মিজানুর রহমান,কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি,চিলাহাটি ওয়েব : স্মরণাতীত কাল থেকে বাংলাদেশের প্রকৃতি,জলবায়ু,ইতিহাস-ঐতিহ্য, শিল্প-সাহিত্য, সংস্কৃতি ও খাদ্যাভ্যাসে ভোজন রসিক বাঙালির পাতে মাছ ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিল। নদী-নালা, খাল-বিল, পুকুর-ডোবার পানিতে থই থই করত মাছ। কিন্তু কালের যাত্রায় অপরিকল্পিত নগরায়ন,অধিক জনসংখ্যা,উচ্চ ফলনশীল ধান উৎপাদনে কীটনাশকের ব্যবহার ও অভ্যন্তরীণ উন্মুক্ত জলাশয় শুকিয়ে যাওয়ায় মরতে বসে ছিল দেশীয় প্রজাতির মাছ। মাছ চাষে গড়বো দেশ বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ এই বাস্তবতার নিরিখে নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলা খাদ্যশস্যের সবুজ বিপ্লবের পর দেশীয় মাছের নীল বিপ্লব ঘটাতে চলছে।
মাছে-ভাতে বাঙালি এই প্রবাদ বাক্যটির বিলুপ্তির আঁধার কাটিয়ে মৎস্য কার্যক্রম বান্ধব সরকারের যুগান্তকারী পদক্ষেপে আবারো নতুন আঙ্গিকে দেশীয় মাছের সুদিন ফিরছে কিশোরগঞ্জ উপজেলায়।
কিশোরগঞ্জ উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ২০১৯-২০ আর্থিক সালে রংপুর বিভাগে মৎস্য উন্নয়ন (২য় সংশোধিত)প্রকল্পের আওতায় ২৮ লাখ টাকা ব্যয়ে বাহাগিলীতে ২টি বিল পূনঃখনন করায় বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা পাবে অনেক দেশীয় প্রজাতির মাছ।উপজেলা মৎস্য বিভাগের উদ্যোগে দেশীয় মাছের প্রজননের আবাসস্থল গড়ে তোলার পর স্থানীয় মৎস্যজীবী সমিতি তা রক্ষণাবেক্ষণ করছেন।একেকটি সমিতিতে ২২-২৭ জন সুফলভোগি সদস্য রয়েছেন। সম্প্রতি সময়ে সরেজমিনে উপজেলার বাহাগিলী ইউনিয়নের বাহাগিলী বিল পাড়া গ্রামে দেশীয় মাছ প্রজননের আবাসস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, চোখ জুড়ানো দিগন্ত ভরা মাঠ ঘেঁষে সুবিশাল পাড় বেষ্টিত নীল বিপ্লবের হাতছানির ডাক দিয়ে গড়ে উঠেছে ২টি দেশীয় মাছের প্রজননের আবাসস্থল। সেখানে চাষাবাদ করা হচ্ছে বিলুপ্তপ্রায় দেশীয় জাতের হরেক রকমের মাছ।
মৎস্য সমবায় সমিতির সভাপতি ও সুফলভোগী শ্রী মৃণাল কান্তি দাসের সাথে কথা হলে তিনি জানান,পূর্বে শুষ্ক মৌসুমে বিল ২টি শুকিয়ে গিয়ে মরা খালে পরিণত হত। ফলে দেশীয় প্রজাতির মাছের জন্য অত্র এলাকায় কোন আশ্রয় স্থল থাকত না। মাছের আশ্রয় স্থল না থাকার কারণে বিভিন্ন দেশীয় মাছ পাওয়া যেত না। কিছু প্রজাতি মাছ স্থায়ীভাবে বিলুপ্ত প্রায় হয়ে গেছে। এই বিল ২টি পূনঃখননের ফলে এর গভীরতা ৬/৭ ফিট হওয়ায় পানি বৃদ্ধিপেয়েছে। ফলে এখানে মাছ আশ্রয় নিতে পারবে এবং প্রজননের ফলে দেশীয় মাছের বিস্তার ঘটবে। বর্ষাকালে দেশীয় মাছ গুলো আশেপাশের ধানক্ষেতে, নদী,প্লাবনভূমিতে ছড়িয়ে পড়বে।এতে জেলেপল্লী লোকদের জীবন-জীবিকার আয়ের পথ সুগম হবে।বাহাগিলী ইউপি চেয়ারম্যান আতাউর রহমান শাহ্ দুলু জানান, বিল ২টি পুনঃখননও মেরামত করায় বিলুপ্তপ্রায় এবং বিপন্ন দুর্লভ প্রজাতির মাছের পুনরাবির্ভাবে দেশীয় মাছের আধিক্য বৃদ্ধি পাবে।
এতে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক মৎস্যচাষীদের আয় বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে অতিরিক্ত কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে পাশাপাশি জনসাধারণের প্রাণীজ আমিষের চাহিদা পূরণ হবে। এ ব্যাপারে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আবুল কাশেম জানান, বিল ২টি পুনঃখননে দেশীয় মাছের প্রজননের আবাসস্থল গড়ে ওঠায় বিভিন্ন ছড়া ও বিলে দেশীয় প্রজাতির মাছের বংশ বিস্তারের মাধ্যমে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। তিনি আরও জানান ৬ লাখ টাকা ব্যয়ে উপজেলা পরিষদ চত্বরে পুকুর পুনঃখনন করায় পুকুরটি সৌন্দর্য বৃদ্ধি হয়েছে এবং মাছের উৎপাদন কয়েকগুণ বৃদ্ধি পাবে।