম্পর্কে বাস্তব জ্ঞান অর্জনে দেশের বিভিন্ন কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এই কারখানা পরিদর্শন করেন। সৈয়দপুর রেল কারখানা ঘুরে দেখা মেলে ইতিহাসের সাক্ষী কয়লাচালিত ইঞ্জিনের। কারখানা চত্বরে যে তিনটি লোকোমোটিভ স্থান পেয়েছে তার মধ্যে একটি ন্যারোগেজ ইঞ্জিন, একটি কয়লাচালিত ব্রডগেজ এবং অন্যটি ডিজেলচালিত মিটারগেজ ইঞ্জিন।
কয়লা চালিত ন্যারোগেজ বাষ্পীয় লোকোমোটিভ বা ইঞ্জিন সিএস ১৫। এটি তৈরি করা হয় ১৯৩৬ সালে। বিজ্ঞানী জেমস ওয়াটের বাষ্পীয় ইঞ্জিন আবিষ্কারের অনেক পরে। ইঞ্জিনটি নির্মাণ করে ইংল্যান্ডের ডবিউজি বাগলান লিমিটেড নামের একটি কারখানা। ১০ ফুট ৬ ইঞ্চি উচ্চতা আর ১৯ ফুট দীর্ঘ ইঞ্জিনটির ওজন ১১ দশমিক ৭৬ টন। খুলনা-বাগেরহাট রুটে কয়লাচালিত ইঞ্জিন দিয়ে ট্রেন চলাচল করত।
সর্বশেষ ১৯৩৬ থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত চলাচল করেছে এই কয়লাচালিত ন্যারোগেজ স্টিম লোকোমোটিভ। বর্তমানে সারা পৃথিবীতে ন্যারোগেজ ইঞ্জিনের ব্যবহার নেই বললেই চলে। রেলের ইতিহাস বহন করা আরেকটি ইঞ্জিন হলো কয়লাচালিত ব্রডগেজ বাষ্পীয় লোকোমোটিভ বা ইঞ্জিন এসজিসি-জেড ২৪০। এটি ৫৩ ফুট ১০ ইঞ্চি লম্বা। ১৯২১ সালে তৈরি হয়েছিল। এ ইঞ্জিন দিয়ে পাকশি রুটে ট্রেন চলাচল করত।
১৯৩৭ থেকে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত চলাচলের উপযোগী ছিল। সময়ের বিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে রেলের ইঞ্জিনেও আসতে থাকে পরিবর্তন। কয়লাচালিত ইঞ্জিনের পরিবর্তে আসতে থাকে ডিজেলচালিত ইঞ্জিন।
সৈয়দপুর রেল কারখানার চত্বরে ডিজেলচালিত একটি মিটারগেজ লোকোমোটিভ বা ইঞ্জিন এমএইচজেড-৮ (৩৩৩২) রাখা আছে। এটি ৩৮ ফুট লম্বা। এ ইঞ্জিনটি ১৯৮২ সালে তৈরি হয়েছিল। ইঞ্জিনটি দিয়ে পার্বতীপুর-সান্তাহার-লালমনিরহাট রুটে ট্রেন চলাচল করত বলে জানা গেছে।
সর্বশেষ ১৯৮৩ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত এ ইঞ্জিন চলাচল করেছে। বাংলাদেশ রেলওয়ের তথ্য অনুসারে, ১৮৬২ সালে বাষ্পীয় ইঞ্জিনের রেলসেবা চালুর পরবর্তী শত বছরেরও বেশি সময় ধরে এই ইঞ্জিনগুলো বাংলাদেশের রেলওয়েতে সেবা দিয়ে এসেছে। ১৯৫৩ সালে কানাডার তৈরি ‘ইএমডি বি-১২’ মডেলের ২০০০ শ্রেণির মিটার গেজ লোকোর মাধ্যমে বাংলাদেশে (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) ডিজেল লোকোর সূচনা হয় এবং রেলে ডিজেল ইঞ্জিনের চাহিদা ও ব্যবহার বাড়তে থাকে। তবে আধুনিকতার দাপটে ধীরে ধীরে কমতে থাকে বাষ্পীয় ইঞ্জিনের ব্যবহার। সর্বশেষ বাংলাদেশে স্টিম লোকোমোটিভ পরিচালিত হয় ১৯৮৪ সালে।

চাঁই বেচে জীবিকা

চিলাহাটি ওয়েব ডটকম : Friday, September 29, 2023 | 9/29/2023 05:30:00 PM

চিলাহাটি ওয়েব ডেস্ক : দেশী প্রজাতির ছোট মাছ ধরার উপকরণ বাঁশের তৈরি চাঁই (মাছ ধরার ফাঁদ) কেনার ধুম পড়েছে। বৃষ্টির পানিতে এখন টই-টুম্বুর ফসলের জমি থেকে শুরু করে খাল-বিল ও নদী । এতে দেশি প্রজাতির ছোটজাতের মাছের পরিমাণ বেড়ে গেছে। তাই বিভিন্ন উপায়ে মাছ ধরতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
জানা যায়, জেলার বিভিন্ন হাটবাজারগুলোতে শত শত চাঁই বিক্রি হচ্ছে। এখানকার তৈরি চাঁই স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে সরবরাহ করা হচ্ছে পার্শ্ববর্তী জেলাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়। গুণগত মান ভালো হওয়ায় আশানুরূপ দাম পাচ্ছেন চাঁইশিল্পের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা। নিম্নআয়ের অনেক পরিবার বাড়তি আয়ের উৎস হিসেবে চাঁই তৈরিকে বেছে নিয়েছেন। বাঁশ ও সুতা দিয়ে তৈরি এসব চাঁই ভালো মানের হওয়ায় দেশের বিভিন্ন এলাকার মাছশিকারিরা হাটবাজার থেকে তা কিনে নিয়ে যান।
বর্ষা মৌসুমে চাহিদা বেশি হওয়ায় চাঁই তৈরির সঙ্গে জড়িত পরিবারগুলো দুই-তিন মাসেই প্রায় সারা বছরের আয় করে নেন। চাঁই তৈরির কারিগররা জানান, চাঁই তৈরিতে প্রকারভেদে খরচ পড়ে ৮০ থেকে ২০০ টাকা। বিক্রি হয় ২০০ থেকে ৫০০ টাকায়। আকারে বড় চাঁই তৈরিতে খরচ অনুযায়ী বিক্রির মূল্য নিধারণ করা হয়। চাঁই বিভিন্ন এলাকায় ধন্দি, বানা, খাদন, খালই, বিত্তি, বুড়ং ও ভাইর নামে পরিচিত। ছোট প্রজাতির মাছ ধরার সুতি, কারেন্ট জালসহ বিভিন্ন উপকরণের দাপটের কারণে বাঁশের তৈরি চাঁই বাজারে বেশ প্রতিযোগিতার মুখে পড়েছে।

পথচারিদের ডাকছে কারমাইকেলের কাঠগোলাপ

চিলাহাটি ওয়েব ডটকম : Thursday, September 28, 2023 | 9/28/2023 06:07:00 PM

চিলাহাটি ওয়েব ডেস্ক : হে পথিক একটু দাড়াঁও না, তোমার জন্যই না আমি সুভাস্বনী হয়ে রয়েছি। প্রাচ্যের অক্সফোর্টখ্যাত কারমাইকেল কলেজসহ রংপুরের বিভিন্ন স্থানে প্রকৃতি প্রেমীদের এভাবেই মুগ্ধ করছে বাহারী কাঠগোলাপ ফুল। ফুলটি বছরের প্রায় সবসময়ই ফোটে। তবে গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ ও হেমন্তকালে গাছ ফুলে ফুলে ছেয়ে যায়।
এ ফুল নানা রঙের হয়। কোনোটি দেখতে ধবধবে সাদা, কোনোটি সাদা পাপড়ির ওপর হলুদ দাগ, আবার কোনোটি লালচে গোলাপি রঙের। দূরে বা কাছ থেকে এসব বাহারি কাঠ গোলাপ সহজেই নজর কাড়ে প্রকৃতিপ্রেমীদের। কাঠগোলাপের সৌন্দর্য্যে বিমোহিত হয়ে ফটোসেশন করতেও দেখা যায় অনেক পথিককে।
বিমোহিত প্রকৃতিপ্রেমী অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে নয়নাভিরাম কাঠগোলাপে। একটু নিজেকে সতেজ করার জন্যই প্রকৃতির এমন চিরচেনা রুপ। কারমাইকেল কলেজ প্রাঙ্গণে দূর থেকেই চোখে পড়ে অসংখ্য কাঠগোলাপ পড়ে আছে সবুজ ঘাসের বুকে। শ্বেত শুভ্র ফুলগুলো দেখে আকৃষ্ট হচ্ছেন তরুণ-তরুণীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষজন।
শুধু কারমাইকেল কলেজেই নয় রংপুর শহরে বিভিন্ন সড়কের পাশে, বাগানে ও নার্সারিতেও স্নিগ্ধতা ছড়াচ্ছে সুগন্ধিমাখা শুভ্র কাঠগোলাপ। অনেক অভিভাবক শিশুদেরকে ফুল চেনাচ্ছেন এবং ফুল দিয়ে সাজিয়ে ছবি তুলে তুলছেন। প্রকৃতিপ্রেমীরা যে কাঠগোলাপে বিমোহিত তা বলার আর অপেক্ষা রাখে না।
শিশুকে ফুল দেখতে নিয়ে আসা এক অভিভাবক বলেন, শিশুদের মেধা বিকাশে প্রকৃতির সৌন্দর্যের সঙ্গে পরিচয় হওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বইয়ে কিংবা মোবাইলে হয়তো চিনিয়ে দেওয়া সম্ভব কিন্তু কাছ থেকে দেখার আনন্দই আলাদা। এ জন্য প্রায় সময়ই ঘুরতে আসি কারমাইকেল কলেজ প্রাঙ্গণে। নিজেও মুগ্ধ হই চমৎকার প্রকৃতিতে নিঃশ্বাস নিতে পেরে, আমার সন্তানও খুশি হয়।

মাটির নিচে সমৃদ্ধ ইতিহাস

চিলাহাটি ওয়েব ডটকম : Wednesday, September 27, 2023 | 9/27/2023 10:45:00 AM

চিলাহাটি ওয়েব, ঢাকা অফিস : ১৮০৮ সালে চিহ্নিত করেন ফ্রান্সিস বুকানন হ্যামিলটন বাংলার অন্যতম প্রাচীন জনপদ মহাস্থানগড় বা পুন্ড্রনগর। এটি পুণ্ড্রবর্ধন নামেও পরিচিত। তৎকালীন বাংলার রাজধানী ছিল পুন্ড্রনগর। প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে এই জনপদ গড়ে ওঠে। বগুড়া শহর থেকে প্রায় ১৩ কিলোমিটার উত্তরে করতোয়া নদীর তীরে মহাস্থান গড় অবস্থিত। শিবগঞ্জ উপজেলার মধ্যে এই গড়। ২০১৬ সালে মহাস্থানগড়কে সার্কের সাংস্কৃতিক রাজধানী হিসেবে ঘোষণা করে 

ইতিহাস : চীনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাঙ্গ ৬৩৯ থেকে ৬৪৫ সালের মধ্যে ভ্রমণ শেষে ধারাবাণীতে বলেন এটি মূলত বৌদ্ধ ধর্মের পীঠস্থান ছিল। চীন তীব্বত থেকে ভিক্ষুকরা আসতেন মহাস্থানে লেখাপড়া করতে। সেন বংশের শেষ রাজা লক্ষ্মণ সেন (১০৮২-১১২৫) গৌড়ের রাজা থাকাকালে এই গড় অরক্ষিত ছিল। তখনকার পুন্ড্রনগরের রাজা ছিলেন নল। আর তার বিরোধ চলত আপন ভাই নীলের সাথে। এসময় ভারতের শ্রীক্ষেত্র থেকে অভিশপ্ত ব্রাহ্মণ আসেন। যিনি পশুরাম হিসেবে পরিচিত পরবর্তীতে রাজা বনে যান পুণ্ড্রনগরের সময় ইসলাম ধর্ম প্রচার করতে বাংলায় আসেন হযরত শাহ সুলতান মাহমুদ বলখী() তার সাথীরা। কথিত আছে তিনি করতোয়া নদী পার হয়েছিল বিশাল মাছ আকৃতির নৌকার পীঠে চড়ে। মহাস্থানগড় পৌঁছে ধর্ম প্রচার করতে থাকলে রাজা পশুরামের সাথে বিরোধ দেখা দেয়

রাজা হওয়ার পর থেকেই পশুরাম জনগণের কাছে অত্যাচারী শাসক হয়ে যায়। জনগণ অতিষ্ঠ হয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে থাকলে শাহ সুলতানের (.) সাথে যুদ্ধ বেঁধে যায়। যুদ্ধে রাজা পশুরাম জিয়ৎ কুণ্ড কূপের পানির বিশেষ সাহায্য নেয়। তার আহত সৈন্যদের সেই কূপের পানি পান করে আহত সৈন্য সুস্থ হয়ে যায়। তাই হযরত শাহ সুলতান মাহমুদ বলখী (.) একটি ঈগল পাখির মাধ্যমে এক টুকরো মাংস ওই কূপে ফেলে দেন। এতেই কূপের পানি আশ্চর্য গুণ হারিয়ে ফেলে। শেষমেষ পরশুরাম পরাজয় বরণ করে

মহাস্থানগড়ে শাহ সুলতান মাহমুদের (.) মাজার শরীফ রয়েছে তার সামনেই বিখ্যাত কটকটির দোকান রয়েছে এখানকার একটি জনপ্রিয় খাবার হিসেবে বেশ পরিচিত

গড়ের আবিস্কার

১৮০৮ সালে ফ্রান্সিস বুকানন হ্যামিলটন প্রথম এই গড় চিহ্নিত করেন। পরে ১৮৭৯ সালে আলেক্সান্ডার এই ঐতিহাসিক নগরীকে পুণ্ড্রনগরের রাজধানী হিসেবে উল্লেখ করেন। ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে প্রত্নতাত্ত্বিক খননে ব্রাহ্মী লিপির সন্ধান মেলে। সেই লিপির লেখার মাধ্যমে  প্রাদেশিক সরকার সম্রাট অশোক দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষকে রাজভান্ডার থেকে খাদ্য টাকার সাহায্য দিতে নির্দেশ দেন

দর্শনীয় স্থানের বিবরণ জেনে নেওয়া যাক-

ভাসু বিহার: এটি মূলত বৌদ্ধ ধর্মপীঠ ছিল। এটি স্থানীয়ভাবে নরপতি ধাপ নামেও পরিচিত। এখানে বৌদ্ধদের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে

গোবিন্দ ভিটা : এটার অর্থ হলো দেবতা বিষ্ণুর আবাসস্থল। এখানে মন্দির থাকলেও বৈষ্ণব ধর্মের কোনো নির্দশন পাওয়া যায়নি

শীলাদেবীর ঘাট : এটি করতোয়া নদীর তীরে অবস্থিত। রাজা পশুরামের বোন ছিল শীলাদেবী। যখন শাহ সুলতান মাহমুদ বলখীর (.) কাছে তার ভাই পরাজিত হয় তখন তিনি সেই ঘাটে আত্মহত্যা করেন

ভীমের জাঙ্গাল : এটি মূলত লম্বা বাঁধ বা পিলার। যা শত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে তৈরি করা হয়েছিল। আবার কেউ কেউ বলেন বন্যা থেকে বাঁচতে এই বাঁধ। এটি প্রায় ৭০ কিলোমিটার জুড়ে বৃস্তিত

বেহুলা লখিন্দরের বাসর ঘর: স্থানীয়দের কাছে এটা গোকুল মেধ হিসেবেও পরিচিত। চাঁদ সওদাগর তার ছেলে লখিন্দরকে দেবী মনষার হাত থেকে বাঁচানোর জন্য গোপন একটি ঘর তৈরি করেন। বেহুলা লখিন্দরের বিয়ের রাতে সেই ঘরে কঠোর নিরাপত্তা থাকা অবস্থায় মনষার পাঠানো সাপ দংশন করেন

খোদার পাথর ভিটা : জানা যায় রাজা পশুরাম এই পাথরকে বলি দেওয়ার কাজে ব্যবহার করতো এটা দেখতে লম্বা আয়তাকার মসৃণ

এছাড়ও অনেক দর্শনীয় স্থান রয়েছে মানকালীর টিবি, বৈরাগীর ভিটা, বিহার ধাপ, কালিদহ, জিয়ত কুণ্ড কূপ ইত্যাদি

খনন পুনরুদ্ধার

১৯২৮-২৯ সালে আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অভ ইন্ডিয়ার তৎকালীন মহাপরিচালক কাশীনাথ নারায়ন দীক্ষিতের তত্ত্বাবধানে প্রথম খননকাজ শুরু হয়। আর যেসব ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায় তা সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে মহাস্থান প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘরে। ১৯৬৭ সালে জাদুঘর প্রতিষ্ঠিত হয়। যাবৎ খনন কাজে পাওয়া যায় বৌদ্ধ ধর্মের দেব দেবতাদের মূর্তি, বিভিন্ন যুগের মুদ্রা, স্মারক লিপি, মাটির তৈজসপত্র, পোড়ামাটির ফলক, সিলমোহর, শিলালিপি, আত্নরক্ষার অস্ত্র, মূল্যবান অলংকার সামগ্রী সোনা, রুপা, লোহা, কাঁসা, তামাসহ বিভিন্ন ধাতব সামগ্রী। বর্তমানে মহাস্থান গড় প্রত্নতাত্ত্বিকের খনন কাজ চলমান রয়েছে। মহাস্থানগড় প্রাচীন নগরী হলেও এখন প্রায় জনমুখী হয়ে উঠেছে। পর্যটন শিল্প হিসেবে প্রতিদিন দেশ বিদেশের মানুষ এসে ভিড় করে ইতিহাসের বাস্তব চিত্র দেখতে

যোগাযোগ

রাজধানী ঢাকা থেকে আসতে গেলে ট্রেন বাসে আসতে হবে। ঢাকা কল্যানপুর গাবতলি বাসস্ট্যান্ড থেকে গাড়ি সরাসরি বগুড়ার মেইন শহর সাথমাথায় আসা যায়। সেখান থেকে বাস, সিএনজি করে ১৩ কিলোমিটার দূরে এই মহাস্থানগড়। ট্রেনে আসতে গেলে কমলাপুর রেলস্টেশনে উঠে সরাসরি সান্তাহার জংশনে পৌঁছে, সেখান থেকে বগুড়ার ট্রেনে উঠতে হবে। এখন হেলিকপ্টারেও আসা যায় বগুড়াতে। ঢাকা থেকে মমইন হোটেলে হেলিকপ্টার এসে পৌঁছে